সম্প্রতি বাংলাদেশে ‘মব আতঙ্ক’ বা জনতার রোষানলে কাউকে আক্রমণ বা হত্যার ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। এই মব আতঙ্কে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুও অস্থির বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি।
তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির যারা ঘনিষ্ঠজন তাদের কারো কারো সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তাতে আমার যেটা মনে হয়েছে, এই মুহূর্তে বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে অসহায় ভীত-সন্ত্রস্ত এবং সবচাইতে আতঙ্কিত মানুষটির নাম হলো সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। রাষ্ট্রযন্ত্রে যত মানুষ রয়েছে, তার মধ্যে এই মুহূর্তে রাষ্ট্রপতি সবচেয়ে কর্মহীন একজন মানুষ যাকে রাষ্ট্রের কোনো কর্মে নিয়োজিত করা হচ্ছে না। অথচ রাষ্ট্র তার পেছনে সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করছে।’
‘তবে এতকিছুর পরও তিনি কি স্বাধীন। তিনি কি ইচ্ছা করলেই এখন আব্দুল হামিদের মতো বা সাবেক রাষ্ট্রপতিদের মতো সিঙ্গাপুরে শরীর পরীক্ষা করার জন্য যেতে পারেন? অবস্থাদৃষ্টে তা মনে হচ্ছে না। তবে বাংলাদেশের সবচাইতে প্রাইড অ্যান্ড প্রেস্টিজিয়াস যে ভবন, সেখানে যে বসবাস করছে তার এই অবস্থা চলছে। এছাড়া রাষ্ট্রের এই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভবনটি রক্ষা করার জন্য আমাদের সেনাবাহিনীর সবচেয়ে চৌকশ দলটি সেখানে নিয়োজিত রয়েছে।’
‘প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় পাহারা দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর সিকিউরিটি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এসএসএফ রয়েছে। কিন্তু স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের কাছে যে ধরনের অত্যাধুনিক অস্ত্র রয়েছে, বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে, এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম রয়েছে, তার চাইতেও শক্তিশালী আর্মস রয়েছে প্রেসিডেনশিয়াল গার্ড রেজিমেন্টের কাছে। এর কারণ হলো, যখন বিদেশী কোনো মেহমান আসে, তখন এই পিজিআর দিয়ে তাদেরকে গার্ড অব ওনার প্রদর্শন করা হয়। আর এই বাহিনীর প্রধান যিনি, তিনি হচ্ছেন মিলিটারি সেক্রেটারি। তিনি একজন লেফটেনেন্ট জেনারেল পদমর্যাদার কর্মকর্তা এবং তার অধীনে একটা ফুল রেজিমেন্ট রয়েছে। তারা কেবলমাত্র রাষ্ট্রপতির হুকুমে চলবেন, রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তা বিধান করবেন।’
‘আমি যতটুকু জানি, সেখানে সেনাপ্রধান বা এসএসএফ প্রধান এমনকি অন্য কোনো বাহিনীর প্রধান পিজিআরপ্রধানকে কোনো নির্দেশ দিতে পারেন না এবং তিনি যেকোনো কাজ যেকোনো সময় করার জন্য ক্ষমতা রাখেন।
পিজিআরপ্রধান যদি ট্যাংক চালিয়ে, কামান চালিয়ে বঙ্গভবন রক্ষা করতে গিয়ে যে কোনো অনাসৃষ্টি করেন, তাকে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী কারো কাছে জবাবদিহি করতে হবে না। তো এরকম একটি শক্তিশালী বাহিনী বঙ্গভবন পাহারা দেওয়ার পরেও সেখানে মব আতঙ্ক বিরাজ করছে।’
‘বঙ্গভবন আক্রমণ করা হবে, বঙ্গভবন ভেঙে ফেলা হবে, বঙ্গভবনে এত তারিখে যাওয়া হবে; এরকম একটা স্লোগান তোলা হচ্ছে। গত ১০ মাসে মবের যে ভয়ঙ্কর রূপ বাংলাদেশ দেখেছে, তাতে এটা আসলেই ভালো বার্তা নয়। এরকম একটা হ-জ-ব-র-ল অবস্থার মধ্যে বঙ্গভবনে ঢুকে বা বঙ্গভবনের বাইরে এই মব সন্ত্রাস যদি কেউ চালাতে চায় আর তার ভয়ে যদি কেউ তটস্থ থাকে, এটা কোনো অবস্থাতেই শোভনীয় নয়। যারা এখন ক্ষমতায় আছেন, তাদের এই বিষয়টি সুরাহা করা উচিত।’
আরআর/টিএ