গরুর মাংসের গুণ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি

কোরবানির ঈদে কম বেশি সবাই গরুর মাংস খেয়ে থাকেন। এতে যেমন অনেক পুষ্টি পাওয়া যায় তেমনি অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকিও দেখা দেয়। আর সেই কারণে খাবারের পুষ্টিমূল্য তার সঠিক রান্নার কৌশল, সংরক্ষণ ও স্বাস্থ্যের জন্য এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

প্রথমে জানা যাক গরুর মাংসের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে

প্রোটিন: গরুর মাংস থেকে উচ্চমাত্রায় প্রোটিন পাওয়া যায়। মাংস ছাড়াও হাড়, কলিজা, মগজ ইত্যাদি থেকেও প্রোটিন চলে আসে। গরুর মাংসের প্রোটিন থেকে যে অ্যামাইনো এসিড পাওয়া যায়, তা হাড় ও মাংসপেশির কাজে অনেক সাহায্য করে থাকে। ১০০ গ্রাম গরুর মাংসে ২২.৬ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়।

ফ্যাট : গরুর মাংসে অনেক সম্পৃক্ত চর্বি থাকে। ফ্যাটের উপস্থিতির জন্য গরুর মাংস অনেক মজাদার হয়ে থাকে। কচি মাংসে এই ফ্যাটের পরিমাণ কম থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম গরুর মাংসে ফ্যাট রয়েছে ২.৬ গ্রাম।

খনিজ পদার্থ : এক টুকরো গরুর মাংসে অনেক ধরনের খনিজ পদার্থ পাওয়া যায়। বিশেষ করে জিংক, আয়রন, সেলেনিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেশিয়াম, সোডিয়াম, পটাশিয়াম ও কপার। এই মিনারেলগুলো শরীরের অনেক প্রয়োজনীয় কাজ করে থাকে। জিংক আমাদের শরীরের কোষ রক্ষণাবেক্ষণ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে থাকে। বলা হয় তিন আউন্স পরিমাণ গরুর মাংস দৈনিক জিংকের ৩৯ শতাংশ চাহিদা পূরণ করে থাকে।

ভিটামিন : গরুর মাংসে অনেক রকম ভিটামিন থাকে, বিশেষ করে বি১২, বি৬, রিবোফ্ল্যাবিন ও বি১২-এর প্রয়োজনীয়তা অনেক, মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায়ও এর প্রয়োজনীয়তা অনেক।

হার্ভার্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথের মতে, আমাদের দেহে দৈনিক ২.৪ মিলিগ্রাম বি১২ প্রয়োজন হয়। তিন আউন্স গরুর মাংস বি১২-এর দৈনিক ৩৭ শতাংশ চাহিদা পূরণ করতে পারে। তিন আউন্স গরুর মাংস ফসফরাস, ভিটামিন বি১২, প্রোটিন, জিংক ও সেলেনিয়ামের খুবই ভালো উৎস। তিন আউন্স কচি গরুর মাংসে আয়রন, নায়াসিন, বি৬ ও রিবোফ্ল্যাভিন পাওয়া যায়।

[উৎস : ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব অ্যাগ্রিকালচার রিসার্চ সার্ভিস ২০০২]  

কী পরিমাণ খাওয়া উচিত?

দৈনিক গরুর মাংস খাওয়ার নিরাপদ মাত্রা হলো, ৩ আউন্স বা ৮৫ গ্রাম। আপনি যদি ৩ আউন্স বা ৮৫ গ্রাম চর্বি ছাড়া গরুর মাংস খান তাহলে এটা থেকে আপনার দৈনিক ক্যালরির চাহিদার মাত্র ১০ শতাংশ পূরণ করবে। (৩ আউন্স মাংসে আছে ২০০ ক্যালরি এবং দৈনিক ক্যালরির চাহিদা ২০০০ ক্যালরি ধরে)। সাধারণত ঘরে রান্না করা ৩ টুকরা মাংসেই ৩ আউন্স হয়ে যায়, আর যেহেতু খাবার সময় সাধারণত ৩ টুকরার বেশিই খাওয়া হয়, এজন্য সবচেয়ে ভালো হলো সপ্তাহে দুই দিনের বেশি গরুর মাংস না খাওয়া।

 গরুর মাংসে কোলেস্টেরল এর মাত্রা

৩ আউন্স মাংসে কোলেস্টেরল এর মাত্রা ৫৩ মিলিগ্রাম। একজন সুস্থ মানুষের কোলেস্টেরল এর দৈনিক নিরাপদ মাত্রা হলো ৩০০ মি.গ্রা. এবং হার্টের রোগীর জন্য ২০০ মি.গ্রা.। সুতরাং ৩ আউন্স গরুর মাংসে কোলেস্টেরল এর মাত্রা নিরাপদ সীমার অনেক নিচে।

গরু, মহিষ, ছাগল ও খাসির মাংসে থাকে উচ্চমাত্রার প্রোটিন ও ফ্যাট। তাই অতিরিক্ত পরিমাণে গরুর মাংস খেলে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও কোলেস্টরেলের মাত্রা বেড়ে যায়, বিশেষ করে যারা আগে থেকেই এসব রোগে ভুগছেন তাদের জন্য ঝুঁকি আরও বেশি। আর তাই মাংস খাওয়ার সময় অবশ্যই চর্বি ছাড়া এবং পরিমাণ মতো খাওয়া উচিত।

 

টাইমস/এএইচ/এসআই

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ভারতকে ঘিরে ফেলতে চীনকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে বাংলাদেশ: কংগ্রেস Apr 02, 2025
img
সৎ বাবার চাপে রাস্তায় ভিক্ষে করে কেটেছে শৈশব Apr 02, 2025
img
শিশুর পেটে গুলি ঢুকে পিঠ দিয়ে বেরিয়ে গেল Apr 02, 2025
img
বিচ্ছেদ গুঞ্জন অতীত! Apr 02, 2025
img
যারা গুপ্ত রাজনীতি করে তাদের প্রতি শুভকামনা নেই: ছাত্রদল সভাপতি Apr 02, 2025
img
তথ্য উপদেষ্টার বাবার ওপর হামলায় এ্যানির দুঃখ প্রকাশ Apr 02, 2025
img
নতুন রাজনৈতিক দলটির নেতৃবৃন্দদের চাপে প্রধান উপদেষ্টা জুনের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলছেন: নাছির Apr 02, 2025
img
নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খুঁটিতে বাসের ধাক্কা, নিহত ৩ Apr 02, 2025
img
হাঁটা-চলার জায়গাও ছিল না চিড়িয়াখানায়, দর্শনার্থী প্রায় দুই লাখ Apr 02, 2025
img
সিলেটে মধ্যরাতে বিএনপি-যুবদল সংঘর্ষ Apr 02, 2025