আকুর ২ বিলিয়ন ডলার পরিশোধে রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ২৯.৫৩ বিলিয়ন

এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মে ও জুন মাসের আমদানি বিল পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়ায় আমদানি দায় মেটানোর পরও দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গ্রহণযোগ্য অবস্থানে রয়েছে, এমনটাই বলছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

মঙ্গলবার (৮ জুলাই) ২ বিলিয়ন (২০১৯ মিলিয়ন) ডলারের সমপরিমাণ অর্থ আকুকে পরিশোধ করার পর দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ২৯ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, মূলত মে-জুন মাসে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমদানি লেনদেন বাবদ গৃহীত পণ্যের অর্থ পরিশোধে এই বিল দেওয়া হয়। আকুর সদস্য দেশগুলোর মধ্যে লেনদেনের জন্য দুই মাস পরপর এ ধরনের বিল পরিশোধ করতে হয়।

গত মাস শেষে রিজার্ভ ছিল ৩১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল। আকুর ২ বিলিয়ন ডলার পরিশোধের পর তা ২৯ বিলিয়নে নেমে এলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ ও রপ্তানি আয় বাড়ায় রিজার্ভ স্থিতিশীল রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, আজ আকুর বিল হিসেবে ২০১৯ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। তবুও রিজার্ভে বড় ধরনের চাপ পড়েনি। এখন বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় গ্রহণযোগ্য ও স্থিতিশীল। এর পেছনে মূল ভূমিকা রাখছে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স ও রপ্তানির ইতিবাচক ধারা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশের ইতিহাসে ২০২২ সালের আগস্টে রিজার্ভ উঠেছিল সর্বোচ্চ ৪৮ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলারে। এর পর আওয়ামী সরকারের সহায়তায় কয়েকটি ব্যক্তি ও গোষ্ঠি ব্যাপকভাবে অর্থ পাচার করতে থাকে। যার কারণে রিজার্ভে বড় ধরনের সংকট তৈরি হয়। প্রতি মাসে রিজার্ভ কমতে–কমতে সরকার পতনের আগে গতবছর জুলাই শেষে তা ২০ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলারে নেমেছিল।

তবে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর আর রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি না করে অর্থ পাচার রোধে কঠোর হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিগত সরকারের রেখে যাওয়া প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলারের মেয়াদোত্তীর্ণ বকেয়া পরিশোধ করার পরও গ্রহণযোগ্য অবস্থায় রয়েছে রিজার্ভ।

সবশেষ চলতি মাসের ৭ জুলাই শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে মোট রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৯৫৩ কোটি ডলার বা ২৯ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলার আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বিপিএম-৬ পদ্ধতি অনুযায়ী রিজার্ভ ২ হাজার ৪৪৬ কোটি বা ২৪ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার।

এর বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের আরেকটি হিসাব রয়েছে, যা সবসময়, প্রকাশ করা হয় না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৯ জুন বাংলাদেশ ব্যাংকের নিট ইন্টারন্যাশনাল রিজার্ভ (এনআইআর) বা ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ ছিল দুই হাজার ৩ কোটি মার্কিন ডলার (২০ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার)। আকুর বিলের দুই বিলিয়ন ডলার বাদ দিলে এখন নিট রিজার্ভ ১৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি আছে।

প্রতি মাসে সাড়ে ৫ বিলিয়ন ডলার করে এ রিজার্ভ দিয়ে প্রায় সাড়ে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। সাধারণত একটি দেশের ন্যূনতম ৩ মাসের আমদানি খরচের সমান রিজার্ভ থাকতে হয়। সেই মানদণ্ডে বাংলাদেশ এখন ভালো অবস্থানে রয়েছে। একটি দেশের অর্থনীতির অন্যতম সূচক হলো বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ।

আকু হলো- একটি আন্তঃদেশীয় লেনদেন নিষ্পত্তি ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার লেনদেনের দায় পরিশোধ করা হয়। ইরানের রাজধানী তেহরানে আকুর সদর দপ্তর। এ ব্যবস্থায় সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি দুই মাস অন্তর আমদানির অর্থ পরিশোধ করে। তবে এখন আকুর সদস্য পদ নেই শ্রীলঙ্কার। অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে দীর্ঘদিন যাবত আমদানি ব্যয় পরিশোধের বিভিন্ন শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় দেশটির আকু সদস্য পদ সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে।

জাতিসংঘের এশিয়া অঞ্চলের অর্থনীতি ও সামাজিক কমিশনের (এসক্যাপ) ভৌগোলিক সীমারেখায় অবস্থিত সব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর জন্য আকুর সদস্য পদ উন্মুক্ত।

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনসহ ও নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যেও দেশের পণ্য রপ্তানি ইতিবাচক ধারায় আছে।

বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, সদ্য সমাপ্ত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশের রপ্তানি আয় ৮.৫৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এ সময়ে মোট রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৪৮.২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রপ্তানি আয় ছিল ৪৪.৪৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

অর্থপাচার রোধে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এর ফলে হুন্ডিসহ বিভিন্ন অবৈধ চ্যানেলে টাকা পাঠানো কমে গেছে এবং বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে বলছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর আগে বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো অর্থবছরে এতো পরিমাণ প্রবাসী আয় আসেনি। এদিকে সদ্য সমাপ্ত অর্থ বছরে আসা প্রবাসী আয় তার আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ২৭ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের রেমিট্যান্স এসেছিল ২৩ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

প্রবাসী আয়ের এমন ধারাবাহিক বৃদ্ধি দেশের অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ও ডলারের জোগানে স্বস্তি এনে দিয়েছে বলছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

কেএন/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img

নাহিদ ইসলাম

প্রেসিডেন্ট চুপ্পুর আদেশ হবে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের কফিনে শেষ পেরেক Nov 02, 2025
img
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন, ১ দিনে ডিএমপির ৮৬৭ মামলা Nov 02, 2025
img
নিবন্ধন ফিরে পেল জাগপা Nov 02, 2025
img
ইসির সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছে এনসিপি Nov 02, 2025
img
ট্রাম্পের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি দিনই এখন হ্যালোইন: ওবামা Nov 02, 2025
img
লেভারকুজেনকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিল বায়ার্ন মিউনিখ Nov 02, 2025
img
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ডেমোক্র্যাটদের সোচ্চার হতে আহ্বান ওবামার Nov 02, 2025
img
গোল্ডেন ভিসাধারীদের জন্য চার নতুন বিশেষ সুবিধা ঘোষণা আমিরাতের Nov 02, 2025
img
প্রেমের সম্পর্কে না জড়িয়ে বিয়ে করবো : দুরেফিশান Nov 02, 2025
img
ডিএসইতে অধিকাংশ শেয়ারে দরপতন Nov 02, 2025
img
আইন উপদেষ্টার বিরুদ্ধে একটি দলকে সুবিধা দেয়ার আশ্বাসের অভিযোগ এনসিপির Nov 02, 2025
img
বার বার ফিনিক্স পাখির মতো ঘুরে দাঁড়িয়েছে বিএনপি: মির্জা ফখরুল Nov 02, 2025
img
এভারেস্টের পাদদেশে আটকা শতাধিক পর্যটক Nov 02, 2025
মিথ্যার সঙ্গে নয়! ভাঙা সম্পর্কের পর তামান্না ভাটিয়ার স্পষ্ট বার্তা Nov 02, 2025
“মাদরাসা শিক্ষকদের ওপর হামলা কেন?” Nov 02, 2025
ফেসবুকে বিস্ফোরক মন্তব্য শিবির সভাপতির! Nov 02, 2025
img
আকাশে মানবতার দৃষ্টান্ত, বিমানে বয়স্ক যাত্রীকে নিজ হাতে খাওয়ালেন কেবিন ক্রু Nov 02, 2025
রোজপুরে বিএনপি বিশাল ব্যবধানে জয়লাভ করবে -অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেন Nov 02, 2025
'গণভোট যারা চাইছে তারা ভারতপন্থী' Nov 02, 2025
ইবতেদায়ী শিক্ষকদের আন্দোলনে সংহতি ফারুক হাসানের Nov 02, 2025