২০২৩ সালের জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে ছাত্রদের নেতৃত্বে শুরু হওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলন রূপ নেয় এক রক্তাক্ত অধ্যায়ে। বিবিসির অনুসন্ধানী ইউনিট ‘বিবিসি আই ইনভেস্টিগেশন’ সম্প্রতি দাবি করেছে, ওই দমন অভিযান ছিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশে সংঘটিত। এক ফোনালাপে তাকে বলতে শোনা যায়, “যেখানেই ওদের পাওয়া যাবে, গুলি করা হবে।”
বিবিসি জানায়, ১৮ জুলাই, ২০২৩ তারিখে রেকর্ড হওয়া ওই ফোনালাপে শেখ হাসিনা একজন শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তাকে বলছেন, “প্রয়োজনে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করতে হবে।” অডিওটি এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাসিনার বিরুদ্ধে চলমান মামলায় অন্যতম প্রধান প্রমাণ।
যাত্রাবাড়ীতে ৫ আগস্ট সংঘটিত গুলিবর্ষণের ঘটনায় অন্তত ৫২ জন আন্দোলনকারী নিহত হন বলে ভিডিও, হাসপাতাল রিপোর্ট ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে নিশ্চিত করেছে বিবিসি। ঘটনার সময় একটি মোবাইল ভিডিও ধারণ করেছিলেন আন্দোলনকারী মিরাজ হোসেন, যিনি নিজেই ওইদিন পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান। তার মোবাইলে ধরা পড়ে গুলির শুরুর সময় ও পরিস্থিতির ভয়াবহতা।
বিবিসি আরও জানায়, সেনা বাহিনীর এলাকা ত্যাগের কিছুক্ষণের মধ্যেই যাত্রাবাড়ী থানার ভেতর থেকে শুরু হয় বিক্ষোভকারীদের ওপর নির্বিচার গুলিবর্ষণ। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, আহতদের লাথি মারে পুলিশ, রাস্তায় পড়ে থাকে মৃতদেহ।
বাংলাদেশের সিআইডি ও ব্রিটিশ ফরেনসিক দল অডিওটি ‘বিশ্বাসযোগ্য ও অবিকৃত’ বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। যদিও আওয়ামী লীগ এই অডিওকে “প্রাসঙ্গিক প্রতিক্রিয়া” বলে ব্যাখ্যা করেছে।
বর্তমানে শেখ হাসিনা ভারতের আশ্রয়ে রয়েছেন বলে জানায় বিবিসি। তবে তার প্রত্যার্পণে ভারত এখনও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
এই পুরো ঘটনার প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং গণহত্যার অভিযোগ নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।
এসএন