অনেক নাটকীয়তার পর গত গ্রীষ্মের দলবদলে প্যারিসিয়ান সেইন্ট জার্মেই (পিএসজি) ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। এর আগেই ফরাসি ক্লাবটির দায়িত্ব নিয়েছিলেন স্প্যানিশ কোচ লুইস এনরিকে।
তিনি এমবাপ্পেকে ডেকে বলেছিলেন, তার কথামতো কাজ করলে ‘পিএসজিকে সত্যিকারের মেশিন’, এ পরিণত করবেন। এনরিকের সেই কাঙ্ক্ষিত মেশিন- ই যেন হয়ে উঠেছে পিএসজি। তার অধীনেই ক্লাবটি টানা দ্বিতীয় মেজর ট্রফি জয়ের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে।
মাসখানেক আগে নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবার উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জেতে পিএসজি। ৫-০ গোলের ইতিহাসগড়া ব্যবধানে জয়ের পর অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদকে ৪-০ গোলে হারিয়ে ক্লাব বিশ্বকাপেও তারা দাপট ধরে রাখে। বলা হচ্ছিল পিএসজি সত্যিকারের চ্যাম্পিয়ন কি না তা প্রমাণ হবে সেমিফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদকে হারাতে পারলে। যে ম্যাচে ফরাসি জায়ান্টদের কাছে পাত্তাই পায়নি রিয়াল। তাদের ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত করে ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠল পিএসজি।
যেন এনরিকের করা সেই ‘মেশিন’ হয়ে উঠেছে প্যারিসের ক্লাবটি। ফ্যাবিয়ান রুইজ, উসমান দেম্বেলে, খিচা কাভারৎস্খেলিয়া, আশরাফ হাকিমি ও জোয়াও নেভেসদের সমন্বয়ে গড়া দলটি যেকোনো ক্লাবের সামনেই দাপুটে পারফরম্যান্স ও মুনসিয়ানা দেখাচ্ছে। ক্লাব বিশ্বকাপ জিততে তাদের সামনে আর কেবল একটি বাধা। ক্লাবসেরা হওয়ার এই প্রতিযোগিতায় পিএসজি আগামী রোববার প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্যে একবারের শিরোপাজয়ী চেলসির মুখোমুখি হবে।
রিয়ালকে হারিয়ে মানুষের তিক্ত মন্তব্যের কথা স্মরণ করলেন লুইস এনরিকে। এমবাপ্পে ক্লাব ছেড়ে যাওয়ার পর পিএসজিতে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো আর কেউ রইলো না বলে আলোচনা উঠেছিল। সেটাই টেনে এনে কোচ এনরিকে প্রতিক্রিয়া দেখালেন এভাবে, ‘জানুয়ারিতে মানুষ বলেছিল আমাদের কোনো নেতা (তারকা) নেই এবং আমরা গোল করতে পারব না।’ অথচ এরপর থেকে এখন পর্যন্ত ১০০–র বেশি গোল করেছে প্যারিসিয়ানরা।
সাবেক ক্লাব বার্সেলোনা সমর্থকদের কাছ থেকে বার্তা পাওয়া ও বিরতিহীন খেলে যাওয়ার প্রসঙ্গে এনরিকে বলেন, ‘বার্সেলোনা ভক্তদের কাছ থেকে আসা বার্তায় আমার ইনবক্স ভর্তি হয়ে গেছে, যেখানে তারা আমরা কত বড় ম্যাচ খেলতে যাচ্ছি সেটা জানায়। যে জার্সির প্রতিনিধিত্ব করছি তার জন্য শতভাগ দিতেই হতো এবং আমরা জানি রিয়াল মাদ্রিদ কেমন।
যেমন অসাধারণ দল তারা সবসময়ই ছিল। তীব্র গরম সহ্য করেও আমরা কোনো বিরতি পাইনি, তিনদিনের মধ্যে আবার ফাইনাল খেলতে হবে। যেখানে ফুটবলারদের ক্র্যাম্প ও ক্লান্তিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি আছে। এখন বাস্তবতা হচ্ছে ফাইনালেও একইভাবে লড়াই করে যেতে হবে।’
‘পিএসজি ইতিহাস গড়া থেকে আর মাত্র একটি ম্যাচ দূরে এবং এই মৌসুমে খেলা শতভাগ ট্রফি জয়ও সেই ম্যাচের ওপর নির্ভর করছে। এটি আমাদের জন্য অনেক বড় কিছু, আমাদের ভক্ত এবং ক্লাবের স্বার্থে কাজ করা প্রতিটি ব্যক্তির জন্যও। আমরা ১০০টিরও বেশি গোল করেছি, বিপরীতে হজম করেছি গুটিকয়েক।
এই খেলোয়াড়রা অসাধারণ। তারা অদম্য এবং তাদের দলের জন্য নিজেদের সর্বোচ্চটা দেওয়ার উদারতা সেটি সম্ভব করেছে’, আরও যোগ করেন ৫৫ বছর বয়সী এই পিএসজি কোচ।
এমআর/এসএন