মব একটা ‘রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড’ : ড. জোবাইদা নাসরীন

মবকে ‘রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড’ বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জোবাইদা নাসরীন। তিনি বলেছেন, ‘মব একটা পলিটিক্যাল অ্যাকশন। এটাকে দুর্বৃত্তায়নের সুযোগ বলে এড়িয়ে যাওয়া বা কিছু মানুষের জটলা এভাবে বোঝার সুযোগ কম। আসলে এটা একটা রাজনৈতিক কৌশল’

সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টক শোতে তিনি এসব বলেন।

অধ্যাপক ড. জোবাইদা নাসরীন বলেন, ‘সাধারণত মব হলো আইনের বাইরে গিয়ে, বিচার বহির্ভূতভাবে কাউকে হেনস্তা করা বা আক্রমণ করা, কোনো উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য কাউকে ভয় দেখানো। সেখানে কতজন ছিল সেটি গুরুত্বপূর্ণ না। গুরুত্বপূর্ণ হলো এর উদ্দেশ্য, সেটি রাজনৈতিকভাবে ব্যবহৃত একটা অস্ত্র। সরকার এবং বিভিন্ন ফোরাম থেকে মবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হলেও এখনো মব থামছে না।

সরকার থেকে প্রেসার গ্রুপ বলে মবকে বৈধতা দেওয়া হচ্ছে, তার মানে সরকারকে স্বীকার করতেই হবে তারা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ এবং তাদের যে দায়িত্ব সেটি পালনে ব্যর্থ।’
তিনি আরো বলেন, সরকারের উপদেষ্টা এবং সেনাবাহিনী বলেছে কেউই মব চাচ্ছেন না। মবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, কঠোর অবস্থানে থাকবে। তাহলে মব চাচ্ছে কে? মবের পৃষ্ঠপোষকতা করছে কে? মব যেভাবে জিইয়ে আছে, এতে কেউ না কেউ চাচ্ছে, কেউ না কেউ এটাকে উসকে দিচ্ছে বা সম্মতি দিচ্ছে।

জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের লক্ষ্য সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোকে সক্রিয় করা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই আন্দোলনের লক্ষ্য ব্যক্তি ছিল না। যে প্রতিষ্ঠানগুলো একেবারে নিঃশেষ হয়ে গেছে, যারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেনি সেগুলোকে কাজ করার অবস্থায় নিয়ে যাওয়া। সাবেক সিইসি নুরুল হুদা সে সময় কাজ করতে পারেননি, তখন তিনি সরকারের আজ্ঞাবহ ছিলেন। বর্তমান সিইসি কি ঠিকমতো কাজ করতে পারছেন? আমরা দেখছি সরকার যা বলছে তিনি তাই উৎপাদন করছেন। এই সিইসি’র অবস্থাও কি পরবর্তীতে এরকম হবে? তখনও আমরা সেটাকে জনরোষ বলে বৈধতা দেব? মোটেও না।

ড. জোবাইদা নাসরীন বলেন, আমি খুব স্পষ্ট এবং দৃঢ়ভাবে বলতে চাই সহিংসতাকে কোনোভাবে বৈধ করা যাবে না। সহিংসতা বৈধকরণের কোনো কারণ খোঁজা যাবে না। ভিকটিম ব্লেমিং এর জায়গা থেকে আমরা দূরে সরতে চাই। কোনোভাবেই, কোনো রকম সহিংসতাকে আমরা বৈধ করব না। এই বিষয়ে সরকার যখন নীরব থাকেন, কোনোরকম জবাবদিহিতা না করে, তখন যারা মব করেন তারা বুঝে যান, জেনে যান, একভাবে তারা আশকারা পান, সরকারের এটাতে মৌন সম্মতি রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, সরকার অনেক সময় মবকে দিয়েই তার কাজটা হাসিল করছে। যারা মবের মাধ্যমে আন্দোলন করছে, আওয়াজ তুলছে, তখন সরকার সেটাকে বলছে, এটা ছাত্ররা চাচ্ছেন বা অমুক চাচ্ছেন। কোন জিনিস সরকার আমলে নিচ্ছে, আর কোন জিনিসটা আমলে নিচ্ছে না, এর মধ্যে চর্চিত হচ্ছে মবের রাজনীতি। সরকারকে সুস্পষ্টভাবে তাদের অবস্থান জানান দিতে হবে, জবাবদিহিতা করতে হবে কেন এখন পর্যন্ত মব ঠেকাতে পারেনি। সরকার এখন পর্যন্ত কোনো সুনির্দিষ্ট জবাবদিহিতা আমাদের সামনে হাজির করতে পারেনি।

গণ-অভ্যুত্থানে পুলিশ হত্যার দায়মুক্তি তাদের দায়িত্ব পালনে নিরুৎসাহিত করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিগত সরকার পুলিশকে বিরোধী দল ও মতকে ঠেকানোর জন্য সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেছে। সেদিক থেকে খুবই স্পষ্ট পুলিশ তার মতো করে কাজ করতে পারছে না। পুলিশের বিষয়ে যে ইনডেমনিটি (দায়মুক্তি) পুলিশ হত্যার কোনো বিচার হবে না, সে কারণে পুলিশ অনেক ডিমোটিভেট হয়েছে। পুলিশ মনে করে, সে কেন জীবন বাজি রেখে কাজ করবে? কারণ তাকে হত্যা করা হলে দেশে তার কোনো বিচার হবে না। কারণ এই সরকারের পক্ষ থেকে ইনডেমনিটি দেওয়া হয়েছে, পুলিশ হত্যার কোনো বিচার হবে না।


পিএ/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
খালেদা জিয়া সংগ্রাম, সাহস ও গণতন্ত্রের প্রতীক : কবীর আহমেদ ভূইয়া Dec 07, 2025
img
আমিরুলের আবারও হ্যাটট্রিক, দক্ষিণ কোরিয়াকে ৫-৩ গোলে হারাল বাংলাদেশ Dec 07, 2025
img
ব্যাটে ও বলে ব্যর্থ সাকিব, তবুও জিতল তার দল Dec 07, 2025
img
অধ্যাদেশ না পাওয়া পর্যন্ত ৭ কলেজ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চালানোর ঘোষণা Dec 07, 2025
img
অখিল আক্কিনেনির প্রশান্ত নীলের সঙ্গে সাক্ষাৎ, নতুন ছবির গুঞ্জন Dec 07, 2025
img
৭ ডিসেম্বর মোংলা ও সুন্দরবন হানাদার মুক্ত দিবস Dec 07, 2025
img
‘অতিরিক্ত প্রস্তুতি’ কে ইংলিশদের হারের কারণ বললেন ব্রেন্ডন ম্যাককালাম Dec 07, 2025
img
শর্তসাপেক্ষে ঢাকায় আসছে ফিফা বিশ্বকাপ ট্রফি Dec 07, 2025
img
ধেয়ে আসছে মৌসুমের প্রথম শৈত্যপ্রবাহ ‘পরশ’ Dec 07, 2025
img
যেসব খেলার মাঠ দিয়েছিলাম সব দখলে নিয়েছে আ. লীগ : মির্জা আব্বাস Dec 07, 2025
img
নেতানিয়াহুকে ক্ষমা করার জন্য ট্রাম্পের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান Dec 07, 2025
img
সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়ে ৪৮৯ পদে নিয়োগের সিদ্ধান্ত Dec 07, 2025
img
ডিএমপির ১৫ পরিদর্শককে বদলি ও পদায়ন Dec 07, 2025
img
ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য মনোনীত টাঙ্গাইল শাড়ি Dec 07, 2025
img
এবার ‘ফ্যাক্ট চেকারদের’ ভিসা প্রত্যাখ্যানের নির্দেশ ট্রাম্প প্রশাসনের Dec 07, 2025
img
ঢাকায় শিগগিরই দূতাবাস খুলছে আজারবাইজান Dec 07, 2025
img
সোনামসজিদ বন্দর দিয়ে ভারত থেকে এলো পেঁয়াজ Dec 07, 2025
img
সাত বছর পর আবার প্রেক্ষাগৃহে ফিরছে অ্যাভেঞ্জার্স Dec 07, 2025
img
এটিইউ প্রধানের সঙ্গে এফবিআই প্রতিনিধিদলের সৌজন্য সাক্ষাৎ Dec 07, 2025
img
জনগণ একাত্তরেই জামায়াতকে লাল কার্ড দেখিয়েছে : প্রিন্স Dec 07, 2025