রাজধানীর পুরান ঢাকায় লাল চাঁদ ওরফে মো. সোহাগ (৩৯) নামের এক ভাঙারি ব্যবসায়ীকে পাথর দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। বুধবার (১০ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টার দিকে মিটফোর্ড হাসপাতালের তিন নম্বর গেটসংলগ্ন রজনী ঘোষ লেনে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় যুবদল নেতা মঈনসহ দুজনকে আটক করেছে পুলিশ। নিহত সোহাগ কেরানীগঞ্জ মডেল থানার পূর্ব নামাবাড়ি গ্রামের ইউসুফ আলী হাওলাদারের ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে রজনী ঘোষ লেনে ভাঙারি ব্যবসা করতেন।
জানা যায়, ঢাকার কেরানীগঞ্জে থাকতেন সোহাগ। তিনি একসময় যুবদলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সর্বশেষ রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন কিনা, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
স্থানীয়রা বলছেন, ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আরেকটি ব্যবসায়ী চক্রের সঙ্গে তার বিরোধ চলছিল। এর জের ধরে মঙ্গলবার রাতের গুলি এবং গতকালের হত্যাকাণ্ড ঘটে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, সোহাগ হত্যায় জড়িতদের মধ্যে ছিলেন টিটু, মনির, অপু দাস, মঈন ও পলাশসহ তাদের সহযোগীরা।
তবে নিহতের বন্ধু মামুন দাবি করেছে, দুই তিন মাস ধরে মঈন প্রতি মাসে চাঁদা দাবি করত সোহাগের কাছে। সোহাগ টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে কিছুদিন আগে দোকানের সামনে এসে তাকে ‘দেখে নেয়ার হুমকি দিয়ে চলে যায়। বুধবার সন্ধ্যায় সোহাগকে একা পেয়ে মঈনসহ ৪-৫ জন মিলে পাথর দিয়ে মাথায় আঘাত করে নির্মমভাবে হত্যা করে। নির্যাতনের সময় তারা তার পরনের পোশাকও খুলে ফেলে। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। আমরা কেউ ভয়ে এগিয়ে যেতে পারিনি। কারণ মঈন যুবদলের চকবাজার থানার সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী। তার বিরুদ্ধে মিটফোর্ড হাসপাতালের ফুটপাত ও কেমিক্যাল ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা তোলার অভিযোগ রয়েছে। এমনকি হাসপাতালের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগেও মোটা অঙ্কের ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
লালবাগ থানা ছাত্রদলের সদস্য সচিব রাব্বি জানান, মঈন যুবদলের সক্রিয় কর্মী। দীর্ঘদিন ধরে চকবাজার থানায় যুবদলের কোনো কমিটি নেই। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে মঈন এ ধরনের কর্মকাণ্ড করতে পারে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে পাথর নিক্ষেপ করে প্রকাশ্যে সোহাগকে হত্যা করার ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে। ফেসবুকে অনেকেই এর নিন্দা জানিয়েছেন।
কেউ কেউ বলেছেন, এই হত্যাকাণ্ড যেন বিশ্বজিৎ এর ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাল। ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর তৎকালীন বিরোধী দলের অবরোধ চলাকালে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কের কাছে দরজি দোকানের কর্মচারী বিশ্বজিৎকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের একদল কর্মী নৃশংসভাবে কুপিয়ে-পিটিয়ে হত্যা করেন। এ ঘটনায় দেশ জুড়ে চাঞ্চল্য তৈরি হয়।
সোহাগের হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং মঈন ও জনি নামে দুজনকে আটক করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, ভাঙারি ব্যবসাকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছিল। সেই বিরোধ থেকেই এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পেরেছি।
আরআর/টিকে