‘ব্যাক বেঞ্চার্স’, স্কুল-কলেজে এহেন ট্যাগের নেপথ্যে একটা বিশেষ কারণ রয়েছে। সাধারণত পড়াশোনা কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ‘কারিক্যুলাম অ্যাক্টিভিটিসে’ পিছিয়ে থাকা পড়ুয়াদের কপালেই এহেন তকমা সাঁটা হয়। আর ‘ব্যাক বেঞ্চার্স’ শব্দটার সঙ্গেই কেমন যেন বরাবর ‘পিছিয়ে পড়া শ্রেণী’র দিকে ইঙ্গিত করা হয়। যাঁরা ক্লাসে অনর্গল বকে যায়, দুষ্টুমি করতেও নাকি এদের জুড়ি মেলা ভার! স্কুলের অধিকাংশ গুরুদের কাছে এহেন শিষ্যরা সবথেকে বেশি অবাধ্য! এহেন নানা ধারণা প্রচলিত। তবে একথা অস্বীকার করা যায় না যে, পিছনের বেঞ্চে বসা শিক্ষার্থীরা তুলনামূলকভাবে শিক্ষকদের কাছে প্রথম বেঞ্চে বসা পড়ুয়াদের থেকে কম মনোযোগ পায়। আর এই ‘ব্যাক বেঞ্চার্স’ ট্যাগ নিয়ে অনেকেরই অনেক আপত্তি! তবে এক মালয়ালম সিনেমা দেখে এবার কেরলের ক্লাসরুমে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এল। কীরকম?
জানা গেল, সংশ্লিষ্ট রাজ্যের ক্লাসরুমগুলিতে আর কোনও ‘ব্যাক বেঞ্চার্স’ থাকবে না। কারণ পিছনের সারি বলেই কিছু থাকবে না শ্রেণীকক্ষে। সব পড়ুয়ারাই বসবে ‘ফার্স্ট বেঞ্চে’। আর এহেন উত্তরণের নেপথ্যে কারণ কী? মালয়ালি ছবি ‘স্থানার্থী শ্রীকুট্টন’-এর ক্লাইম্যাক্স দৃশ্য দেখেই আদতে কেরলের বেশ কিছু স্কুল এমন দৃষ্টান্তমূলক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দক্ষিণী পরিচালক বিনেশ বিশ্বনাথনের প্রথম সিনেমা ‘স্থানার্থী শ্রীকুট্টন’। আর পয়লা ছবিতেই একেবারে বৈপ্লবিক পরিবর্তন করে দেখালেন তিনি। চার পড়ুয়ার গল্প নিয়ে তৈরি এই ছবি। যারা বেজায় দুষ্টু প্রকৃতির। পড়াশোনায় মন নেই। শ্রেণীকক্ষে তাদের স্থানও ছিল একেবারে পিছনের বেঞ্চে। আর সেই কাহিনিই পর্দায় তুলে ধরে সমাজকে ভাবতে বাধ্য করেছেন বিনেশ বিশ্বনাথন। তবে তাঁর এই প্রচেষ্টা যে সার্থক হয়েছে, তার প্রমাণ কেরলের সেই স্কুলগুলি যারা আর কোনও পড়ুয়াকে ‘ব্যাক বেঞ্চার্স’ তকমা দিতে নারাজ।
সবাই ‘ফার্স্ট বেঞ্চে’ বসবে, এটা কীভাবে সম্ভব? এমন কৌতূহল মনে উঁকি দেওয়া অস্বাভাবিক নয়। সাধারণত ক্লাসরুমে পর পর কয়েকসারিতে বেঞ্চ থাকে। তবে বর্তমানে সেই প্যাটার্ন বদলে বেঞ্চগুলিকে অর্ধবৃত্তাকারে সাজানো হয়েছে। কিংবা পরিসর আরেকটু কম থাকলে ‘U’ আকারে বেঞ্চ রাখা যাচ্ছে। এতে সব পড়ুয়ার দিকেই সমান ধ্যান দিতে পারছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। আবার সব পড়ুয়ারাও সমানভাবে শিক্ষকের সঙ্গে কোনও বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারছেন। ফলে এতে যে শিক্ষার্থীদের মনন গঠনে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে, তেমনটা আশা করাই যায়। ভালাকম, কন্নুর, আন্দুর, ত্রিশুর, পালাক্কড়ের মতো বেশ কয়েকটি অঞ্চলে এভাবে ক্লাস করানো হচ্ছে। আর সেসব স্কুলের শ্রেণীকক্ষের ছবি শেয়ার করেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন মালয়ালম ছবি ‘স্থানার্থী শ্রীকুট্টন’-এর পরিচালক বিনেশ বিশ্বনাথন খোদ।
এফপি/টিএ