দুর্যোগে টেলিকম সংযোগ সচল রাখতে সমন্বিত নীতিমালার সুপারিশ

দুর্যোগকালীন সময়ে দেশের টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো সচল রাখতে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে একটি টেকসই ও সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়নের সুপারিশ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ভবনে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এ প্রস্তাব উঠে আসে।

‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ইমার্জেন্সি টেলিকম রেসপন্স’ বিষয়ে অনুষ্ঠিত এ সভায় বিটিআরসি, মোবাইল অপারেটর, টাওয়ার কোম্পানি, স্যাটেলাইট ও সাবমেরিন ক্যাবল প্রতিষ্ঠান, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

সভায় বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন্স বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শফিউল আজম পারভেজ দুর্যোগকালীন টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, দুর্যোগের সময় বিদ্যুৎ বিভ্রাট, অপটিক্যাল ফাইবার ও মাইক্রোওয়েভ লিংকের ক্ষতি, কল ড্রপ ও কল ব্লক, টাওয়ার ও ব্রডব্যান্ড সংযোগ বিঘ্নিত হওয়া, টেকনিশিয়ানদের দুর্গম এলাকায় পৌঁছাতে সমস্যা, ব্যাকআপ জেনারেটর চালাতে ফুয়েল সংকট এবং বিকল্প টেলিকম মাধ্যমের অপ্রতুলতা—এসব বিষয়গুলো টেলিকম সেবা ব্যাহত করে। এসব সমস্যা নিরসনে আগেভাগেই পরিকল্পিত প্রস্তুতি এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সমন্বয় জরুরি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

মোবাইল অপারেটর ও ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) প্রতিনিধিরা সভায় জানান, দুর্যোগকালে নিরবচ্ছিন্ন টেলিকম সেবা দিতে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এবং পল্লী বিদ্যুৎ বোর্ডের ওপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু দুর্যোগে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হলে নেটওয়ার্ক বন্ধ হয়ে যায়, যা ব্যবহারকারীদের ভোগান্তি বাড়ায়। এজন্য আগাম প্রস্তুতি হিসেবে বিদ্যুৎ সংস্থাগুলোর সমন্বিত প্ল্যানিং, দ্রুত বিদ্যুৎ পুনঃস্থাপনে বিশেষ কমিটি গঠন এবং টেলিকম সেবাকে ‘জরুরি সেবা’ হিসেবে ঘোষণার দাবি জানান তারা।

বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানির প্রতিনিধি মতবিনিময় সভায় বলেন, দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় স্যাটেলাইট সংযোগ দিতে ভিস্যাট সরঞ্জাম স্থানান্তর দুরূহ হয়ে পড়ে। তাই সরকারের দুর্যোগপ্রবণ এলাকার মানচিত্র অনুযায়ী সেখানে স্থায়ীভাবে জেনারেটর, সোলার এবং ভিস্যাট স্থাপন করা হলে টেলিযোগাযোগ সংযোগ সচল রাখা সম্ভব হবে। অপরদিকে, টাওয়ার কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিরা বলেন, দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় টাওয়ার সাইটে এখনো স্থায়ী জেনারেটর ও কর্মীদের থাকার ব্যবস্থা নেই। এজন্য বিটিআরসি যেন রেড-ইয়েলো-গ্রিনভিত্তিক সাইট চিহ্নিত করে একটি পৃথক নীতিমালা প্রণয়ন করে—সে আহ্বান জানান তারা।

পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের প্রতিনিধি সভায় বলেন, গ্রামীণ এলাকায় লাইন সংযোগের পাশে গাছপালা থাকায় ঝড় বা ঘূর্ণিঝড়ের সময় সংযোগ বন্ধ রাখতে হয়, যা টেলিকম সেবায় প্রভাব ফেলে। এ কারণে উপকূলীয় এলাকায় দুর্যোগ সহনশীল বৈদ্যুতিক খুঁটি নির্মাণে বিদ্যমান ডিজাইনের পরিবর্তন করে নতুন ইনসুলেটর স্থাপন করা হচ্ছে। পাশাপাশি দুর্যোগকালে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের প্রতিটি ধাপ নিরীক্ষা করে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

সভায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের পরিচালক বলেন, টেলিকম খাতসহ সব স্টেকহোল্ডারের সুপারিশ বিবেচনায় নিয়ে পরবর্তী পাঁচ বছর মেয়াদি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। তিনি আরও বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় তথ্যভিত্তিক প্রস্তুতি ও আন্তঃসংস্থাগত সমন্বয় নিশ্চিত করা হলে সার্বিক সক্ষমতা বাড়বে।

সভাপতির বক্তব্যে বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন্স বিভাগের কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ইকবাল আহমেদ বলেন, প্রতিটি অপারেটরের নেটওয়ার্ক অবকাঠামোর সক্ষমতা একরকম নয়, তাই সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে। দুর্যোগকালীন সমস্যাগুলোকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাগ করে ধাপে ধাপে সমাধান করতে হবে। সেই সঙ্গে আন্তঃসংস্থাগত তথ্য শেয়ারিং বাড়াতে হবে এবং দুর্যোগ সংক্রান্ত যেকোনো সরকারি পরিকল্পনায় টেলিকম খাতকে অন্তর্ভুক্ত করা আবশ্যক বলে তিনি মত দেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, একাধিক পর্যালোচনা সভা আয়োজনের মাধ্যমে এ সংক্রান্ত একটি বাস্তবভিত্তিক ও দীর্ঘমেয়াদি নীতিমালা প্রণয়ন করা সম্ভব হবে।

সভায় বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগের কমিশনার মাহমুদ হোসেনসহ কমিশনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, পিডিবি, পল্লী বিদ্যুৎ বোর্ড, বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড, সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি, আবহাওয়া অধিদপ্তর, মোবাইল অপারেটর, এনটিটিএন অপারেটর, টাওয়ার শেয়ারিং কোম্পানি, আইটিসি অপারেটর, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন ও অ্যামেচার রেডিও অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

এমকে/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
গাজায় দৈনিক ৬০০ ত্রাণ ট্রাক প্রবেশের অনুমতির সিদ্ধান্ত ইসরায়েলের Oct 10, 2025
img
মোহাম্মদপুরে ঝটিকা মিছিলের চেষ্টা, ২ আটক Oct 10, 2025
img

এরদোয়ানকে প্রধান উপদেষ্টার ধন্যবাদ

ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন শহিদুল আলম Oct 10, 2025
img
দুঃখ ভুলতে গানের জগতে পা রাখেন জন লেনন Oct 10, 2025
img
শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী কে এই মারিয়া করিনা মাচাদো? Oct 10, 2025
img
আর্জেন্টিনা, ফ্রান্স, স্পেন এরপর ব্রাজিল Oct 10, 2025
img
ডিএমপির ঊর্ধ্বতন ৮ কর্মকর্তাকে রদবদল Oct 10, 2025
img
শান্তিতে নোবেল পেয়ে ‘অবাক’ মারিয়া কোরিনা Oct 10, 2025
img
শাহজালালে ৬৫ ভরি স্বর্ণসহ আটক ২ Oct 10, 2025
img
ঐশ্বরিয়ার জন্যই ‘দেবদাস’ থেকে বাদ পড়েন সালমান? Oct 10, 2025
img
হাতিরঝিলে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ৯ Oct 10, 2025
img
‘অবৈধ অনুপ্রবেশে’ ভারতে আটক ৩৪ বাংলাদেশি নাগরিক Oct 10, 2025
img
‘না বলা’ অনেক কথা বলবেন নোবেল Oct 10, 2025
img
বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সুখবর দিলেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম Oct 10, 2025
img
আগে গণভোট পরে সংসদ নির্বাচন, দাবি খেলাফত মজলিসের Oct 10, 2025
রাকসুতে আচরণবিধি সবাই নিজেদের মতো বানিয়ে ফেলছে: জিএস প্রার্থী সালাউদ্দিন Oct 10, 2025
img
আর্জেন্টিনার পরের ম্যাচে দলে জায়গা হবে না মেসির Oct 10, 2025
img
রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় কিয়েভজুড়ে বিদ্যুৎ বিপর্যয় Oct 10, 2025
img
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ৩০৮ Oct 10, 2025
img
জুবিনের মৃত্যুর পরও সিঁদুর পরছেন স্ত্রী গরিমা! Oct 10, 2025