ইরানকে পারমাণবিক শক্তি বানাতে চীনের বড় ঘোষণা

মাত্র ক’দিন আগেই পশ্চিমা হুমকির মুখে ইরানের পাশে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল চীন। এবার সেই বন্ধুত্বকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে ইরানকে পারমাণবিক শক্তিধর হিসেবে গড়ে তুলতে সম্ভাব্য সবধরনের সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিল বেইজিং। এমনকি প্রয়োজনে যে কোনো পশ্চিমা চাপ বা হুমকির বিরুদ্ধেও ইরানকে রক্ষার বার্তা দিয়েছে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই।
চীনের এই ঘোষণার পর আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে উত্তাপ ছড়িয়েছে। ইতিমধ্যেই শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা HQ-9 ইরানে পৌঁছে গেছে, এবং ভবিষ্যতে J-10C যুদ্ধবিমান সরবরাহের সম্ভাবনাও উড়ে যাচ্ছে না।

চলতি সফরে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচীর সঙ্গে এক বৈঠকে বসেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয় ছিল পরমাণু কর্মসূচি ও দ্বিপাক্ষিক কৌশলগত অংশীদারিত্ব। বৈঠকে ওয়াং ই বলেন, “ইরানের সার্বভৌমত্ব ও মর্যাদা রক্ষা, বলপ্রয়োগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ এবং শান্তিপূর্ণ ও বৈধ পারমাণবিক কর্মসূচি পরিচালনার অধিকারকে চীন সমর্থন করে।"

তিনি আরও বলেন, “পারস্পরিক সম্প্রীতি এবং প্রতিবেশনীতিতে অটল থেকে ইরানকে সহায়তা করে যাবে বেইজিং। আমাদের লক্ষ্য হলো ইরান-চীন সম্পর্ককে আরও গভীর করে স্থিতিশীল ও দীর্ঘমেয়াদে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।”

চীনা কমিউনিস্ট পার্টির পলিটব্যুরোর এই সদস্য বলেন, “কৌশলগত অংশীদার হিসেবে ইরানের সঙ্গে পারস্পরিক আস্থা এবং সহযোগিতা জোরদার করাই আমাদের অঙ্গীকার। ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচির বৈধ অধিকার রয়েছে, আমরা সেটিকে সম্মান করি।”

উল্লেখযোগ্যভাবে, আমেরিকার কঠোর নিষেধাজ্ঞার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে তেল রপ্তানি করতে পারে না ইরান। তবে সেই নিষেধাজ্ঞার ফাঁক গলেই চীন ইরান থেকে বিপুল পরিমাণে তেল আমদানি করে, যার বিনিময়ে বেইজিং সরবরাহ করে আধুনিক সামরিক প্রযুক্তি ও অস্ত্র।

এই কৌশলগত বিনিময়ের ফলে, নিষেধাজ্ঞার জালে থেকেও ইরান মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। এখন যদি দেশটি পারমাণবিক কর্মসূচিতে সফল হয়, তবে তা ইরানকে সুপারপাওয়ারের কাতারে পৌঁছে দিতে পারে—এমনটাই মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা। এবং সেই ‘লাভের হিস্যা’ থেকে বাদ যাবে না চীনও।

অন্যদিকে, পরমাণু আলোচনায় চীনের এই ‘অভয়’ পেয়ে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি বলেন, “ইরান কখনোই পরমাণু অস্ত্র তৈরির পদক্ষেপ নেবে না। তবে শান্তিপূর্ণ এবং বৈধ পারমাণবিক অধিকার থেকে আমরা সরে আসবো না।”

তিনি আরও জানান, “সমতার ভিত্তিতে সব পক্ষের সাথেই আলোচনায় বসতে আমরা প্রস্তুত। চীনের সাথে ভবিষ্যতে আরও সহযোগিতা বাড়ানোর পরিকল্পনাও রয়েছে।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই মুহূর্তে ইরান-চীন সম্পর্ক কেবল কৌশলগত নয়, বরং বৈশ্বিক শক্তি ভারসাম্যে বড় ধরনের রদবদলের ইঙ্গিতও দিচ্ছে। আর এই দ্বিপাক্ষিক বন্ধুত্ব যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে নতুন অধ্যায় সূচিত হতে চলেছে।

এফপি/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
পুরোপুরি খুলে দেওয়া হয়েছে ইরানের আকাশসীমা Jul 18, 2025
img
চার-ছক্কার ঝড়ে কক্সের রেকর্ড সেঞ্চুরি! Jul 18, 2025
img
‘বাগি ৪’-এ এবার থাকবে সোনম বাজওয়া Jul 18, 2025
যে কারণে অধ্যক্ষের পদত্যাগ চায় সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা! Jul 18, 2025
img
প্রখ্যাত অভিনেতা ভেলু প্রভাকরণ আর নেই Jul 18, 2025
img
"দশ বছরেও ‘বজরঙ্গি ভাইজান’ দর্শকের মনে দাগ কাটে" Jul 18, 2025
‘আমি যে রোডম্যাপ দিয়েছি, তা শুধু ঘোষণাপত্রই নয়, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপমুক্ত’ Jul 18, 2025
img
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান আমাকে সাইকেল উপহার দিয়েছিলেন : রিনা খান Jul 18, 2025
img
বিদেশি নির্বাচন নিয়ে মন্তব্য করতে পারবে না মার্কিন রাষ্ট্রদূতরা- হোয়াইট হাউজের আদেশ জারি Jul 18, 2025
img
গ্রিসের সৈকতে লুঙ্গিতে বেবোর নতুন রূপ Jul 18, 2025
img
ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতন থাকার আহ্বান আমিনুলের Jul 18, 2025
img
নির্বাচনে ভোটদানের সর্বনিম্ন বয়স ১৬ বছর করছে যুক্তরাজ্য Jul 18, 2025
img
রাত পোহাতেই কন্যাকে নিয়ে বাড়ি ফিরলেন সিড-কিয়ারা Jul 18, 2025
img
ষড়যন্ত্র করে চোরাই পথে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করলে, জণগণ তা মানবে না : এ জেড এম জাহিদ Jul 18, 2025
img
মুখোমুখি নয়, তবু চিরকালীন লড়াইয়ে নয়নতারা ও তৃষা Jul 18, 2025
img
কবে বিয়ের পিঁড়িতে বসছেন ঋতাভরী চক্রবর্তী? Jul 18, 2025
img
‘জিন্দেগি না মিলেগি দোবারা’র সিক্যুয়েল নয়, বললেন ফারহান Jul 18, 2025
img
গোপালগঞ্জে হামলার ঘটনায় আমরা দ্বিগুন শক্তিশালী হয়েছি: নাহিদ ইসলাম Jul 18, 2025
img
শ্রীলীলার কাজের প্রতি নিষ্ঠায় মুগ্ধ রাজামৌলি Jul 18, 2025
img
নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্রের হোতা কারা, দেশের মানুষ জেনে গেছে: ফারুক Jul 18, 2025