আগামী বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসর বসবে শ্রীলঙ্কায়। তার মাত্র এক বছর আগে ঘরের মাঠে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বাংলাদেশের কাছে সিরিজ হারতে হয়েছে তাদের। বিশ্বকাপের মাত্র বছরখানেক আগে টাইগারদের বিপক্ষে সিরিজ হারের পর জাতীয় দলকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন শ্রীলঙ্কার প্রধান নির্বাচক উপুল থারাঙ্গা। বিশ্বকাপ সামনে রেখে দ্রুত পরিবর্তনের পক্ষে মত সাবেক এই লঙ্কান তারকার।
শ্রীলঙ্কা সফরে গিয়ে টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজে হেরে ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছিল বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচেও বাজেভাবে হারে টাইগাররা। কিন্তু এরপরেই অবিশ্বাস্যভাবে ঘুরে দাঁড়ায় লিটন দাসের দল। পরের দুই টি-টোয়েন্টিতে দুর্দান্ত ক্রিকেটে পরাস্ত করে লঙ্কানদের। ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নেয় বাংলাদেশ, যা টাইগারদের বিপক্ষে লঙ্কানদের প্রথম টি-টোয়েন্টি সিরিজ হার। দলের ব্যাটিং ব্যর্থতাকেই এই হারের কারণ মনে করেন শ্রীলঙ্কার প্রধান নির্বাচক উপল থারাঙ্গা।
টেলিকম এশিয়া স্পোর্টকে দেয়া সাক্ষাৎকারে থারাঙ্গা বলেন, 'আমাদের ব্যাটিং ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ হচ্ছে। বিভিন্ন কম্বিনেশন চেষ্টা করেছি, কিন্তু এখন সময় এসেছে নতুনদের সুযোগ দেয়ার।'
ডাম্বুলায় দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে শ্রীলঙ্কার বাটিংয়ে ধস নামে, যেখানে তারা মাত্র ৯৪ রানে গুটিয়ে যায়, যা দেশের মাটিতে তাদের সর্বনিম্ন টি-টোয়েন্টি স্কোর এবং কলম্বোয় সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে ১৩২ রানে গুটিয়ে যায় তারা। সে ম্যাচে মিডল অর্ডারের ব্যর্থতা ও চাপের মুখে হুড়মুড় করে ভেঙে পরার প্রবণতা নগ্নভাবে ধরা পড়ে।
এক সময়কার অধিনায়ক ও বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটার থারাঙ্গা টেস্ট ও ওয়ানডে ফরম্যাটে যথেষ্ট উন্নতি এনে দিয়েছেন নির্বাচক হিসেবে, তবে তিনি স্বীকার করেছেন যে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে দল এখনও পিছিয়ে। ২০২৬ সালে ভারত ও শ্রীলঙ্কার যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপকে সামনে রেখে সময় দ্রুতই ফুরিয়ে আসছে। ফলে নতুনদের বাজিয়ে দেখার কথা ভাবছে লঙ্কান টিম ম্যানেজমেন্ট। ঘরোয়া ক্রিকেটে দারুণ পারফর্ম করা নুয়ানিদু ফার্নান্দো ও পবন রত্নায়েক জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার দোরগোঁড়ায়।
এই দুই ক্রিকেটারের ব্যাপারে সাবেক এই ক্রিকেটার বলেন, 'তারা তাদের প্রাপ্যটা আদায় করেছে। আমাদের দরকার উদ্যমী, রানের জন্য ক্ষুধার্ত আর ধৈর্যশীল খেলোয়াড়- বিশেষ করে মিডল ওভারে,-বলেন থারাঙ্গা।
ওয়ানডেতে ছয় নম্বরে নিয়মিত ভালো পারফর্ম করা জানিথ লিয়ানাগেকে টি-টোয়েন্টিতে বড় দায়িত্ব দেয়া হতে পারে। থারাঙ্গা বলেন, 'সে পাওয়ার হিটার নয়, কিন্তু গেমটা খুব ভালো বোঝে। একজন ভালো ফিল্ডারও বটে এবং টানটান পরিস্থিতিতে শান্ত স্বভাবের -এমন ক্রিকেটার আমাদের প্রয়োজন।'
এদিকে, পেসারদের বিশাল পুল থাকলেও, সমস্যা হচ্ছে কাকে দলে রাখা হবে। একাদশে সাধারণত দুইজন বিশেষজ্ঞ পেসার জায়গা পান, ফলে পাথিরানা বা চামিরার মতো এক্সপ্রেস বোলারদের নিয়মিত সুযোগ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। থারাঙ্গা জানান, বোলারদের ফিটনেস বজায় রাখা যায় ও দলে বৈচিত্র্য আনতে 'রোটেশন পলিসি' চালু করা হতে পারে। 'আমাদের অপশন আছে, কিন্তু ভারসাম্যই আসল। সবাইকে খেলানো যাবে না, তাই কাকে কখন খেলানো হবে, সেটা বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে বেছে নিতে হবে, -তিনি যোগ করেন।
বর্তমান শ্রীলঙ্কা দলে ব্যাটিংয়ে শক্তি ও ধারাবাহিকতার অভাব প্রকট। অন্যান্য শীর্ষ দলগুলোর মতো নিয়মিত ছক্কা মারতে তারা এখনো সংগ্রাম করে। থারাঙ্গা এ বিষয়ে বলেন, '২০১৪ সালেও, যখন আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম, আমরা অদক্ষ খেলোয়াড়দের ওপর নির্ভর করিনি। আমরা স্মার্ট ক্রিকেট খেলতাম -ব্যাটারদের দ্রুত জায়গা বদলানো, গ্যাপে বল ফেলা, পরিস্থিতি বুঝে খেলা। এখন সেটা হারিয়ে গেছে, বিশেষ করে মিডল ওভারে।'
এই ঘাটতি পূরণের জন্য শ্রীলঙ্কা দলে যুক্ত করা হয়েছে ইংল্যান্ডের পাওয়ার-হিটিং কোচ জুলিয়ান উডকে, যিনি আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজি ও আন্তর্জাতিক দলের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। তিনি ব্যাটসম্যানদের স্ট্রাইক রেট ও পাওয়ার আউটপুট বাড়াতে সাহায্য করবেন। 'এটা খুব ভালো সিদ্ধান্ত। ছেলেদের যতটা সম্ভব শেখা উচিত। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট বদলে যাচ্ছে, আমাদেরও তাল মিলাতে হবে।
২০২৬ বিশ্বকাপের আগে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিরিজ খেলবে শ্রীলঙ্কা। ইংল্যান্ড, পাকিস্তান ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ রয়েছে তাদের। সামনে এশিয়া কাপ ও সম্ভবত ভারতের বিপক্ষে একটি হোম সিরিজও খেলবে লঙ্কানরা। থারাঙ্গা বলেন, 'এখন থেকে প্রতিটি সিরিজই হবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা, পরিশোধন ও মূল দল গঠনের মঞ্চ। আমরা খুব বেশি পিছিয়ে নেই কিন্তু সাহসী সিদ্ধান্ত, ধৈর্য এবং কিছু ঝুঁকি নিতে হবে। আমরা সেটা আমাদের সমর্থকদের জন্যই করব।'
এমকে/এসএন