এ প্রজন্মের অনেকেই হয়তো ঋষিকেশ মুখার্জিকে সেভাবে চিনবেন না। কিন্তু একটা সময় বলিউডের দাপুটে পরিচালক ছিলেন তিনি। তার হাত ধরে জনপ্রিয় তারকা হয়েছেন অনেকেই। হিন্দি চলচ্চিত্রের এই বাঙালী চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যকাম, চুপকে চুপকে, অনুপমা, আনন্দ, অভিমান, গুড্ডি, গোলমাল, আশীর্বাদ, বাবুর্চি, নমক হারাম-এর মতো অসংখ্য ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। তাকে ভারতীয় চলচ্চিত্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে গণ্য করা হয়।
অন্যদিকে, মৌসুমী চ্যাটার্জি একজন বিখ্যাত অভিনেত্রী যিনি সমানভাবে বলিউড এবং বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। রাজেশ খান্না, শশী কাপুর, জীতেন্দ্র, সঞ্জীব কুমার, অমিতাভ বচ্চনের মত অভিনেতাদের সাথে কাজ করেছেন। তিনি ১৯৭৩-১৯৮৪ পর্যন্ত সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপপ্ত হিন্দি সিনেমার অভিনেত্রীদের একজন।
এই দুজনই বাঙালী, কিন্তু তাদের মধ্যে সম্পর্ক একদমই ভালো ছিল না। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে মৌসুমী চ্যাটার্জি নিজেই এ কথা স্বীকার করেছেন। এমনকি, ঋষিকেশ মুখার্জি নাকি তার ক্যারিয়ারটাই ধ্বংস করে দিতে চেয়েছিলেন, এমন দাবিও মৌসুমীর।
তবে তিনি এও বলেছেন যে, যিনি মারা গেছেন তাকে নিয়ে কথা বললে এখন অনেকেই বলবেন আমি গল্প তৈরি করছি, তাই আমি ঋষি দাকে নিয়ে কোথাও খুব একটা কথা বলি না।
মৌসুমী বলেন, ‘একদিন আমি ঋষি দাকে দেখতে তার বাড়িতে যাই। তিনি তখন শয্যাশায়ী। আমাকে দেখে কাছে ডাকলেন, আমি পাশে গিয়ে বসলাম। তখন ঘরে আরও কয়েকজন ছিলেন। উনি আমাকে বললেন, ‘মৌসুমী, আমাকে ক্ষমা করে দিস।’ আমি তখন অবাক হয়ে বললাম, ‘কেন?’ তিনি বললেন, ‘আমি তোর ক্যারিয়ারটা ধ্বংস করে দিতে চেয়েছিলাম। ওমুক ছবির গল্প তোকে শোনানো হয়েছিল? তমুক ছবিতে তোকে নেবার কথা ছিল, কিন্তু নেয়নি?’ আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি আবারও বললেন, ‘ওই সব ছবিতে আমার পরামর্শে তোকে বাদ দেওয়া হয়। আসলে আমি তোর ওপর প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত ছিলাম।’
কি এমন করেছিলেন যে ঋষিকেশের মতো সিনিয়র নির্মাতা তার ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন? জানতে চাইলে মৌসুমী চ্যাটার্জি বলেন, ‘আমি তখন হাইস্কুলে পড়ি, সদ্য তরুণ মজুমদারের বাংলা ছবি ‘বালিকা বধূ’ করেছি। সুপার ডুপার হিট হয় ছবিটি। এরপর বাবা আমাকে আর ছবি করতে দিতে চাননি। তারপরও ‘পরিনীতা’ নামে একটি ছবি করতে দিয়েছিলেন, কারণ বাবাকে বোঝানো হয়েছিলো যে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের গল্প, খুবই ভালো গল্প, ইন্দুকে (মৌসুমীর ডাকনাম ইন্দিরা) করতে দিন। ‘পরিনীতা’র পরপরই ঋষি দা আমার বাবার কাছে তার জনপ্রিয় হিন্দি ছবি ‘গুড্ডি’র প্রস্তাব দেন। কিন্তু বাবা তখন তাকে ফিরিয়ে দেন (পরে ছবিটিতে অভিনয় করে তারকাখ্যাতি পান জয়া ভাদুড়ি, আজকের জয়া বচ্চন)। বলেন যে, ও ছোট মানুষ, বোম্বেতে গিয়ে কাজ করতে পারবে না।’
মৌসুমী যুক্ত করে আরও বলেন, ‘শুধু বাবার জন্য নয়, ওই ছবিতে আমাকে শর্ট ফ্রগ পরতে হবে শুনে আমি নিজেই কম্ফোর্টেবল ফিল করিনি। আমরা তখন শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ পরা মেয়ে, সমাজে সবাই ওগুলোই পরে। ওই সময় শর্ট ফ্রগ পরার কথা চিন্তাও করতে পারিনি। ফলে ঋষি দাকে মানা করে দিয়েছিলাম। সেই থেকে নাকি উনি আমার উপর রাগ পুষে রেখেছিলেন। যার জন্য আমাকে একটার পর একটা ছবি থেকে বাদ দিয়েছিলেন। কিন্তু এখানে তো আমার কিছু করার ছিল না। যাদের মনে হয়েছে আমাকে নিয়ে কাজ করবেন করেছেন, যাদের মনে হয়েছে ঋষি দা’র কথা শুনবেন তারা শুনেছেন।’
কেএন/টিকে