রাজধানীর উত্তরা এলাকায় মাইলস্টোন স্কুলে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা দেশকে। দুর্ঘটনার পরপরই সাধারণ মানুষের মুখে উঠে আসে বিমানটির সক্ষমতা ও বয়স নিয়ে প্রশ্ন। এফ-৭ বিমানগুলো “পুরনো” হলেও দুর্ঘটনার পেছনে আসলেই কি বিমান দায়ী?
২১ জুলাই দুপুরে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি চীনা যুদ্ধবিমান F-7 BGI নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাইলস্টোন স্কুল ভবনের ওপর আছড়ে পড়ে। এতে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও স্কুলকর্মীসহ কমপক্ষে ৩২ জন নিহত এবং দেড় শতাধিক আহত হয়েছেন। পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলামও প্রাণ হারান। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এফ-৭ বিমানগুলো “পুরনো” হলেও দুর্ঘটনার পেছনে শুধুমাত্র বয়সকে দায়ী করলে ভুল হবে।
২০১৩ সালে বাংলাদেশ চীন থেকে ১৬টি F-7 BGI বিমান সংগ্রহ করে। এই বিমানগুলোকে রাশিয়ার মিগ-২১-এর চীনা সংস্করণ বলা হয়। বিমানবাহিনীর ভাষ্য অনুযায়ী, এসব বিমানের গড় কার্যক্ষমতা প্রায় ৩০ বছর। অর্থাৎ বিমানটি এখনো এর কার্যকালীন পরিসীমার মধ্যেই রয়েছে। বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান এ প্রসঙ্গে বলেন, যান্ত্রিক ত্রুটি, পাখির আঘাত বা অন্য কোনো প্রযুক্তিগত বিষয় দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। তদন্ত ছাড়া চূড়ান্ত কিছু বলা যাবে না।”
অন্যদিকে, এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, “পুরনো বিমান মানেই অনিরাপদ নয়। বিশ্বের বহু এয়ারলাইন্স ২০-৩০ বছরের পুরনো বিমান দিয়ে নিরাপদে ফ্লাইট পরিচালনা করছে।” আন্তর্জাতিক রেকর্ডেও দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের F-16 বা ফ্রান্সের রাফালের মতো আধুনিক যুদ্ধবিমানও দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। এমনকি এয়ারবাস A380 বা বোয়িং 787 ড্রিমলাইনারের মতো বাণিজ্যিক বিমানও মাঝেমধ্যে বিধ্বস্ত হয়েছে। সুতরাং, প্রযুক্তিগত ত্রুটি বা মানবিক ভুলও বড় কারণ হতে পারে।
এর আগেও ২০১৮ সালে টাঙ্গাইলে এবং ২০১৫ সালে চট্টগ্রামে একই ধরনের এফ-৭ বিমান দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিল। শুধু বাংলাদেশেই নয়, পাকিস্তান, ইরান, মিয়ানমার, জিম্বাবুয়ে, এমনকি চীনেও এই সিরিজের বিমান একাধিকবার বিধ্বস্ত হয়েছে। চীন ২০২৩ সালে নিজ দেশ থেকে এই সিরিজের বিমান অবসরে পাঠিয়েছে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে-পুরনো নকশা ও সীমিত প্রযুক্তিগত সক্ষমতা।
এমকে/এসএন