২০১৮ সালে কানাডার অন্টারিওর লন্ডনের এক হোটেল কক্ষে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় কানাডার হকি দলের পাঁচ খেলোয়াড়কে খালাস দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) কানাডার অন্টারিওর একটি আদালতের বিচারক মারিয়া ক্যারোচিয়া দীর্ঘ আট সপ্তাহের শুনানির সাক্ষ্যপ্রমাণ পর্যালোচনা করে এই রায় দেন।
খালাস পাওয়া খেলোয়াড়রা হলেন মাইকেল ম্যাকলিওড, ডিলন ডুবে, ক্যাল ফুট, অ্যালেক্স ফরমেন্টন ও কার্টার হার্ট। সবাই কানাডার বিশ্বজয়ী জুনিয়র হকি দলের সদস্য ছিলেন এবং অভিযোগ উত্থাপনের সময় ন্যাশনাল হকি লিগে (এনএইচএল) খেলছিলেন। পাঁচজনের মধ্যে একজন তখন ইউরোপে খেলছিলেন।
বিচারক ক্যারোচিয়া বলেন, “মামলার ভিকটিম ছদ্মনাম ‘EM’-এর সাক্ষ্য ‘বিশ্বাসযোগ্য বা নির্ভরযোগ্য ছিল না’। তার সাক্ষ্যে অসঙ্গতি ছিল এবং ঘটনার বর্ণনায় স্পষ্ট বিভ্রান্তি ছিল। ফলে রাষ্ট্রপক্ষ কোনো অভিযোগেই প্রমাণের ভার পূরণ করতে পারেনি।”
আদালতে বলা হয়, ২০১৮ সালের জুনে হকি কানাডার একটি গালায় অংশ নিতে গিয়ে খেলোয়াড়রা একটি বারে EM-এর সঙ্গে দেখা করেন।। পরে EM স্বেচ্ছায় ম্যাকলিওডের সঙ্গে হোটেল কক্ষে যান। ভুক্তভোগীর অভিযোগ অনুযায়ী, পরে অন্য খেলোয়াড়রাও সেখানে প্রবেশ করে তার সম্মতি ছাড়াই যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হয়।
রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, EM মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন এবং তিনি ভয় পেয়েছিলেন। প্রথমে ম্যাকলিওডের সঙ্গে সম্মতি থাকলেও পরে যা ঘটে, তার জন্য তিনি সম্মতি দেননি।
অন্যদিকে, আসামিদের আইনজীবীরা দাবি করেন, নারী নিজেই অন্য খেলোয়াড়দের সঙ্গে সম্পর্কের কথা বলেন এবং তাতে তারা সম্মতি ধরে নেন। একমাত্র কার্টার হার্ট নিজের পক্ষে আদালতে সাক্ষ্য দেন।
আদালতে দুটি ভিডিও উপস্থাপন করা হয় যেখানে দেখা যায়, EM হাস্যোজ্জ্বল ও স্বাভাবিক ভঙ্গিতে কথাবার্তা বলছেন এবং সম্মতির ইঙ্গিত দিচ্ছেন। যদিও ভিডিওর মাধ্যমে সম্মতি প্রমাণ হয় না, তবু বিচারক বলেন, এতে তার বিপদের কোনো চিহ্ন দেখা যায়নি।
বিচারক ক্যারোচিয়া বলেন, EM-এর বক্তব্যে অনেক অসংগতি ছিল এবং পূর্বে পুলিশের কাছে ও হকি কানাডার কাছে দেওয়া বক্তব্যে অমিল ছিল। এছাড়া সাক্ষ্যদাতা দুই খেলোয়াড়, যারা অভিযুক্ত ছিলেন না, তারা বলেছেন EM যৌন ইচ্ছার বিষয়ে ‘খুব স্পষ্ট ও স্বতঃস্ফূর্ত’ ছিলেন।
রায়ের পর ন্যাশনাল হকি লিগ জানিয়েছে, বিচারকের রায় পুরোপুরি পর্যালোচনা না হওয়া পর্যন্ত খেলোয়াড়রা লিগে খেলতে পারবেন না।
EM-এর আইনজীবী ক্যারেন বেলেহুমার জানান, তার মক্কেল রায় শুনে ‘অত্যন্ত হতাশ ও ক্ষুব্ধ’। তিনি বলেন, ‘যখন একজন সাহস করে নিজের কষ্টের কথা বলে, তখন তাকে অবিশ্বাস করা- সেটাই সবচেয়ে ভয়ানক।’
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মেগান কানিংহাম জানান, তারা রায় খতিয়ে দেখবেন এবং যোগ করেন, ‘এই বিচার প্রক্রিয়ার প্রধান লক্ষ্য ছিল উভয় পক্ষের জন্যই ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।’
রায়ের দিন আদালতের বাইরে ভিকটিমের সমর্থনে জড়ো হন বহু মানুষ। প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘We Believe Her’, ‘Justice for EM’, ‘My Dress is Not a Yes’।
একজন আন্দোলনকারী ফাবিয়েন হলার বলেন, ‘এই রায় কেবল একজন নারীর সঙ্গে নয়, বরং সমস্ত যৌন সহিংসতার শিকারদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।’
সূত্র : বিবিসি
কেএন/এসএন