রাজধানীর গুলশান এলাকায় গতকাল শনিবার রাতে আওয়ামী লীগ নেত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় চাঁদাবাজি করার অভিযোগে আটক হওয়া আবদুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান (রিয়াদ) পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য। বিষয়টি জানিয়ে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্যসচিব মাহিন সরকার।
রিয়াদের মতো ব্যক্তি কিভাবে স্বরাষ্ট্র বিভাগের পুলিশ সংস্কার কমিশনের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় সুপারিশ করল এটা সামনে আনা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
আজ রবিবার (২৭ জুলাই) ফেসবুক পোস্টে মাহিন সরকার বলেন, আব্দুর রাজ্জাক নামের যে ছেলেটা গ্রেপ্তার হয়েছে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে সে পুলিশ সংস্কার কমিশনের মেম্বার।
অর্থাৎ গুরুত্বের বিচারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্ত্রণালয়ের সে লিস্টেড ছাত্র প্রতিনিধি। বাংলাদেশে যে কালচার চলে তাতে সে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কোনোভাবে যুক্ত, এই পরিচয়েই কেউ অর্থ উপার্জন করতে পারে বলে মনে করি। এখানে তার মতো ব্যক্তিকে কিভাবে স্বরাষ্ট্র বিভাগের পুলিশ সংস্কার কমিশনের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় সুপারিশ করল এটা সামনে আনা প্রয়োজন। এটা খুব করে চাওয়া আমার।
তিনি আরো বলেন, জানে আলম অপু নামক ছেলেটা আগে থেকেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে অনেক উচ্চবাচ্য করতো, অনেকটা ঔদ্ধত্যের পর্যায়ে। তার বিরুদ্ধে নিজ জেলা জয়পুরহাটে অসংখ্য অভিযোগ ইতিপূর্বে কানে এসেছে, যেহেতু রাজশাহী বিভাগীয় দায়িত্বে আমি ছিলাম। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সেসহ আরো কয়েকজন সেই হত্যাকাণ্ডের কারণ তাদের দাবির সঙ্গে না মেলা সত্ত্বেও তারা আন্দোলন করে এবং স্বরাষ্ট্র দপ্তরে যাতায়াত বৃদ্ধি করে। এখানে জানে আলম অপু শুধু নয়, ওর আশেপাশে থাকা আরো দুই একজনের নামে এমন অভিযোগ আসলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
এনসিপির এই নেতা বলেন, সর্বশেষে ইব্রাহিম হোসেন মুন্না নামক ছেলেটা এই চাঁদাবাজিতে অন্যতম অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। এই নাম আসায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ব্যানারটির যৌক্তিকতা শতভাগ ফুরিয়ে এসেছে। ইতিপূর্বে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সে ঢাকা মহানগর কমিটি গুছানোতে ভূমিকা রেখেছে। সবচেয়ে বড় কথা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গত কয়েকদিন আগে হওয়া নির্বাচনে সে টপ অর্গানোগ্রামের একটি পদে ইলেকশন করে এবং পরবর্তীতে তার জায়গায় সে না-কি অন্য কাউকে সিলেক্ট করেছে এই অজুহাত দিয়ে সে আর দায়িত্ব নেয়নি। এরকম অদ্ভুতুড়ে ঘটনা ইতিপূর্বে জীবনেও প্রত্যক্ষ করিনি আমি।
ইব্রাহিম হোসেন মুন্নার নামটি একেবারে সেন্ট্রালি কানেক্টেড এবং গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলেম অপুও সেন্ট্রাল নেতা। তাদের সঙ্গে অনেকেরই ভালো খাতির থাকা অস্বাভাবিক নয়। রিমান্ডে নিয়ে প্রকৃত কুশীলবদের বের করে আনাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ, কেননা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানার একটি ঐতিহাসিক ব্যানার। আমি ইতিপূর্বেও জানিয়েছি এই ব্যানার আর থাকার প্রয়োজন নেই, যদিও এই ব্যানার প্রতিষ্ঠা করতে আমারও ভূমিকা ছিল।
চাঁদাবাজির আভিযোগে গেপ্তারের পর দুই ছাত্র সংগঠন থেকে ৫ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। রাতেই বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সাংগঠনিক নীতিমালা ও শৃঙ্খলাপরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক ইব্রাহিম হোসেন মুন্না, সদস্য সাকাদাউন সিয়াম ও সাদাবকে সাংগঠনিক পদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়।
আর পৃথক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনের দুই নেতাকে স্থায়ী বহিষ্কারের কথা জানায় গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ। তাঁরা হলেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলম অপু ও সদস্য আবদুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান। আবদুর রাজ্জাক বিন সুলাইমানের ফেসবুক প্রোফাইলে তাঁর নামের পাশে ব্র্যাকেটে রিয়াদ লেখা দেখা গেছে। পুলিশ আটক যে পাঁচজনের নাম প্রাথমিকভাবে উল্লেখ করেছিল, তাঁদের মধ্যে রিয়াদ নামটি ছিল।
পিএ/ এসএন