চাঁদার টাকা ভাগ করে নেন রিয়াদ-অপু

আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক। গত ২৭ জুলাই ঢাকার গুলশান থানায় দায়ের করা চাঁদাবাজির মামলার আসামি তিনি।

গতকাল রবিবার (৩ আগস্ট) মামলায় সাত দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন তিনি। জবানবন্দিতে নিজের চাঁদাবাজির ঘটনায় ক্ষমা প্রার্থনা করে তিনি বলেছেন, ‘আমি গরিবের ছেলে।

আমি টাকার লোভ সামলাতে পারিনি।’

এর আগে ২৬ জুলাই সংরক্ষিত আসনের সাবেক এমপি শাম্মী আক্তারের গুলশানের বাসায় চাঁদাবাজি করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হন রিয়াদ। পরে তাকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

রিয়াদ জবানবন্দিতে জানান, বিভিন্ন সময়ে ফ্যাসিবাদী লোকজনকে গ্রেপ্তারে পুলিশকে সহযোগিতা করেছেন তিনি।

গত ১৭ জুলাই রাতে তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সিনিয়র সহসভাপতি জাকির হোসেন মঞ্জুর ফোনের মাধ্যমে গুলশান জোনের ডিসিকে জানান, গুলশান থানার সাবেক এমপি শাম্মী আক্তার নিজবাসায় অবস্থান করছেন। পরে ডিসি তাকে জানান, বিষয়টি গুলশান থানার ওসিকে অবগত করেছেন তিনি।

পরে রাত ২টার দিকে তিনিসহ মঞ্জু, জানে আলম অপু, সাবাব হোসেন, আতিক শাহরিয়ার, সাদাকাউন সিয়াম, তানিম ওয়াহিদ, আতিকের সঙ্গে থানায় যান। থানার ওসি তখন জানান, এত রাতে গুলশান সোসাইটিতে অভিযান চালানো যাবে না।

তিনি তাদের ফজরের আযান পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেন।

এরপর গুলশান থানার একটি টিম তাদের সঙ্গে দেওয়া হয়। পরে রিয়াদের নেতৃত্বে একটি দল শাম্মীর বাড়িতে যায়। গুলশানের থানার ওসি (তদন্ত) নিজে অভিযানের নেতৃত্ব দেন। শাম্মীকে বাসায় না পেয়ে সকাল সাড়ে ৭টায় ফিরে আসেন তারা।

তিনি আরো জানান, ওই বাসা থেকে শাম্মীর এয়ারপড নিয়ে আসেন জানে আলম অপু। পরে তারা দুজন ওই দিন সকাল ১০টায় বাসায় গিয়ে তারা এয়ারপডটি ফের‍ত দেন। তখন অপু পানি খাওয়ার কথা বলে ওই বাসায় প্রবেশ করেন। তিনি বাসায় থাকা শাম্মীর স্বামী সিদ্দিক আবু জাফরকে বলেন, ‘শাম্মী বাসায় আছেন। আমরা তাকে পুলিশে দিয়ে দেবো।’ তখন আবু জাফর ভয় পেয়ে তাদের টাকা অফার করলে তিনি ৫০ লাখ টাকা দাবি করেন। কিন্তু এত টাকা বাসায় নেই বলে জানান তিনি। পরে ১০ লাখ টাকা নিয়ে তারা চলে আসেন। ওই টাকা তারা দুজন সমান ভাগে ভাগ করে নেন।

গত ২৬ জুলাই বিকেলে চাঁদার বাকি ৪০ লাখ টাকা আদায় করতে তারা ইব্রাহিম হোসেন মুন্না, সিয়াম, সাদমানকে ওই বাসায় পাঠান। পুলিশ তাকেও ওই বাসায় যেতে বলেন। তখন পুলিশের কথায় ওই বাসায় যান তিনি। এরপর পুলিশ এসে টাকাসহ হাতেনাতে তাদের গ্রেপ্তার করে।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রবিবার রিয়াদসহ চার আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় রিয়াদ স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হন। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও গুলশান থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোখলেছুর রহমান তার জবানবন্দি রেকর্ড করতে আবেদন করেন। পরে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সেফাতুল্লাহের আদালত তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

এ ছাড়া অন্য তিন আসামিকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করা হয়। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জিয়াদুর রহমানের আদালত তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। কারাগারে যাওয়া অন্যরা হলেন মো. ইব্রাহিম হোসেন, সাকাদাউন সিয়াম ও সাদমান সাদাব। তাদের সংগঠন থেকে আগেই বহিষ্কার করা হয়েছে।

টিকে/

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বিমানবন্দরে ২২ বাংলাদেশি শ্রমিককে আটকে দিল পুলিশ Nov 02, 2025
img
ফ্যাসিবাদী আমলে জীবাশ্ম জ্বালানির কথা বলেই টাকা হরিলুট করেছে : রিজভী Nov 02, 2025
ট্রাম্পের অভিযোগে নাইজেরিয়া ‘বিশেষ নজরদারির দেশ’ Nov 02, 2025
"আমার ভাই কবরে আসামিরা কেন এখন পর্যন্ত বাইরে " Nov 02, 2025
বিএনপিকে ফ্যাসিবাদ থেকে সরে আসার আহ্বান জানালেন সাদিক কায়েম Nov 02, 2025
পুলিশ কর্মকর্তাদের বদলি: আইন উপদেষ্টাকে বিএনপি–জামায়াতের ফোন Nov 02, 2025
img
নির্বাচন বানচালের পাঁয়তারা করে লাভ হবে না : জুয়েল Nov 02, 2025
img
হিরো আলম ও মমতাজের শূন্যস্থান পূরণ করছেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী : ছাত্রদল নেতা Nov 02, 2025
মীর কাসেমের ছেলে পেলেন জাতীয় সংসদের কার্যবিধি বই Nov 02, 2025
মওদুদীর নয়, আমরা মদিনার ইসলামের অনুসারী: সালাহউদ্দিন Nov 02, 2025
img
গণভোট পরে হলে এটি হবে জনগণের সঙ্গে রাজনৈতিক প্রতারণা : শিবির সভাপতি Nov 02, 2025
সেন্টমার্টিন খুলে দিলেও জাহাজ যাচ্ছে না Nov 02, 2025
'আমি কারো কাছে মাথা বিক্রি করি নাই, এজন্য সত্য কথা বলি Nov 02, 2025
img
৩১ দফা কর্মসূচি ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে শিবচরে বিএনপির জনসমাবেশ Nov 02, 2025
img
প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা ঘোষণার ভিডিও বানোয়াট ও ভিত্তিহীন : রিজভী Nov 02, 2025
img
একটি মহল নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে : মাহবুবুর রহমান Nov 02, 2025
img
'আলজেরিয়ার সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে চায় সরকার' Nov 02, 2025
img
তুরস্ক থেকে দেশে ফিরেছেন সাড়ে ৫ লাখ সিরীয় শরণার্থী Nov 02, 2025
img
শেষ মুহূর্তে রোনালদো ম্যাজিকে রক্ষা পেল আল নাসর Nov 02, 2025
img
গণভোট ইস্যুতে মুখোমুখি জামায়াত-বিএনপি Nov 02, 2025