ফ্লাইট এক্সপার্টের চেয়ারম্যান-সিইওকে নিয়ে বেরিয়ে আসল চাঞ্চল্যকর তথ্য

অনলাইনে উড়োজাহাজের টিকিট বুকিং ও হোটেল বুকিং সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ‘ফ্লাইট এক্সপার্ট’ নানা অফার দিয়ে শত শত ট্র্যাভেল এজেন্সির কাছ থেকে কয়েকশ কোটি টাকা হাতিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হিসেবে পরিচিত এম এ রশিদ শাহ সম্রাট ও তার ছেলে সিইও সালমান বিন রশিদ শাহ সায়েমের নেতৃত্বে এই টাকা হাতানো হয়। এরপর গত শুক্রবার রাত থেকে আত্মগোপনে চলে যান বাপ-ছেলে।

এদিকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় ১৭টি ট্র্যাভেলস এজেন্সির পক্ষে দায়ের করা মামলায় ফ্লাইট এক্সপার্টের তিন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের পর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। শনিবার রাতে গ্রেপ্তারের পর গতকাল রোববার তাদের কারাগারের পাঠানো হয়। তবে মামলার প্রধান দুই আসামি সম্রাট ও তার ছেলে সায়েম পলাতক রয়েছেন। ফ্লাইট এক্সপার্ট ছাড়াও তাদের মক্কা ট্যুরস অ্যান্ড ট্র্যাভেলস এবং এফইবিডি নামে ট্র্যাভেলস ব্যবসা রয়েছে। কাগজপত্রে ফ্লাইট এক্সপার্টের সঙ্গে সম্রাটের কোনো সম্পৃক্তা পাওয়া না গেলেও তিনি মক্কা গ্রুপের চেয়ারম্যান।

বিভিন্ন ট্র্যাভেল এজেন্সি ও এই খাতের ব্যবসায়ীরা অভিযোগ তুলেছেন, উড়োজাহাজের টিকিট বিক্রেতা এজেন্সি মালিকদের সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন অব ট্র্যাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) বর্তমান কমিটির শীর্ষ কয়েক নেতার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে ফ্লাইট এক্সপার্ট বেপরোয়া হয়ে ওঠে। প্রতিষ্ঠানটি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই উড়োজাহাজের টিকিট কম দামে বিক্রির নামে শত শত টাকা হাতিয়ে নেয়। পলাতক সম্রাট আটাবের উপদেষ্টা ছিলেন। তার ছেলে সায়েম আটাবের ওটিএ বিষয়ক (অনলাইন ট্র্যাভেল এজেন্সি) স্ট্যাডিং কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। তাদের সঙ্গে আটাব সভাপতি আবদুস সালাম আরেফ ও মহাসচিব আসফিয়া জান্নাত সালেহের ব্যবসায়িক ঘনিষ্ঠতা ছিল। তারা ওই দুজনকে নানা সুবিধা করে দেন। সম্রাট ও সায়েমের টিকিট কেলেঙ্কারির কথা জেনেও তারা তাদের সম্প্রতি বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকেও নিয়ে যান। ওই দুজন পালানোর পর এখন বিভিন্ন ট্র্যাভেল এজেন্সির মালিকরা মুখ খুলতে শুরু করেছেন।’

যদিও আটাব সভাপতি আবদুস সালাম আরেফ গতকাল দেশের এক গণমাধ্যমকে বলেন, তাদের সংগঠনে সাড়ে চার হাজার সদস্য। তাদের অনেকেই সংগঠনের মিটিংয়ে থাকেন। তা ছাড়া মক্কা গ্রুপের কর্ণধার সম্রাট এই খাতের পুরোনো ব্যবসায়ী, দুইবার হাবের মহাসচিব ছিলেন। সে হিসেবে তিনি আটাবের উপদেষ্টা ছিলেন। সায়েম অনলাইন বিশেষজ্ঞ এবং বিদেশ থেকে পড়ালেখা করে এসেছিলেন। এজন্য তার থেকে সংগঠনে ওটিএ বিষয়ে পরামর্শ নেওয়া হতো। সংগঠনের বাইরে তাদের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক ছিল না।

গ্রাহকের শত শত কোটি টাকা মেরে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়ে সংগঠন হিসেবে আটাবের কোনো দায় রয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই দুজনের পলায়নের বিষয় জানার পর রোববার তারা বৈঠক করেছেন। বৈঠকে সম্রাট ও তার ছেলের ট্র্যাভেল বিষয়ে তিনটি লাইসেন্সের সন্ধান মিলেছে। এগুলোর সদস্য পদ স্থগিত করে কারণ দর্শানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি এই লাইসেন্স বাতিলের জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করা হবে, তা ছাড়া প্রতিষ্ঠান তিনটি থেকে যাতে গ্রাহকের টাকা রি-ফান্ড করে তারা তুলতে না পারে সে বিষয়েও উদ্যোগ নেওয়া হবে।

আটাব সূত্র জানায়, ফ্লাইট এক্সপার্টের ব্যাংক গ্যারান্টি ছিল ৫০ কোটি টাকা। সেই টিকিট তারা বিক্রি করেছে। এ ছাড়া আউট সোর্সিং করে টিকিট রি-সেল বা ফের বিক্রি করে আরও ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকা হাতিয়েছে বলে তথ্য রয়েছে।
মতিঝিল থানার ওসি মেজবাহ উদ্দিন জানান, মামলা হওয়ার পর ফ্লাইট এক্সপার্টের তিন কর্মকর্তা মো. সাকিব হোসেন, সাইদ আহমেদ ও এ কে এম সাদাতকে গ্রেপ্তার করা হয়। অন্য দুই আসামি পলাতক রয়েছেন। তাদের অবস্থান শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, আসামিরা অনলাইনে ট্র্যাভেল এজেন্সি ব্যবসায়ী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে ক্লায়েন্টদের বিমান টিকিট, হোটেল বুকিং, প্যাকেজ ট্যুরস, হজ ও ওমরাহ প্রদানের ব্যবসা করে আসছেন। এরই ধারাবাহিকতায় হাজার হাজার এজেন্সি ও লক্ষাধিক গ্রাহক সেবার জন্য আর্থিক লেনদেন করে ব্যবসা পরিচালনা করছিল। গত ২ আগস্ট সকাল থেকে আসামিদের অনলাইন সার্ভিস বন্ধ হয়ে যায়। পরে অফিসে এসে গ্রাহকরা জানতে পারেন যে, আসামি ফ্লাইট এক্সপার্টের সালমান বিন রশিদ শাহ সায়েম ও মক্কা গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ রশিদ শাহ সম্রাট ৫ থেকে ৬ হাজার কোটি টাকা প্রতারণামূলকভাবে আত্মসাৎ করে বিদেশ পালিয়েছেন। ফ্লাইট এক্সপার্ট তাদের নিজস্ব আইএটিএর বাইরে কতিপয় ট্র্যাভেলস এজেন্সির আইএটিএ ব্যবহার করে টিকিট বিক্রয় করত।

টিকে/

Share this news on:

সর্বশেষ

img
গ্যাং লিডার থেকে বিএনপির প্রচারণায়, কে এই বাবলা? Nov 06, 2025
img
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রত্যয় জোহরান মামদানির Nov 06, 2025
img
ইয়ামালের দৃষ্টিনন্দন গোলের পরও জয়বঞ্চিত বার্সেলোনা Nov 06, 2025
img
ন্যাটোকে হারানো অসম্ভব, কেউ আক্রমণের সাহস করবে না: রুটে Nov 06, 2025
img
রাশিয়া-চীনকে নিয়ে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণে ট্রাম্পের নতুন পরিকল্পনা Nov 06, 2025
img
ঢাকা-১৭ আসনে স্বতন্ত্র এমপি প্রার্থী কাজী এনায়েত উল্লাহ Nov 06, 2025
img
বিএনপির মনোনয়ন বঞ্চিতদের এনসিপিতে স্বাগত জানালেন হাসনাত আবদুল্লাহ Nov 06, 2025
img
বরিশালে ৩১ কোটি টাকার অবৈধ জাল জব্দ Nov 06, 2025
img
ডিমের সঙ্গে আরো কী খেলে বাড়বে পুষ্টিগুণ Nov 06, 2025
img
যুক্তরাষ্ট্রে কার্গো বিমান বিধ্বস্ত, নিহত বেড়ে ১১ Nov 06, 2025
img
দুর্নীতি ও অনিয়মে তিন প্রতিষ্ঠানে দুদকের অভিযান Nov 06, 2025
img
কাজের চাপ কমাতে ১০ রোগীকে হত্যা, জার্মান নার্সের আমৃত্যু কারাদণ্ড Nov 06, 2025
img
আজ আংশিক মেঘলা থাকতে পারে ঢাকার আকাশ Nov 06, 2025
img
পরিমিত ক্যাফেইন উপকারী, অতিরিক্ত বিপজ্জনক Nov 06, 2025
img
হাসপাতালে ভর্তি জিতু কামাল Nov 06, 2025
img
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিসহ ১৮৪ অবৈধ অভিবাসী শ্রমিকদের আটক Nov 06, 2025
img
বাস্তববাদী ইশতেহার আর ভিন্নধর্মী প্রচারণায় ভোটারদের মন জয় করেছেন মামদানি Nov 06, 2025
img
মনোজ বাজপেয়ীর শুটিং দিনের কষ্টের গল্প Nov 06, 2025
img
সবাই এখন নিজেকে বিচারক মনে করে: সুনীল শেট্টি Nov 06, 2025
img
জনগণের মতো সেনাবাহিনীও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায় Nov 06, 2025