হলিউড সিনেমা বা সাইন্সফিকশন গল্পে প্রায়ই এলিয়েনের দেখা মেলে। তবে পৃথিবীর বাইরে সত্যিই প্রাণের অস্তিত্ব আছে কিনা, সে এক অজানা রহস্য। এই রহস্য সমাধানে বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
সম্প্রতি মহাবিশ্ব জুড়ে ভিনগ্রহের প্রাণীদের অস্তিত্ব খুঁজতে থাকা বিজ্ঞানীরা গভীর মহাকাশ থেকে ধেয়ে আসা একশটিরও বেশি জোরালো সংকেত ধরতে পেরেছেন। ফলে ভিনগ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব নিয়েও শুরু হয়েছে নতুন জল্পনা-কল্পনা, হয়ত নাম না জানা কোনো বুদ্ধিমান প্রাণীই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের ইচ্ছায় দূরতম কোনো গ্রহ থেকে অনবরত সংকেত পাঠিয়ে চলেছে।
বিস্ফোরণের ন্যায় জোরালো এই রেডিও সিগনালগুলো চায়নার তৈরি বিশালাকার ‘ফাস্ট’ টেলিস্কোপে ধরা পড়েছে। ফাস্টের ইঞ্জিনিয়ারদের দাবি, এটিই বিশ্বের সব থেকে সংবেদনশীল শ্রবণ যন্ত্র।
এ বিষয়ে গবেষকরা বলেন, শুধু ২৯ আগস্টেই মহাবিশ্বের একটি গভীর ও নির্দিষ্ট উৎস হতে কয়েক ডজনেরও বেশি বিস্ফোরণের শব্দ ধরা পড়ে। এই বিস্ফোরণগুলি ফাস্ট রেডিও ব্রাস্টস (এফআরবিস) থেকে তৈরি, যা অত্যন্ত শক্তিশালী রেডিও সিগনাল হিসেবে পৃথিবীতে প্রবেশ করেছে।
এইসব এফআরবিস অত্যন্ত জোরালো, কিন্তু এখনও এর কোনো সঠিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। কোত্থেকে শব্দগুলি আসছে বা কারা সেগুলি পাঠাচ্ছে, সে বিষয়ে বিজ্ঞানীদের নিশ্চিত কোনো ধারণা নেই। এনিয়ে বিজ্ঞানীরা অবশ্য বেশ কয়েকটি সম্ভাবনার কথা বলছেন। তাদের মতে, ব্ল্যাকহোলে কোনো তারকার পতনের মধ্য দিয়ে বিস্ফোরণের সৃষ্টি হয়ে থাকতে পারে।
তবে এমন হবার জোরোলো সম্ভাবনাও রয়েছে যে, কোন এক অচেনা প্রাণী নিজের অস্তিত্ব জানানোর উদ্দেশ্যে এই শব্দগুলি পাঠাচ্ছে। মানুষ যেমন অক্লান্তভাবে খুঁজে চলেছে অন্য প্রাণীর অস্তিত্ব, ঠিক তেমনি মহাকাশে অন্য কোনো বুদ্ধিমান প্রাণীর অস্তিত্ব থেকে থাকলে তারাও হয়ত খুঁজে চলেছে মানুষের অস্তিত্ব।
আশার কথা হলো, এখন পর্যন্ত এমন এফআরবিস খুব কম পাওয়া গেছে, যেগুলির পুনরাবৃত্তি ঘটে। কিন্তু ফাস্ট টেলিস্কোপে ধরা পড়া এই বিস্ফোরণগুলি অনেকটা একইরকম; ফলে এর উৎস সম্পর্কে জানার সম্ভাবনা জোরালো বলে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন। যেহেতু সংকেতগুলির পুনরাবৃত্তি হচ্ছে, তাই সেগুলো কোনো কৃত্রিম উৎস থেকে পাঠানো হয়েছে এমনটা হতেই পারে।
এ বিষয়ে টরোন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ.আর.বিস নিয়ে গবেষণারত রায়ান ম্যাককিভেন মন্তব্য করেন, “বার বার হতে থাকা এফআরবিস গবেষকদের কাছে খুবই মূল্যবান, কারণ এর ফলে কোন গ্যালাক্সিতে তাদের উৎপত্তি, তা নির্ধারণের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।”
শব্দের এই উৎসটি বিজ্ঞানীদের কাছে বেশ পুরনো, সেই ২০১২ সাল থেকে তারা এটিকে খোঁজার চেষ্টা করে চলেছেন। তবে বর্তমানে ফাস্ট টেলিস্কোপ চালু হওয়ার পর থেকে আরও গভীরভাবে উৎসটি নিরীক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
ফাস্ট টেলিস্কোপের সঙ্গে যুক্ত বিজ্ঞানীর দলটি বর্তমানে আগস্টের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু করে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে লিপিবদ্ধ তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এর উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চাইছেন। চায়নার রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমের তথ্য মতে, বিজ্ঞানীরা ফাস্ট টেলিস্কোপের প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে আরও অনেক এফআরবিস খুঁজে পাবেন বলে আশাবাদী।
ফলে সত্যিই যদি কোনো ভিনগ্রহবাসী নিজের অস্তিত্ব জানান দিয়ে সংকেত প্রেরণ করে থাকে, তা খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা জোরালো হচ্ছে। এছাড়াও টেলিস্কোপটি ব্যবহার করে মহাবিশ্বের প্রকৃতি সম্পর্কে আরও অনেক তথ্য জানা যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর আগে জানুয়ারিতে কানাডার সি.এইচ.এম.ই রেডিও টেলিস্কোপ ১৩টি বিস্ফোরণের ন্যায় শব্দ শনাক্ত করেছিল।
এইসব এফআরবিস মহাকাশে প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনাকে বহু মাত্রায় বাড়িয়ে দিয়েছে ধারণা করা হচ্ছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উত্তরোত্তর উন্নতির মধ্য দিয়ে একদিন হয়ত ভিনগ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব নিয়ে এই দুর্ভেদ্য রহস্য উন্মোচন সম্ভব হবে। সূত্র: দ্যা ইন্ডিপেন্ডেন্ট।
টাইমস/এনজে/জিএস