স্বাধীনতার পর থেকেই দেশে সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি : নুরুল কবির

স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে কখনোই সত্যিকারের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক নুরুল কবির। তিনি বলেন, ‘দেশের রাষ্ট্র ব্যবস্থা বরাবরই ক্ষমতাসীন দলের স্বার্থে পরিচালিত হয়েছে, যা জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটায়নি।’

সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনে সাক্ষাৎকারে নুরুল কবির এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের মূল লক্ষ্য ছিল একটি গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিতামূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা।

কিন্তু স্বাধীনতার পর সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি। বরং শাসকগোষ্ঠী রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেছে, বিরোধীদের দমন করেছে।’

তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে তিনটি প্রধান কাজের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সেগুলোর বাস্তব অগ্রগতি খুবই কম। এসব কাজের মধ্যে ছিল— সহস্রাধিক হত্যাকাণ্ডের বিচার, সাংবিধানিক ও অর্থনৈতিক সংস্কার এবং নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর।

নুরুল কবির বলেন, ‘বিচার প্রক্রিয়া অত্যন্ত ধীরগতিতে চলছে এবং অনেক ক্ষেত্রে বিচার না পাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আবার অনেকে যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তারা সরাসরি জড়িত নয় -এমন অভিযোগও আছে। এতে বিচার ব্যবস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।’

তিনি অভিযোগ করেন, সরকার মোট ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করলেও তার মধ্যে ৬টি কমিশনের সুপারিশ নিয়েই শুধু কাজ করা হচ্ছে।

বাকি ৫টি বাদ দেওয়া হয়েছে কোনো গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা ছাড়াই। বাস্তবে সংস্কার বাস্তবায়ন হয়েছে খুবই কম- মাত্র ১০ শতাংশের মতো।

নুরুল কবির বলেন, শেখ হাসিনার পতনের আগেই বাংলাদেশে একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত গঠনের আলোচনা শুরু হয়। এর পেছনের কারণ হলো—স্বাধীনতা যুদ্ধের পর যে রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে তা কখনোই মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আকাঙ্ক্ষা পূরণে সক্ষম হয়নি। এই রাষ্ট্র কখনোই একটি পরিপূর্ণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রূপ নেয়নি।

বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি একটি জনবিচ্ছিন্ন, কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থায় পরিণত হয়েছে। যে দল ক্ষমতায় এসেছে, তারা রাষ্ট্রকে নিপীড়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে -অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে অবৈধভাবে বিত্ত গড়ে তুলেছে এবং বিরোধী মতাবলম্বীদের দমন করেছে। এই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বহু বছর ধরে, বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের ১০–১২ বছর আগে থেকেই, বাংলাদেশে বিদ্যমান রাষ্ট্র ব্যবস্থার পরিবর্তে একটি নতুন বন্দোবস্তের দাবি উঠে আসছিল। সেই আলোচনায় বলা হচ্ছিল -আমাদের দরকার একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রিপাবলিক, যা এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি।

তিনি বলেন, বর্তমান রাষ্ট্র ব্যবস্থার নামে যা আছে সেটি প্রকৃতপক্ষে গণতান্ত্রিক নয়। তাই প্রয়োজন একটি ‘দ্বিতীয় রিপাবলিক’ যার ভিত্তি হবে একটি নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান। এই সংবিধানে বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে সম্মান জানিয়ে, যা রাখা প্রয়োজন তা রেখে, একটি জবাবদিহিতামূলক, প্রতিনিধিত্বমূলক রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এই নতুন ব্যবস্থাকেই বলা হচ্ছে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত।

পিএ/টিএ 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ওয়াশিংটনে পুলিশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিলেন ট্রাম্প Aug 12, 2025
img
ধ্রুপদী ও রকের ফিউশন নিয়ে সংগীতের মেলবন্ধন Aug 12, 2025
img
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের শুল্কবিরতি বাড়ল আরও ৯০ দিন Aug 12, 2025
img
বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে ৫টি সমঝোতা স্মারক সই Aug 12, 2025
img
৫ ধরনের করদাতাদের অনলাইনে রিটার্ন জমার বাধ্যবাধকতা থেকে ছাড় Aug 12, 2025
img
ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত বাংলাদেশ: প্রধান উপদেষ্টা Aug 12, 2025
img
স্বর্ণ কিনবেন? জেনে নিন আজকের বাজারদর Aug 12, 2025
img
আজ হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরছেন জামায়াত আমির Aug 12, 2025
img
ইলিয়াস আলীকে যারা গুম করেছে, আমরা তাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেব: ছাত্রদল সভাপতি Aug 12, 2025
img
রোনালদোর সঙ্গে বাগদানের ঘোষণা জর্জিনার Aug 12, 2025
img
ঢাকায় নেই বৃষ্টির আভাস, গরমে বাড়বে অস্বস্তি Aug 12, 2025
img
যুবসমাজ জাতির ক্রান্তিকালে সাহসী ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করে: প্রধান উপদেষ্টা Aug 12, 2025
img
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠক Aug 12, 2025
১০ মিনিটে গোটা বিশ্বের সারাদিনের সর্বশেষ আলোচিত সব খবর Aug 12, 2025
img
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় একদিনে প্রাণ গেল অন্তত ৬৯ জনের Aug 12, 2025
img
খুবি শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে অশালীন প্রস্তাবের অভিযোগ Aug 12, 2025
img
জনবল সংকটে দক্ষিণ কোরিয়ার সেনাবাহিনী ছোট হয়ে পড়েছে! Aug 12, 2025
img
খুলনায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা Aug 12, 2025
img
সামান্য চালের বিনিময়ে ভিয়েতনামের কৃষকদের জমিতে ট্রাম্পের গলফ ক্লাব নির্মাণ Aug 12, 2025
img
বিচ্ছেদের গুঞ্জনের মাঝে হাসিমুখে মুম্বাই ফিরলেন ঐশ্বরিয়া-অভিষেক Aug 12, 2025