এয়ারপোর্ট-গাজীপুর র‍্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্পে ধীরগতি

রাজধানীর বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত দ্রুত আসা-যাওয়ার জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে প্রথম বাস র‌্যাপিড ট্রানজিটের (বিআরটি) প্রকল্প। ২০১২ সালে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে। কিন্তু এখনো তা হয়নি। প্রকল্পের সময় বাড়ানো হয়েছে তিন দফা। দীর্ঘ সময় ধরে নির্মাণ কাজ চলার কারণে বেড়েছে যানজট, বেড়েছে জনদুর্ভোগ।

এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১২ সালে। ২ হাজার ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে। পরে প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। তখন প্রকল্পের ব্যয় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ২৬৪ কোটি ৮২ লাখ ১৪ টাকা। এরপর আরেক দফা প্রকল্প কাজের সময় বাড়ানো হয়। ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত নতুন সময় নির্ধারণের পর খরচ ধরা হয়েছে ৪ হাজার ২৬৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা।

ভোগান্তির শিকার স্থানীয়রা জানায়, এই প্রকল্পের কাজের আগে বিমানবন্দর থেকে আজমপুর পর্যন্ত যেতে যেখানে চার মিনিট সময় লাগতো। সেখানে এখন সময় লাগে ৩০ মিনিটের মতো। আবার টঙ্গী থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত যানজটে যেতে সময় লাগছে এক থেকে দেড় ঘণ্টা।

উত্তরায় ফ্লাইওভারের কাজ করা এক কর্মচারী বলেন, ‘এই  কাজ কবে শেষ হবে তা জানি না। তবে কাজ খুব ধীরগতিতে চলছে।’

আজমপুরের বাসিন্দা রায়হান উদ্দিন বলেন, ‘সড়কটিতে অনেকদিন ধরেই কাজ চলছে। ফলে প্রতিদিনই এই সড়কে যানজট লেগে থাকতে দেখি।’

বিআরটিসির বাসের কনডাক্টর ওয়াহেদ মিয়া বাংলাদেশ টাইমসকে বলেন, ‘আমরা প্রতিদিনই যানজটের মধ্যে পড়ি। এয়ারপোর্ট থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা ৩০ মিনিটের পথ। কিন্তু এখন আমাদের সময় লাগে দুই ঘণ্টা।  এই ভোগান্তির শেষ কবে?’

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের (ঢাকা জোন) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আব্দুস সবুর বাংলাদেশ টাইমসকে বলেন, ‘গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত বিআরটিএ লেন হচ্ছে। এটি চালু হলে ২০ মিনিটেই গাজীপুর থেকে বিমানবন্দরে পৌঁছানো যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিমানবন্দরে আমরা একটি আধুনিক আন্ডারপাস নির্মাণ করব। দেখা যায় অনেক মানুষ সেখানে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার হচ্ছে। যে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বিষয়টি মাথায় রেখেই আমাদের এই পরিকল্পনা।’

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্র জানায়, যানজট নিরসনে রাজধানীর সড়ক পরিবহন সেক্টরে স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যান (এসটিপি) সংশোধন করা হয়েছে। প্রথমে গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত এই রুটের দৈর্ঘ্য ছিল ২০ দশমিক ২০ কিলোমিটার। পরে এর দৈর্ঘ্য আরও ১০ কিলোমিটার বৃদ্ধি পায়।

গ্রেটার ঢাকা সাসটেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রকল্পের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. জিয়া উদ্দীন বাংলাদেশ টাইমসকে বলেন, সরকারের পাশাপাশি এই প্রকল্পে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), ফরাসি দাতা সংস্থা এএফডি ও গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটি (জিইএফ) অর্থায়ন করছে।

তিনি আরও বলেন, ২০১৯ সালের মে মাস পর্যন্ত প্রকল্পের মধ্যে সড়ক উন্নয়ন ও প্রশস্তকরণ, বিআরটি লেন নির্মাণ, ফ্লাইওভার ও বিআরটি স্টেশন নির্মাণ কাজের অগ্রগতি হয়েছে ২৩.২৫ ভাগ। আর সড়ক উন্নয়ন ও প্রশস্তকরণ, এলিভেটেড বিআরটি লেন নির্মাণ, টঙ্গী সেতু নির্মাণ ও বিআরটি স্টেশন নির্মাণ কাজে অগ্রগতি হয়েছে ৯.৭৫ ভাগ। এছাড়াও ফুটপাথ, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, কাঁচা বাজার ও পৌর অবকাঠামো নির্মাণ কাজে বাস্তবায়ন অগ্রগতি হয়েছে ৬৮.৮৫ ভাগ। এদিকে গাজীপুরে বিআরটি বাস ডিপো নির্মাণ কাজে বাস্তবায়ন অগ্রগতি হয়েছে ৯৯.৮৫ ভাগ।

প্রকল্পে যেসব সুবিধা থাকবে

যাত্রীদের সুবিধার্থে ই-টিকেটিং ব্যবস্থাসহ বাস স্টেশনে স্বয়ংক্রিয় টিকেট কাউন্টার এবং বাস আগমনের আগাম তথ্য প্রদর্শনের ব্যবস্থা থাকবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এটাই হবে ঢাকা মহানগরী ও গাজীপুর মহানগরীর মধ্যে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত প্রথম বাসভিত্তিক আরামদায়ক গণপরিবহন যা প্রতি ঘন্টায় উভয় দিকে প্রায় ২০ হাজার যাত্রী পরিবহন করতে পারবে।

প্রকল্পে আরও বলা হয়েছে, উত্তরা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত সাড়ে চার কিলোমিটার এলিভেটেড বিআরটি লেন থাকবে। বাকি ১৬ কিলোমিটার থাকবে সমতলে। নির্মাণ করা হবে ছয়টি ফ্লাইওভার। দুই প্রান্ত গাজীপুর ও বিমানবন্দরে থাকবে দুটি টার্মিনাল, আর মাঝের পথে হবে ২৫টি স্টেশন।

প্রতি দুই থেকে ৫ মিনিট পর পর স্টেশন থেকে বাস ছাড়বে। ১৮ মিটার দৈর্ঘ্যের ১০০টি আর্টিকুলেটেড বাস চলাচল করবে এ পথে। বাস ভাড়া আদায় হবে ইলেকট্রনিক স্মার্ট কার্ডে। আর এই প্রকল্পের কাজের দায়িত্বে রয়েছে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গেজহুবা গ্রুপ।

 

টাইমস/টিআর/এসআই

Share this news on: