রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে কক্সবাজারে তিন দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে পথ খুঁজছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও টেকসই সমাধানে কক্সবাজারে তিন দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু হয়েছে। বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য তহবিল বাড়াতে এবং তাদের মিয়ানমারের রাখাইনে ফেরত পাঠাতে আন্তর্জাতিক প্রয়াস জোরদার করতে এ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

রোববার (২৪ আগস্ট) পর্যটনস্পট ইনানীর হোটেল বে-ওয়াচে তিন দিনের সম্মেলন শুরু হয়েছে।

এদিকে সোমবার (২৫ আগস্ট) কক্সবাজারে ‘অংশীজন সংলাপ; রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে আলোচনার জন্য প্রাপ্ত বার্তা’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এতে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেবেন। এ ছাড়া ১০টি দেশের রাষ্ট্রদূত ও ৪০টি দেশের প্রতিনিধি অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।

সম্মেলনে বাংলাদেশের সরকার প্রধান ছাড়াও কয়েকটি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, রোহিঙ্গাবিষয়ক কয়েকজন আন্তর্জাতিক দূত, বিদেশে বাংলাদেশ মিশন এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইমরান হোসাইন সজীব বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, রোহিঙ্গা আগমনের আট বছর পূর্তির দিন ২৫ আগস্ট কক্সবাজারে উখিয়া উপজেলার ইনানী এলাকায় হোটেল বে-ওয়াচে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
জানা গেছে, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিধনযজ্ঞ থেকে প্রাণ বাঁচাতে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গাদের ঢল শুরু হয় বাংলাদেশে। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের প্রায় আট বছর পেরিয়ে গেছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে এখন বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা নাগরিকের সংখ্যা ১৪ লাখের বেশি।

সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারে আয়োজিত সম্মেলনটি মূলত তিন দিনের। ২৪, ২৫ ও ২৬ আগস্ট এ তিন দিন আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং শরণার্থী শিবির প্রদর্শনী থাকবে এ আয়োজনে। এর মধ্যে ২৪ ও ২৫ আগস্ট পাঁচটি কর্ম অধিবেশন থাকছে। আলোচনার বিষয় রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা এবং তাদের রাখাইনে প্রত্যাবাসন শুরু করা। ২৬ আগস্ট রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করবেন অতিথিরা।

অন্তর্বর্তী সরকার কক্সবাজারের আলোচনার মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে পুনরায় যুক্ত করতে চাইছে। এর পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্য এবং আসিয়ানের মতো জোটের কাছ থেকে রাজনৈতিক ও আর্থিক সহায়তা সংগ্রহে মনোযোগ দিয়েছে সরকার।

কক্সবাজার ও নিউইয়র্কের পর আগামী ডিসেম্বরে কাতারের রাজধানী দোহায় রোহিঙ্গাবিষয়ক উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনের প্রস্তুতি চলছে। কক্সবাজারের আলোচনার ভিত্তিতে নিউইয়র্ক সম্মেলনের অবস্থানপত্র প্রণয়ন করা হবে, যা পরে দোহা সম্মেলনে আলোচিত হতে পারে।

এর আগে ঢাকায় এক ব্রিফিংয়ে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও রোহিঙ্গা বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গাবিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন জাতিসংঘের উদ্যোগে ৩০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কক্সবাজারের সম্মেলনটি জাতিসংঘের একটি বৃহত্তর সম্মেলনের প্রস্তুতির অংশবিশেষ। এ সম্মেলনটি রোহিঙ্গাদের এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের জন্য এ সমস্যার স্থায়ী ও প্রকৃত সমাধান খুঁজে বের করার পথনির্দেশিকা দেওয়ার একটি বড় সুযোগ হিসেবে দেখছে বাংলাদেশ।

তিনি আরও বলেন, একসময় রোহিঙ্গা ইস্যুটি আন্তর্জাতিক আলোচনার অ্যাজেন্ডা থেকে প্রায় বাদ পড়ে যাচ্ছিল। এ পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা গত বছর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গিয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজনের জন্য সকল সদস্য রাষ্ট্রকে আহ্বান জানিয়েছিলেন। এ আহ্বানে তাৎক্ষণিকভাবে এবং সর্বসম্মতিক্রমে সাড়া পাওয়া যায় এবং জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ সম্মেলন আহ্বানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। বিশ্বের ১০৬টি দেশ এ সম্মেলনকে স্পন্সর করেছে। এখন যথেষ্ট পরিমাণ আন্তর্জাতিক সমর্থন রয়েছে।

আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ফাঁকে অনুষ্ঠিত হবে রোহিঙ্গাবিষয়ক উচ্চপর্যায়ের সম্মেলন। আর কাতারের দোহায় ৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে রোহিঙ্গা বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন।

এদিকে কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক সম্মেলনকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ২৪ ও ২৬ আগস্ট কক্সবাজার সফর করবেন। এ সময় তার সঙ্গে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদলও থাকবেন। সফরকালে জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।

জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, অস্ত্র আইন ১৮৭৮ এর ধারা ১৭ (ক)(১) অনুযায়ী কক্সবাজার জেলার সকল বৈধ আগ্নেয়াস্ত্রধারীদের নিজ নিজ থানায় অস্ত্র জমা দিতে হবে। নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাধারণ জনগণকে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সহযোগিতা করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

এফপি/ টিএ 

Share this news on:

সর্বশেষ

img

প্লট বরাদ্দে জালিয়াতি

হাসিনা-রেহানা-টিউলিপের রায় পড়া শুরু Dec 01, 2025
img
দেশের রাজনীতি এক অদ্ভুত দ্বিধাবিভক্ত বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে : জিল্লুর রহমান Dec 01, 2025
img
সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকদের কর্মবিরতি শুরু আজ Dec 01, 2025
img
বিএনপিতে যোগ দিয়ে গর্বিত রেজা কিবরিয়া Dec 01, 2025
img
দীপিকা নতুনভাবে রহস্যময় ভূমিকায় হরর কমেডি ইউনিভার্সে Dec 01, 2025
img
ট্রাভেল পাস ছাড়া টিকিট বিক্রির দায়ে সেন্ট মার্টিনগামী জাহাজকে জরিমানা Dec 01, 2025
img
আদনান সামির অবিশ্বাস্য ওজন কমানোর গল্প Dec 01, 2025
img
বিশ্বকাপে অংশ নিতে মালদ্বীপ গেল বাংলাদেশ Dec 01, 2025
img
সহকারী সচিব পদে ২২ কর্মকর্তার পদোন্নতি Dec 01, 2025
img
কোকা-কোলা বাংলাদেশের নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঈন উল্লাহ Dec 01, 2025
img
চিকিৎসকের ডাকে সাড়া দিচ্ছেন খালেদা জিয়া Dec 01, 2025
img
খালেদা জিয়ার জন্য সারা দেশ কাঁদছে : সরওয়ার আলমগীর Dec 01, 2025
img
'পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপে প্রবাসী নিবন্ধন ১ লাখ ১৫ হাজার Dec 01, 2025
img
যুক্তরাষ্ট্রকে ভেনেজুয়েলার সতর্কবার্তা Dec 01, 2025
img
অবসর ভেঙে টেস্টে ফেরার গুঞ্জনে কোহলির মন্তব্য Dec 01, 2025
img
তিন মাসের মধ্যেই দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে পারবে অন্তর্বর্তী সরকার: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা Dec 01, 2025
img
স্কুলে ভর্তির ডিজিটাল লটারি ১১ ডিসেম্বর Dec 01, 2025
img
খুব বেশি প্রত্যাশা করিনি, তবে রোমাঞ্চিত ছিলাম : নাঈম Dec 01, 2025
img
প্রেম সবসময় চাঁদ-ফুল-তারার উপর নির্ভর করে না: মিঠু চক্রবর্তী Dec 01, 2025
img
যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা নিয়ে মুখ খুললেন খামেনি Dec 01, 2025