চলতি বছরেই কিম জং উনের সঙ্গে বৈঠক করতে চান ট্রাম্প

চলতি বছরেই উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে বৈঠক করতে চান বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে আরও বাণিজ্য আলোচনায়ও রাজি আছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। সোমবার ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট লি জে মিউংকে প্রথমবারের মতো সোমবার হোয়াইট হাউসে স্বাগত জানিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, আমি ভবিষ্যতে উপযুক্ত সময়ে কিম জং উনের সঙ্গে বৈঠক করার অপেক্ষায় আছি। আমি তার সঙ্গে চলতি বছরে বৈঠক করতে চাই।

গত জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করে দক্ষিণ কোরিয়া। এই চুক্তির ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে কঠোর মার্কিন শুল্ক থেকে রক্ষা পায় দক্ষিণ কোরিয়ার রপ্তানি পণ্য। তা সত্ত্বেও এ দুই দেশ বর্তমানে পারমাণবিক শক্তি, সামরিক ব্যয় এবং যুক্তরাষ্ট্রে ৩৫০ বিলিয়ন ডলারের দক্ষিণ কোরীয় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতির মতো বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের পর যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কর্মকর্তা এবং কোরিয়া ও মার্কিন বিভিন্ন কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের (সিইও) একটি ব্যবসায়িক ফোরামে অংশ নেন লি জে মিউং। প্রেসিডেন্ট লির এই সফরে দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় বিমান সংস্থা কোরিয়ান এয়ার তাদের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিমান কেনার অর্ডার দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিমান প্রস্তুতকারক কোম্পানি বোয়িংয়ের কাছ থেকে ১০৩টি বিমান কেনার ঘোষণা দিয়েছে কোরিয়ান এয়ার।

ট্রাম্পের বৈঠকের মন্তব্যের বিষয়ে উত্তর কোরিয়া তাৎক্ষণিকভাবে কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স। পরে উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র-দক্ষিণ কোরিয়ার যৌথ সামরিক মহড়া প্রমাণ করছে, ওয়াশিংটনের উদ্দেশ্য কোরীয় উপদ্বীপ দখল এবং অঞ্চলটির দেশগুলোকে লক্ষ্যবস্তু বানানো।

গত জানুয়ারিতে ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক মেরামতের আহ্বান জানিয়ে আসছেন। তবে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন ট্রাম্পের আহ্বান উপেক্ষা করছেন। উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সরাসরি কূটনীতি চালুর বিষয়ে ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত নিজের প্রথম মেয়াদে উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে এসব প্রচেষ্টা সত্ত্বেও উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধের বিষয়ে কোনও চুক্তিতে পৌঁছাতে পারেননি ট্রাম্প।

গত ফেব্রুয়ারিতে ওভাল অফিসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও মে মাসে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার সফরে যে নাটকীয় পরিস্থিতি দেখা গিয়েছিল, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি তা এড়িয়ে গেছেন।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় তিনি গলফ নিয়ে কথা বলেন এবং হোয়াইট হাউসে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের সাজসজ্জা ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগের প্রশংসা করেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে লি বলেন, তিনি বৈঠকের প্রস্তুতি হিসেবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ১৯৮৭ সালের আত্মজীবনী ‌‘ট্রাম্প: দ্য আর্ট অব দ্য ডিল’ পড়েছেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘‘আমি আশা করছি, আপনি বিশ্বের একমাত্র বিভাজিত কোরীয় উপদ্বীপে শান্তি আনতে পারবেন; যাতে আপনি কিম জং উনের সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন। আপনি উত্তর কোরিয়ায় ট্রাম্প ওয়ার্ল্ড (আবাসন ব্যবস্থা) গড়ে তুলতে পারবেন, যেখানে আমি গলফ খেলতে পারব। এর মধ্য দিয়ে আপনি সত্যিই বিশ্বের ইতিহাসে শান্তির দূত হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারবেন।’’

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় বলেছে, ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে জাহাজ নির্মাণ ও তাদের দু’জনের ওপর হওয়া হত্যাচেষ্টার প্রসঙ্গ নিয়েও আলোচনা করেন লি। এ সময় তিনি ট্রাম্পকে এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশনের (এপিইসি) শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ জানান। এই সম্মেলন আগামী অক্টোবরে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এ ছাড়া ওই সফরে ট্রাম্পকে কিমের সঙ্গে বৈঠকের চেষ্টা করারও প্রস্তাব দেন লি।

ওয়াশিংটনের সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে লি বলেন, উত্তর কোরিয়াকে নিবৃত্ত করার জন্য বিশাল নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলেও তারা পারমাণবিক অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করে চলেছে।

তিনি বলেন, বর্তমানে বছরে ১০ থেকে ২০টি পারমাণবিক ওয়ারহেড তৈরির সক্ষমতা রয়েছে উত্তর কোরিয়ার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছাতে পারে এমন বৃহত্তম ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলোতে সেসব ওয়ারহেড বহন করার জন্য কেবল একটি রিএন্ট্রি যান নিখুঁতভাবে তৈরি করতে হবে তাদের।

সূত্র: রয়টার্স।

এমকে/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

সাত মাসে ২২ প্রাণহানি! সীমান্তে নিরাপত্তার প্রশ্ন চরমে Aug 26, 2025
img
ডিএমপির অভিযানে ২৪ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড Aug 26, 2025
ওআইসি সম্মেলনে গাজা ইস্যুতে ইরানের চার দফা প্রস্তাব Aug 26, 2025
যুক্তরাজ্যে তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকে খন্দকার মোশাররফ Aug 26, 2025
সরগরম ভোটের মাঠ, তৃণমূলে বইছে ভোটের হাওয়া Aug 26, 2025
img
৪ বার ফোন করলেন ট্রাম্প, সাড়া দেননি নরেন্দ্র মোদি! Aug 26, 2025
img
বিপিএল নিয়ে তদন্ত কমিটির প্রাথমিক প্রতিবেদন হাতে পেয়েছেন বুলবুল Aug 26, 2025
img
ইহুদিবাদী শাসনব্যবস্থা, বিশ্বের সবচেয়ে ঘৃণ্য শাসনব্যবস্থা: খামেনি Aug 26, 2025
img
বিমান বাংলাদেশের চেয়ারম্যান হলেন উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন Aug 26, 2025
img
ই-স্পোর্টস এখন শুধু বিনোদন নয়, একটি সম্ভাবনাময় পেশা: ক্রীড়া উপদেষ্টা Aug 26, 2025
img
পরিচারিকার বিরুদ্ধে চুরি ও নির্যাতনের অভিযোগ শ্রীময়ী-কাঞ্চন জুটির Aug 26, 2025
img
চীন সফরের উদ্দেশ্যে শাহজালালে এনসিপির আট নেতা Aug 26, 2025
img
নারায়ণগঞ্জে হাসিনা ও কাদেরসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল Aug 26, 2025
img
বাংলাদেশ সীমান্তের পরিস্থিতি বদলে গেছে, ঘনিষ্ঠ নজরদারি চলছে: মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী Aug 26, 2025
img
সংস্কার বাস্তবায়নের বিষয়টি নিশ্চিত হলে নির্বাচন আগামীকালও হতে পারে: হাসনাত আবদুল্লাহ Aug 26, 2025
img
নিখিলের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল, তবে সেটা আইনিভাবে নয় : নুসরাত Aug 26, 2025
img
দলীয় পদ স্থগিতের বিষয়ে মুখ খুললেন ফজলুর রহমান Aug 26, 2025
img
শিক্ষার্থীদের হাতে গোলাপ দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করলেন সাদী Aug 26, 2025
img
কালচারাল ফ্যাসিস্টরাই আমাদের ফেস্টুন বিকৃত করেছে: সাদিক কায়েম Aug 26, 2025
img
অমিতাভের নাতি নয়, শাহরুখ কন্যার পার্টনার এখন সালমানের ভাতিজা! Aug 26, 2025