উচ্চ রক্তচাপ যেভাবে হৃদপিণ্ডকে ক্ষতিগ্রস্ত করে

হৃদপিণ্ড ও উচ্চ রক্তচাপের মধ্যকার সম্পর্ক বুঝতে হলে সব থেকে ভালো উদাহরণ হচ্ছে- এটি অনেকটা কেন্দ্রীয় পানির পাম্প ও তা সরবরাহের ব্যবস্থার অনুরূপ। যখন সরবরাহের রাস্তায় বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়, তখন কেন্দ্রীয় পাম্প ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং একইভাবে অনুরূপ কারণে মানব দেহের কেন্দ্রীয় রক্ত পাম্পকারী হৃদপিণ্ডও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

হৃদপিণ্ডের স্বাভাবিক আকার বদ্ধ মুষ্টির মতো। বয়স ও লিঙ্গের উপর ভিত্তি করে হৃদপিণ্ড প্রাচীরের ঘনত্ব ৬ মি.মি. থেকে ১১ মি.মি. পর্যন্ত হয়ে থাকে। যখন হৃদপিণ্ড প্রাচীরের এই পুরুত্ব বাঁ পাশে বেশি হয় তখন তাকে মেডিকেল সাইন্সের ভাষায় লেফট ভ্যান্ট্রিকুলার হাইপারট্রফি এবং ডান দিকে বেশি হলে তাকে রাইট ভ্যান্ট্রিকুলার হাইপারট্রফি বলা হয়।

দেহের আকার ও লিঙ্গ ভেদে হৃদপিণ্ডের স্বাভাবিক ওজন ২০০ থেকে ৪০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়। যখন এর ওজন স্বাভাবিকের থেকে বেড়ে যায় তখন একে ইনক্রিজড লেফ্ট ভেন্ট্রিক্যাল মাস বলা হয়।

যখন রক্তচাপ ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে বর্ধিত থাকে, তখন হৃদপিণ্ডের পেশীতে এলভিএইচ বা ইনক্রিজড লেফট ভেন্ট্রিক্যাল মাস দেখা দিতে শুরু করে। উচ্চ রক্তচাপের কারণে হৃদপিণ্ডের এই গঠনগত ও আধিভৌতিক পরিবর্তনকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ‘হাইপারটেনসিভ হার্ট ডিজিজ’ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়।

হৃদপিণ্ডের পেশীর উপর অতিরিক্ত চাপের ফলেই এলিভিএইচ সৃষ্টি হয়। অতিরিক্ত চাপের ফলে কোষগুলির আকার বড় হয়ে যায় এবং তা শক্ত হয়ে যায়। ফলাফল স্বরূপ, হৃদপিণ্ডের অভ্যন্তরীণ নিম্ন রক্তচাপের প্রকৃতি বদলে গিয়ে উচ্চ রক্তচাপের সৃষ্টি হয়। সময় মতো সঠিক চিকিৎসা করা না হলে উচ্চ রক্তচাপ থেকে এলভিএইচ, হার্ট ফেইলুর, অস্বাভাবিক হৃদ স্পন্দন, বিভিন্ন হৃদরোগ, এমনকি হঠাৎ মৃত্যুও হতে পারে।

উচ্চ রক্তচাপের কারণে আর্টিরিয়াল ব্লকেজ বা ধমনিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। স্বাভাবিক রক্তের প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে উচ্চ রক্তচাপের কারণে অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি ২.৫ গুণ বৃদ্ধি পায়। এ কারণে দিন দিন করোনারি আর্টারি ডিজিজের (মৃদু হার্ট অ্যাটাক) ঘটনা বেড়ে যাচ্ছে এবং পরবর্তীতে এটি অনিয়মিত হৃদ স্পন্দনের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

সুসংবাদ হলো এই রোগটি প্রতিরোধ যোগ্য। ওষুধসহ বা ওষুধ ছাড়া চিকিৎসার মধ্য দিয়ে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। তবে, আপনাকে অবশ্যই উপলব্ধি করতে হবে যে- কখনোই উচ্চ রক্তচাপ পুরোপুরি নিরাময় যোগ্য নয়। একে নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রায় নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

সুনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ আপনার হৃদযন্ত্রের পরিবর্তনগুলি থামিয়ে দেবে বা পূর্বাবস্থায় নিয়ে আসতে সহায়ক হবে। ফলে স্ট্রোক, হার্ট ফেইলুর, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ও অকাল মৃত্যুর পরিমাণ কমিয়ে আনা সম্ভব। তথ্যসূত্র: দ্যা ইন্ডিয়ান টাইমস

 

টাইমস/এনজে/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ

img
রোগী সেজে চেম্বারে ঢুকে অভিনেত্রী তানিয়ার বাবাকে গুলি Jul 06, 2025
img
যুদ্ধবিরতি আলোচনা নিয়ে ফের কাতারে প্রতিনিধিদল পাঠাবেন নেতানিয়াহু Jul 06, 2025
img
যুদ্ধবিরতি আলোচনা নিয়ে কাতারে প্রতিনিধিদল পাঠাবেন নেতানিয়াহু Jul 06, 2025
পাওয়ারফুল চারটি আমল Jul 06, 2025
১০ জনের দলে যৌন হয়রানি'-এনসিপিকে ইঙ্গিত করে রুমিন ফারহানার তীর্যক মন্তব্য Jul 06, 2025
img
স্বপ্নপূরণে শ্রীলঙ্কার কোকোনাট হিলে শবনম ফারিয়া Jul 06, 2025
জামানত হারানোর শঙ্কায় থাকা দলগুলোই পিআর পদ্ধতির নির্বাচন চায়: সালাহউদ্দিন আহমেদ Jul 06, 2025
img
হাসিনার পতনের পেছনে কাজ করেছে মার্কিন ‘ডিপ স্টেট’ পলিসি: গোলাম মাওলা রনি Jul 06, 2025
img
পবিত্র আশুরা উপলক্ষে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ Jul 06, 2025
img
বাহরাইনের আন্ডার সেক্রেটারির সঙ্গে বাংলাদেশি দূতের সৌজন্য সাক্ষাৎ Jul 06, 2025
img
পরীক্ষা শেষের ৭ দিনের মধ্যে হাজিরাপত্র জমা দিতে নির্দেশ দিল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় Jul 06, 2025
img
রাজধানীর খিলক্ষেতে কাভার্ডভ্যানের চাপায় প্রাণ গেল ২ পরিচ্ছন্নতা কর্মীর Jul 06, 2025
img
দীর্ঘদিন পর বাংলাদেশের গানে কণ্ঠ দিলেন হৈমন্তী শুক্লা! Jul 06, 2025
img
ক্লাব বিশ্বকাপ সেমির টিকিটের অবিশ্বাস্য মূল্যছাড়, ৪৭৩ ডলার থেকে নেমে ১৩ ডলার Jul 06, 2025
img
বল হাতে চমক, শামীম পাটোয়ারীর প্রশংসায় মিরাজ Jul 06, 2025
img
রাজনীতিতে ইলন মাস্কের আত্মপ্রকাশ, দলের নাম ‘আমেরিকা পার্টি’ Jul 06, 2025
img
লঙ্কানদের হারিয়ে র‌্যাঙ্কিংয়ে এক ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ Jul 06, 2025
img
মেসির জোড়া গোলে এমএলএস-এ বড় জয় মায়ামির Jul 06, 2025
img
টেক্সাসে বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫০, উদ্ধার ৮৫০ Jul 06, 2025
img
‘কৃষ ৪’-এ ৩টি চরিত্রে দেখা যাবে হৃতিককে! Jul 06, 2025