দেশে তখনো মোবাইল ফোনের যুগ আসেনি, পাড়ায় কারও বাড়িতে ল্যান্ডলাইন থাকলেই তা ছিল বাড়তি গর্বের বিষয়। কিন্তু ফোনের অপব্যবহার ঠেকাতে অনেক সময় ডায়ালে তালা ঝুলিয়ে রাখা হতো। সেই তালা অক্ষত রেখেই কল করার কৌশলই ছিল তখনকার শৈশবের প্রথম ইনোভেশন।
আজ (সোমবার) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে রবি আজিয়াটা পিএলসির ৫জি সেবা চালু উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে অতীতের এমন অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ উল বারী।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সময় জিরোজির যুগও আসেনি। কারও বাড়িতে ল্যান্ডলাইন থাকলেই পাড়ায় তাকে আলাদা সমীহ করা হতো। বিপদে-আপদে সবাই ওই বাড়ির ফোন ব্যবহার করত। তবে ফোনে তালা দিয়ে রাখা হতো, যাতে বেশি ব্যবহার না হয়। তখনই আমাদের মতো টেক-সেভিদের কাজ ছিল তালাবদ্ধ টেলিফোন চালানোর ফাঁকফোকর খুঁজে বের করা। সেটাই ছিল আমার প্রথম উদ্ভাবন।’
তিনি আরও বলেন, ১৯৮৫ সালের দিকে শহরের রাস্তায় কয়েনবক্স ফোন চালু হয়েছিল। ‘১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড (বিটিএল) ওয়ানজি চালু করে। সেখান থেকে আমাদের যাত্রা শুরু হয়। এরপর টুজি, ২০১২ সালে থ্রিজি আর ২০১৮ সালে ফোরজি চালু হয়। আজকে আমরা ৫জির দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছি।’
বিটিআরসি চেয়ারম্যান জানান, বর্তমানে দেশে মোট সক্রিয় সংযোগের মধ্যে ৬২ দশমিক ৭ শতাংশ ব্যবহারকারী স্মার্টফোন ব্যবহার করছেন। তবে এখনো প্রায় ৩৮ শতাংশ ফিচার ফোনে সীমাবদ্ধ। এই ডিজিটাল বিভাজন কমাতে হবে। নইলে প্রযুক্তি আসলেও তা সবার জীবনে সমানভাবে কাজে লাগবে না।
তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি বিটিআরসি নতুন কোয়ালিটি অব সার্ভিস গাইডলাইন তৈরি করেছে। আগে এটি শুধু মোবাইল অপারেটরের জন্য ছিল, এখন এতে আইএসপি, এনটিএনসহ সব অপারেটরকে যুক্ত করা হয়েছে।
৫জি বাস্তবায়নে বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে এমদাদ উল বারী বলেন, ‘আমাদের হিসাব অনুযায়ী অন্তত পাঁচ লাখ কিলোমিটার ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক লাগবে। বর্তমানে যে নেটওয়ার্ক আছে, সেটিকে শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে আরও কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে হবে। আজ ৫জি এসেছে, কাল ১০জি আসবে। কিন্তু প্রযুক্তির উদ্দেশ্য কেবল গতি বাড়ানো নয়। এর মূল লক্ষ্য মানুষের জীবনের সমস্যা সমাধান করা-শিক্ষা, স্বাস্থ্য বা স্মার্ট ফার্মিংয়ে প্রযুক্তিকে কাজে লাগাতে হবে।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। আরও উপস্থিত ছিলেন সরকারের আইসিটি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী, বিটিআরসি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ উল বারী, কমিশনার মাহমুদ হাসান ও মহাপরিচালক আমিনুল হক, রবির ভারপ্রাপ্ত সিইও এম. রিয়াজ রশিদ, রবির চিফ কমার্সিয়াল অফিসার শিহাব আহমেদ ও কোম্পানি সচিব শাহেদুল আলমসহ ঊর্ধতন কর্মকর্তারা।
ইএ/এসএন