দেশের রাজনীতি ও অর্থনীতি নিয়ে মানুষের হতাশা অনুভব করা যায় : জিল্লুর রহমান

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও উপস্থাপক জিল্লুর রহমান বলেছেন, বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশের রাজনীতি ও অর্থনীতি নিয়ে মানুষ যে হতাশার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তা কেবল কিছু সংখ্যার বিষয় নয় বরং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অনুভব করা যায়। দারিদ্র্য যে বেড়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। শহরের রাস্তায় হাঁটলে বোঝা যায় কত মানুষ কর্মহীন। কত দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেছে।

কত পরিবার নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনতে হিমশিম খাচ্ছে। মহামারি, বৈশ্বিক মন্দা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বহু প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম গুটিয়ে নিয়েছে। দেশি-বিদেশি নতুন বিনিয়োগ কার্যত নেই। অর্থনীতিতে নিম্নগতি এতটাই প্রকট যে, মধ্যবিত্তের বড় একটা অংশ দ্রুত নিম্ন মধ্যবিত্তে নেমে গেছে। আর নিম্ন মধ্যবিত্ত সরাসরি দরিদ্র শ্রেণিতে নেমে গেছে।

সম্প্রতি নিজের ইউটিউব চ্যানেলের এক ভিডিও বার্তায় তিনি এসব কথা বলেন।

জিল্লুর রহমান বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর মানুষ ভেবেছিল নতুন এক বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি হবে। অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য নানা পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে বিনিয়োগ এখনো বাড়েনি। অথচ বিনিয়োগ ছাড়া কোনো অর্থনীতি বড় হতে পারে না। বিনিয়োগ না হলে নতুন শিল্প গড়ে উঠবে না। কর্মসংস্থান তৈরি হবে না এবং কর্মসংস্থান না হলে দারিদ্র কমবে না। বরং দারিদ্র আরো গভীর হতে থাকবে।

তিনি বলেন, ‘সরকারের কিছু প্রাথমিক উদ্যোগ যেমন রাজস্ব খাত সংস্কারের প্রচেষ্টা, বাংলাদেশ ব্যাংকের অটোমেশন বা প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের চেষ্টা আশা সঞ্চার করেছিল। কিন্তু সেগুলো এখনো পরিণত ফল দেয়নি। যে টাস্কফোর্স অর্থনৈতিক কৌশল পুনঃনির্ধারণের জন্য গঠিত হয়েছিল তারা সুপারিশ করেছিল বিনিয়োগ কর্মসংস্থান শিল্পনীতি সবকিছুর কাঠামোগত পরিবর্তনের জন্যে। অন্তর্বর্তী সরকার সেই সুপারিশ গ্রহণ করেছে কিন্তু বাস্তবায়নের গতি খুবই ধীর। তাই অর্থনীতিতে ইতিবাচক বার্তা দেওয়ার মতো পরিবর্তন দৃশ্যমান হয়নি।

দারিদ্র বৃদ্ধির পেছনে মূল্যস্ফীতি সবচেয়ে বড় কারণ। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম যখন প্রতিদিন বাড়ে তখন গরিব মানুষের আয়ের মান দ্রুত কমে যায়। চাল, ডাল, ভোজ্য তেল, সবজি এসবের বাজার এখনো অস্থির। শহরের বাজারে গিয়ে শ্রমজীবী মানুষ যখন দেখে তার দৈনিক আয় দিয়ে আগের মতো খাবার জুটছে না তখন দারিদ্র কেবল পরিসংখ্যান নয় বরং বাস্তব কষ্টে পরিণত হয়।’

জিল্লুর আরো বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনক হলো এই মানুষদের কার্যকর সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি নেই। সরকারের বিভিন্ন সাহায্য কর্মসূচি থাকলেও তা রাজনৈতিক প্রভাব আর দুর্নীতির কারণে প্রকৃত গরিব মানুষের কাছে পৌঁছায় না। এতে তাদের ক্ষোভ বাড়ছে, হতাশাও বাড়ছে। গ্রামীণ অর্থনীতি কিছুটা ভালো টিকে আছে। কৃষি ক্ষেত্রে বড় ধরনের ধস নামেনি। কৃষক উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তারা আর নায্য মূল্য পাচ্ছে না। কৃষিপণ্যের বাজার এখনো প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও সিন্ডিকেটের দখলে।

রাজনৈতিক ক্ষমতার সঙ্গে যুক্ত এই চক্রগুলো কৃষকের ঘামে অর্জিত ফসলের মুনাফা কুক্ষিগত করছে। অথচ সরকার যদি সত্যি বাজার সংস্কার করতে চাইতো তবে এদের দমন করতে হতো। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সাহস দেখানো হয়নি। অর্থনীতির এই কঠিন বাস্তবতা যেমন হতাশার জন্ম দিচ্ছে তেমনি রাজনৈতিক চর্চার অবস্থা আরো ভয়াবহ সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে।’

কেএন/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
সরকার গঠন তো দূর, জামায়াত ১০ সিটও পাবে কি না সন্দেহ : শহীদ খান Sep 02, 2025
img
হাসিনার ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠায় সব ধরনের সহযোগিতা করেছে জাপা: রিজভী Sep 02, 2025
img
রেল অবরোধের পর ব্যাংক ট্রেজারি অফিসে তালা বাকৃবি শিক্ষার্থীদের Sep 02, 2025
img
১৩ হাজার লিটার চোরাই পেট্রোলসহ আটক ২ Sep 02, 2025
img
পরোক্ষভাবে দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে: সাইফুল হক Sep 02, 2025
img
ওটিটি ও প্রেক্ষাগৃহে আসছে জয়া আহসানের দুই সিনেমা Sep 02, 2025
img
বিসিবি পরিচালক পদে নির্বাচন করবো: বুলবুল Sep 02, 2025
নবীজি যেমন উদ্যোক্তা ছিলেন | ইসলামিক জ্ঞান Sep 02, 2025
‘আমি চুপ থেকেছি, কারণ ওর সম্মানটাই বড়’ দেবের শান্ত জবাব Sep 02, 2025
নির্বাচনে তামিম–বুলবুলের লড়াই, আবারও পরিচালক হচ্ছেন মাহবুব আনাম Sep 02, 2025
মোদিকে ‘মহামহিম প্রধানমন্ত্রী’ বললেন পুতিন Sep 02, 2025
জাতীয় সনদের আইনি ভিত্তি ও পিআর পদ্ধতি নিয়ে দৃঢ় অবস্থান জামায়াতের Sep 02, 2025
ক্যাম্পেইনে ছবি তুললেই ‘শিবির’ ট্যাগ! এসএম ফরহাদের অভিযোগ Sep 02, 2025
এক ধরণ ছাড়া বাকি সব ভিসা দিচ্ছে ভারত Sep 02, 2025
সোনার ভরি এক লাখ ৭৫ হাজার ছাড়াল Sep 02, 2025
img
জনগণের ভোটাধিকার হরণে ষড়যন্ত্র চলছে: গয়েশ্বর Sep 02, 2025
img
সব অভিযোগ তুলে মিডিয়া ছাড়ার ঘোষণা দিলেন রাজ রিপা Sep 02, 2025
img
প্যাট কামিন্সকে নিয়ে হতাশার খবর জানালো অস্ট্রেলিয়া Sep 02, 2025
img
নুরকে হত্যার উদ্দেশ্যেই হামলা চালানো হয়েছিল: মির্জা ফখরুল Sep 02, 2025
img
বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ আরও ঘনীভূত হওয়ার শঙ্কা Sep 02, 2025