আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন পাকিস্তানের ব্যাটার আসিফ আলি। ৩৩ বছর বয়সী এই মিডল অর্ডার ব্যাটার পাকিস্তানের জার্সিতে ২১টি ওয়ানডে ও ৫৮টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন। মূলত ফিনিশার রোলে খেলেই পরিচিতি পেয়েছিলেন তিনি।
আক্রমণাত্মক ব্যাটার হিসেবে পরিচিত আসিফ বেশি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে পাকিস্তানের শ্বাসরুদ্ধকর জয়ের ম্যাচে তার ৭ বলে ২৫ রানের ইনিংসের জন্য।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অবসরের ঘোষণা দিতে গিয়ে আসিফ লিখেছেন, 'পাকিস্তানের জার্সি পরা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সম্মান এবং দেশের হয়ে মাঠে নামা আমার সবচেয়ে গর্বের অধ্যায়।'
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানালেও পাকিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেট ও বিশ্বের নানা প্রান্তে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে খগেলা চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন এই ব্যাটার।
২০১৮ সালের এপ্রিলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি দিয়ে জাতীয় দলে অভিষেক হয় আসিফের। সে বছর পিএসএলে ইসলামাবাদ ইউনাইটেডকে শিরোপা জেতাতে ভূমিকা রাখেন তিনি, বিশেষ করে ফাইনালে রান তাড়া করতে নেমে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে টানা তিন বলে ছক্কা ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। টি-টোয়েন্টি অভিষেকের দুই মাস পর ওয়ানডে ফরম্যাটেও অভিষেক হয় তার।
নিজের সেরা সময়ে আসিফকে পাকিস্তান ক্রিকেটে মোড় ঘুরিয়ে দেয়া ব্যাটার হিসেবেই দেখা হতো। দলে তখন প্রকৃত পাওয়ার-হিটারের অভাব থাকায়, তাকে দ্রুত দুই ফরম্যাটে নেওয়া হয়। তবে অনেক সময় পাকিস্তানের নির্বাচক ও টিম ম্যানেজমেন্ট তার ব্যাটিং-ভূমিকা পুরোপুরি বুঝতে পারেনি। আসল কাজ ছিল ফিনিশিং, অথচ ওয়ানডেতে তাকে অনেক সময় ছয়ে নামানো হতো, যা তার জন্য উপযোগী ছিল না। টি-টোয়েন্টিতে গড়ে প্রতি ইনিংসে মাত্র সাত বল খেলার সুযোগ পেয়েছেন, আর এক-চতুর্থাংশের বেশি ইনিংসে ছিলেন অপরাজিত -যা প্রমাণ করে তাকে দেরিতে নামানো হতো এবং যথেষ্ট ব্যবহার করা হয়নি।
তবু এই ছোট ছোট ইনিংসগুলোতেই দারুণ সব মুহূর্ত উপহার দিয়েছেন আসিফ। ২০২১ বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে শেষ দুই ওভারে দরকার ছিল ২৪ রান। তখন তিনি ১৯তম ওভারে করিম জানাতকে টানা চার ছক্কা মেরে পাকিস্তানকে সেমিফাইনালে তুলেছিলেন। পরের বছর এশিয়া কাপে ভারতের বিপক্ষে তার ৮ বলে ১৬ রানের ঝড়ো ইনিংস পাকিস্তানকে জিতিয়ে ফাইনালে পৌঁছে দিয়েছিল।
কিন্তু, এরপরই যেন ম্রিয়মাণ হয়ে যেতে থাকেন তিনি। পরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তান ফাইনাল খেললেও ব্যর্থ হন তিনি, সেভাবে ভূমিকাই রাখতে পারেননি। ধারাবাহিকতা কখনোই সেভাবে ছিল না, আর যখন ফর্ম পুরোপুরি হারান, তখন পাকিস্তান নতুন প্রজন্মের বিগ হিটারদের পেয়ে গেছে। ভারতের বিপক্ষে মেলবোর্নে হওয়া সেই বিশ্বকাপ ম্যাচটিই ছিল আসিফের শেষ উল্লেখযোগ্য ম্যাচ। এরপর ২০২৩ এশিয়ান গেমসে দ্বিতীয় সারির পাকিস্তান দলে কিছু ম্যাচ খেলেছিলেন।
বিদায়ী ঘোষণায় আসিফ আরও বলেন, 'আমি কৃতজ্ঞতা নিয়েই অবসর নিচ্ছি এবং ঘরোয়া ও বিশ্বজুড়ে লিগে খেলে আমার ক্রিকেট-প্যাশন বাঁচিয়ে রাখব।'
এসএস/টিকে