প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক সেবন কখনই স্বাস্থ্যসম্মত নয়। অথচ বিশ্বব্যাপী ফার্মেসিগুলোতে অবাধে প্রেসক্রিপশন ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি হচ্ছে। যা উল্লেখযোগ্যহারে রোগীর অ্যান্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্স ইনফেকশন সংক্রান্ত ঝুঁকির বিকাশ ও বিস্তারে ভূমিকা রাখছে।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বের প্রতি চারজন রোগীর তিনজন অ্যান্টিবায়োটিকের জন্য ফার্মেসিতে যান এবং প্রতি পাঁচটি ফার্মেসির তিনটিই প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করে।
অথচ প্রায়ই দেখা যায়, রোগীরা প্রয়োজন ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করে থাকেন। তাই সবাইকে জেনে রাখতে হবে যে, কখন অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করা উচিত?
গবেষণায় দেখা গেছে, বেশ কিছু সাধারণ স্বাস্থ্যগত সমস্যা রয়েছে, যার জন্যে একজন ব্যক্তির অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করা উচিত।
উদাহরণস্বরূপ, ব্রঙ্কাইটিস রোগীদের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হচ্ছে- যাদের হৃদকম্পন ১০০ বিটের বেশি অথবা জ্বর ১০০.৪ ডিগ্রির বেশি অথবা প্রতি মিনিটে ২৪ বারেরও বেশি দ্রুতগতিতে শ্বাস-প্রশ্বাস হয়, সেসব রোগীদের অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করা উচিত।
সাইনাসের প্রদাহজনিত রোগীদের ক্ষেত্রে আমেরিকান কলেজ অফ ফিজিশিয়ান্স বলছে, যখন রোগের উপসর্গ দশদিন পর্যন্ত স্থায়ী হয় বা বিপজ্জনক হয় অথবা তিনদিন ধরে ১০২.২ ডিগ্রির বেশি জ্বর থাকে এবং নাকের ছিদ্রপথ রঙ্গিন ও সম্মুখভাগে ব্যথা থাকে তখন অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করতে হবে। এছাড়া প্রথমবার রোগ থেকে সেরে ওঠার কিছুদিন পর আবার রোগ আরও খারাপভাবে দেখা দিলে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করার প্রয়োজন হতে পারে।।
গলাভাঙা বা গলাব্যথা রোগীদের ক্ষেত্রে আমেরিকার ইনফেকশাস ডিসিস সোসাইটির পরামর্শ হচ্ছে, কেবল ওইসব রোগীদের বেলায় অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করা যাবে, যাদের পরীক্ষা করার পর উপসর্গ দেখে মারাত্মক গলাভাঙা ধরা পড়বে। অন্যথায় কেবল সর্দি, কাশি বা গলার কর্কশ শব্দের কারণে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন উচিত নয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কানের ইনফেকশনের ক্ষেত্রে ছয়মাস বয়সী শিশুদের যখন মারাত্মক ব্যথা করবে বা ব্যথা ৪৮ ঘণ্টার বেশি স্থায়ী হয়, অথবা ১০২.২ ডিগ্রির বেশি জ্বর হয় তখন অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করা যাবে।
এছাড়া, সাধারণ ঠাণ্ডাসহ অধিকাংশ শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণজনিত রোগের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন উচিত নয়। উদাহরণ স্বরূপ হাঁচি, সর্দি, কাশি, গলাব্যথা, স্বল্পমাত্রার জ্বর ও সাধারণ ঠাণ্ডাজনিত মাথা ব্যথার ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন উচিত নয়।
তাছাড়া, ভাইরাল ইনফেকশনের ক্ষেত্রেও অ্যান্টিবায়োটিক সেবন উচিত নয়। যদিও অধিকাংশ চিকিৎসকরা এ ধরণের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি বছর আমেরিকায় প্রায় ১৫কোটি রোগীকে চিকিৎসকরা অ্যান্টিবায়োটিকের পরামর্শ দেন। যার তিন ভাগের এক ভাগ থেকে অর্ধেক ভাগই অপ্রয়োজনীয়।
এ ধরণের পরামর্শের কারণে শুধু শুধু টাকা অপচয় হয়, বিভিন্ন ধরণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয় এবং ওষুধ-প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়ার সৃষ্ট হয়। এ জন্য কেবল সংশ্লিষ্ট রোগের ক্ষেত্রেই অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করা প্রয়োজন।
তবে সঠিক অ্যান্টিবায়োটিক বেছে নেয়ার জন্য সর্বোত্তম উপায় হলো চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া। যিনি রোগীর সমস্যাগুলো ভাল করে বুঝবেন, তার চিকিৎসার ইতিহাস জানবেন এবং তাড়াহুড়ো না করে রোগীকে সঠিক পরামর্শ দেবেন।
এ ব্যাপারে কিংস্টন ইউনিভার্সিটির প্রফেসর মার্ক ফিল্ডার বলেন, প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক সরবরাহ করা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। এ সমস্যা দূর করতে কমিউনিটির ফার্মেসিগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষ করে যেসব ওষুধ সেবনের প্রয়োজন নেই, সে সম্পর্কে তারা রোগীদের সচেতন করতে পারে।
পাশাপাশি আমাদের উচিত চিকিৎসক ও সুবিধাভোগী সবাইকে সচেতন করা যে, সব সময় অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের প্রয়োজন নেই- বলেছেন প্রফেসর ফিল্ডার।
টাইমস/এএইচ/জিএস