জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি, আবহাওয়া পরিবর্তন ও অন্যান্য পরিস্থিতির ফলে জনস্বাস্থের উপর ব্যাপক প্রভাব পড়বে। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার ফলে জনস্বাস্থ্যের বিভিন্ন উপকারিতা তুলে ধরা হয়েছে।
বিশ্বের ৮০ জনেরও বেশি চিকিৎসক, একেডেমিক বিশেষজ্ঞ, সুশীল সমাজ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি এই প্রতিবেদন তৈরিতে ভূমিকা রেখেছেন, যারা বিগত কয়েক দশক ধরে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কাজ করছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সালের প্যারিস জলবায়ু চুক্তির প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা গেলে এই শতাব্দীর মধ্যভাগেই লাখ লাখ জীবন এবং শত শত বিলিয়ন ডলার অর্থ বাঁচানো সম্ভব হবে। চুক্তির বাস্তবায়ন হলে ২০৫০ সালের মধ্যে কেবল বায়ু দূষণ থেকে প্রতিবছর এক মিলিয়নের বেশি জীবন বাঁচবে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম কারক জীবাশ্ম জ্বালানি। এর ফলে সৃষ্ট বায়ু দূষণের কারণে বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর ৭ মিলিয়ন লোক মারা যাচ্ছে। এক্ষেত্রে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি বিশ্বের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যাতে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় রাষ্ট্রসমূহ তাদের কার্বন নিঃসরণ হ্রাস ও এই শতকের মধ্যে বৈশ্বিক তাপমাত্রা শিল্প-পূর্ব পর্যায় থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস নীচে রাখতে অঙ্গীকার করেছে। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র এ চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়ায় চুক্তির বাস্তবায়ন ও লক্ষ্য অর্জন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
চলতি বছরে পোল্যান্ডে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন ‘কোপ ২৪’ এ বিশ্ব নেতারা মিলিত হচ্ছেন। এ সম্মেলন প্যারিস জলবায়ু চুক্তির বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। এ সম্মেলনের লক্ষ্য হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় কার্যকর আইন প্রণয়ন, অর্থায়ন ও রাষ্ট্রগুলো তাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করছে কি না তা তদারকি করা।
বিশ্ব নেতাদের উদ্দেশ্য করে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আমরা গভীর সংকটে।’
কোপ-২৪ সম্মেলনে উপস্থাপিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই প্রতিবেদনে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তন ও স্বাস্থ্য সমস্যার মধ্যে সরাসরি সম্পর্কিত বিষয় হচ্ছে বায়ু দূষণ। বিদ্যুৎ, যানবাহন ও কলকারখানায় জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যাবহারের ফলে ব্যাপক হারে কার্বন নিঃসরণ হচ্ছে। এটা জলবায়ু পরিবর্তনে প্রধানত ভূমিকা রাখছে এবং বায়ু দূষণ করছে। এর ফলে আবাসিক ও অনাবাসিক বিভিন্নভাবে দূষিত বায়ু গ্রহণের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর সাত মিলিয়ন লোক মারা যাচ্ছে। তাই জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বিশ্বনেতাদের প্রতি বেশ কিছু পরামর্শ দেয়া হয়েছে এই প্রতিবেদনে।
এগুলো হচ্ছে- কার্বন নিঃসরণ ও বায়ু দূষণ হ্রাস করতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা, জলবায়ু লক্ষ্য অর্জনে নগর প্রধানসহ স্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সংঘবদ্ধ করা, জলবায়ু কার্যক্রমের সঙ্গে স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সম্পৃক্তকরণ, জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে অগ্রগতি তদারকি করা।
টাইমস/এএইচ/জিএস