কোস্টারিকার দ্বীপে হাজার হাজার কোটি টাকার গুপ্তধন!

রবার্ট লুইস স্টিভেনসনের বিখ্যাত কিশোর উপন্যাস ‘ট্রেজার আইল্যান্ড’। একটি দ্বীপে বহু গুপ্তধনের কথা উল্লেখ আছে এই উপন্যাসে। শুধু বইয়ে নয় বাস্তবেও এমন একটি দ্বীপ রয়েছে। যেখানে‌ রয়েছে অমূল্য বিপুল গুপ্তধন। কোস্টারিকার মূল ভূখণ্ড থেকে প্রায় ৫৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমের দ্বীপ কোকোজ আইল্যান্ড এই গুপ্তধনের দ্বীপ।

৩০০ ফিটের খাড়াই পাহাড়, কালো বালির সৈকত, অসংখ্য নদী আর ঝরনায় সাজানো এই রহস্যময় দ্বীপ দেখেই নাকি মাইকেল ক্রিকটনের মনে ‘জুরাসিক পার্ক’ এর প্লট এসেছিল।

প্রাগৈতিহাসিক প্রাণী অবশ্য নেই। দ্বীপের বাসিন্দা ৪০০ রকমের কীটপতঙ্গ এবং ৯০ রকমের পাখির প্রজাতি। আর আছে বাঘ এবং সমুদ্রে হাতুড়ি-মাথা হাঙর।

গুপ্তধন শিকারিদের কিন্তু এই বিপুল প্রাণী বৈচিত্র্য নিয়ে বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। বরং তাদের আগ্রহ এই দ্বীপে লুকনো ৭ হাজার ১৫০ কোটি ২৫ লাখ টাকার লুকানো সম্পদে।

রটনার সূত্রপাত ১৮২০ খ্রিষ্টাব্দে। লাতিন আমেরিকা দখলকারী স্প্যানিশ শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে পেরুর স্থানীয় বাসিন্দারা।

স্পেন অধিকৃত লিমা আক্রমণের পরিকল্পনা করেন আর্জেন্তিনীয় জেনারেল জোসে সান দে মার্টিন। যুদ্ধের আশঙ্কায় তৎকালীন স্প্যানিশ গভর্নর ঠিক করেন সমস্ত সম্পদ লুকিয়ে ফেলা হবে। যাতে যুদ্ধে কোনও সম্পদহানি না হয়।

সম্পদ লুকানোর জন্য স্পেনীয় শাসকরা তখন ব্রিটিশ ক্যাপ্টেন উইলিয়াম থম্পসনের শরণাপন্ন হন। তার জাহাজ ‘মেরি ডিয়ার’ সোনা-রুপোর মুদ্রা, রাশি রাশি হীরা এবং প্রমাণ আকারের ভার্জিন মেরির মূর্তি নিয়ে রওনা দেন অজানা গন্তব্যে। শোনা যায়, ক্যাপ্টেন থম্পসন ও তার সঙ্গীরা জাহাজের বাকি সবাইকে হত্যা করে জাহাজ নিয়ে চলে যান কোকোজ দ্বীপে।

তাদের ধাওয়া করে আসা স্পেনীয় যুদ্ধজাহাজ পাল্টা আক্রমণ চালায়। বন্দি করা হয় জাহাজের প্রায় সব ষড়যন্ত্রীকেই। কিন্তু সন্ধান মেলেনি বিপুল সম্পদের। সেই সঙ্গে নিরুদ্দেশ হয়ে যান ক্যাপ্টেন থম্পসন এবং তার এক সঙ্গী। দ্বীপের কোথায় তারা সেই সম্পত্তি লুকিয়ে রাখেন, জানা যায়নি। তাদের রেখে যাওয়া সম্পদের নাম হয় ‘ট্রেজার অব লিমা’।

গুপ্তধনের লোভে এরপর থেকে দ্বীপে অভিযান চালিয়েছেন অসংখ্য অভিযাত্রী। কখনও শোনা গিয়েছে, উদ্ধার হয়েছে গুপ্তধন। কিন্তু তারপরে কোনও প্রামাণ্য তথ্য পাওয়া যায়নি। সব থেকে গিয়েছে গুজবের আকারেই।

জনশ্রুতি আছে জন কিটিং নামে এক ব্যক্তি নাকি গুপ্তধনের সন্ধান পেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তা কোনও দিন দেখাতে পারেননি।

জার্মান অভিযাত্রী অগস্ট গিজলার উনিশ শতকের শেষে কোকোজ দ্বীপের গভর্নর হয়েছিলেন। তিনি দীর্ঘ দিন ধরে দ্বীপে প্রচুর খোঁজাখুঁজি করেন। সুড়ঙ্গ কাটেন দ্বীপের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। কিন্তু তার হাতে কয়েকটি মুদ্রা ছাড়া আর কিছুই আসেনি। ১৯০৮ সালে দ্বীপ ছেড়ে চলে যান হতাশ গিজলার।

তবে ট্রেজার অব লিমা-র আগে থেকেই কোকোজ দ্বীপ বিখ্যাত গুপ্তধনের জন্য। অনেক দিন ধরেই এখানে লুঠের জিনিস লুকিয়ে রাখত জলদস্যুরা। প্রথম জীবনে ব্রিটিশ নৌসেনা ক্যাপ্টেন বেনেট গ্রাহাম পরে হয়েছিল কুখ্যাত জলদস্যু। সে নাকি দস্যুজীবনে লুট করেছিল মোট ৩৫০ টন সোনা। সে সবই লুকিয়ে রেখেছিল কোকোজ দ্বীপে।

আর এক নৃশংস জলদস্যু বেনিতো বোনিতোও নাকি তার লুটের বিপুল সম্পদ লুকিয়েছিল এই নির্জন দ্বীপেই।

কোকোজ আইল্যান্ডে ৫০০-র বেশি অভিযান হয়েছে। শেষ পর্যন্ত কোস্টারিকা সরকার এই দ্বীপে সাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দেয়। অভিযাত্রী বা পর্যটকদের কাছে এই দ্বীপ এখন অগম্য। স্কুবা ডাইভিং, জাহাজে পাড়ি বা আকাশপথে চক্কর দিয়ে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো যায়।

জনশ্রুতি ও কিংবদন্তিতে অবিশ্বাসী লোকজনের দাবি, জলদস্যুদের গল্প মনগড়া। আদতে কোকোজ দ্বীপে কোনও গুপ্তধনই নেই। যা আছে, তা হলো অপূর্ব প্রাকৃতিক সম্পদ। ক্রান্তীয় অরণ্যের বিরল জীববৈচিত্রে ভরা এই দ্বীপের সেই অমূল্য সম্পদকে রক্ষা করতে পাহারা দেয় কোস্টারিকা সরকারের বনকর্মীরা।

 

টাইমস/এএইচ/এসআই

Share this news on:

সর্বশেষ

img
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী উপস্থিতি বাড়ানোর তাগিদ গণশিক্ষা উপদেষ্টার Dec 20, 2025
img
বিদেশে গানের শুটিংয়ের কারণ জানালেন ঐন্দ্রিলা Dec 20, 2025
সেমিফাইনালে পাকিস্তানের কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ বাংলাদেশের Dec 20, 2025
আপত্তিকর অঙ্গভঙ্গির জেরে কেড়ে নেওয়া হলো ফিনিশ সুন্দরীর মুকুট Dec 20, 2025
img

মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য

পুরো ইউক্রেন ও ইউরোপের কিছু অঞ্চল দখল করার পরিকল্পনা পুতিনের Dec 20, 2025
img
হোয়াইট হাউসের ঐতিহ্যবাহী 'ক্রিসমাস ডিনারে' অভিনেত্রী মল্লিকা Dec 20, 2025
img
হাদির জানাজায় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে মাঠে থাকবে ৮৭০ আনসার Dec 20, 2025
img
তাপমাত্রা বাড়লেও তেঁতুলিয়ায় কমেনি শীতের দাপট Dec 20, 2025
img
হাদির মৃত্যুতে পাকিস্তান হাইকমিশনের শোক Dec 20, 2025
img
জেনে নিন স্বর্ণ ও রুপার আজকের বাজারদর Dec 20, 2025
img
ময়নাতদন্তের জন্য হাদির মরদেহ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে Dec 20, 2025
img
দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে হাদির জানাজায় দলে-দলে অংশগ্রহণ করুন : জামায়াত আমির Dec 20, 2025
img
ধর্মেন্দ্রর শেষ ছবি ‘ইক্কিস’ ঘিরে আবেগে ভাসছে নেটদুনিয়া Dec 20, 2025
img
মাদুরো সরকারকে ‘অবৈধ’ বললেন শীর্ষ মার্কিন কূটনীতিক Dec 20, 2025
img
কলকাতায় বাংলাদেশের উপ-দূতাবাসে নিরাপত্তা জোরদার Dec 20, 2025
img
লক্ষ্মীপুরে নির্বাচনি বিধি লঙ্ঘন, ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার সুপারিশ Dec 20, 2025
img
‘সকালে মাঠে গিয়ে দেখি সব শেষ’ Dec 20, 2025
img
ভারতকে হারানোর ম্যাচেও জরিমানা গুনতে হচ্ছে বাফুফেকে Dec 20, 2025
img
সিরিয়ায় বড় পরিসরে হামলা চালালো যুক্তরাষ্ট্র Dec 20, 2025
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দুই মাস আগে শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক পরিবর্তন Dec 20, 2025