জনবল সঙ্কটে ধুকছে রেল, নিয়োগ আটকে যাচ্ছে আইনী গ্যাড়াকলে

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ধারাবাহিক সরকারের আমলে রেলপথের ব্যাপক উন্নয়ন হলেও জনবল সঙ্কট এখনো কাটেনি। উপরন্তু সঙ্কট কাটাতে কোনো কোনো নিয়োগ প্রক্রিয়া আটকে যাচ্ছে আইনী গ্যাড়াকলে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে যাত্রী সেবা। যদিও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বলছে, প্রতিকূলতা কাটিয়ে রেলকে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে জনগণের আস্থার বাহন হিসেবে।

জানা গেছে, বাংলাদেশ রেলওয়েতে বর্তমানে প্রায় ৪০ হাজার ২৭৫ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর চাহিদা রয়েছে। তবে এর বিপরীতে কর্মরত রয়েছে ২৫ হাজার ৭১৩ জন। প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কম কর্মী দিয়ে কোনমতে জোড়াতালি দিয়ে কাজ চলছে ৩৫৪টি স্টেশনে। আর জনবল সঙ্কটের কারণে আগেই বন্ধ করা হয়েছে ১১২টি স্টেশন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঘাটতি কাটাতে যে নিয়োগগুলো হয় সেগুলোরও কোনো কোনোটি আইনী জটিলতায় পড়ে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের আইন শাখা সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের ডিসেম্বরে এবং ১৩ সালের জুলাই গেট কীপার ইঞ্জিনিয়ারিং পদে ১৬৯ জন লোকবল নিয়োগের জন্য পৃথক দুটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রদান করে। পরে টিএলআর হিসেবে কর্মরত রেলওয়ের অস্থায়ী ২৪১ শ্রমিক উচ্চ আদালতে গিয়ে ১২টি রিট পিটিশন দায়ের করেন।

পরবর্তীতে রেলওয়ের শ্রমিকদের পক্ষে উচ্চ আদালত রায় প্রদান করেন। অপরদিকে প্রথম আটটি মামলার রায়ের বিরুদ্ধে আপীল বিভাগে যায় রেলওয়ে। পরে হাইকোর্টের রায় বহাল থাকায় রায় ও আদেশ মোতাবেক পিটিশনারদের আত্তীকরণ করার নির্দেশ দেয়া হয়। যা বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানা গেছে।  

লোকবল সঙ্কট ও স্টেশন বন্ধের বিষয়ে রেল সচিব মো: মোফাজ্জেল হোসেন বাংলাদেশ টাইমসকে জানান, রেলপথে জনবল সঙ্কট মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে। তবে আমরা সরকারের কাছে বিভিন্ন পদে লোকবল চেয়েছি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আমাদের লোকবল সঙ্কটের কথা জানে। তাদের সহযোগিতায় আমরা অচিরেই এ সঙ্কট কাটিয়ে উঠবো বলে আশা করছি।

রেলসূত্র জানায়, ২০১৫ সালের ১২ মে ওয়েম্যান পদে ১ হাজার ১১৩ পদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সংস্থাটি। এর আলোকে ওই বছরের ১২ থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত পশ্চিমাঞ্চলের পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষাও সম্পন্ন করা হয়। কিন্তু এর ২৮৬ জন টিএলআর শ্রমিকরা দশটি রিট পিটিশন দাখিল করলে সে নিয়োগও আটকে যায়। এসব মামলা শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।

সর্বশেষ ২০১৭ সালের শেষ দিকে পোর্টার হিসেবে ৯১ পোর্টার নিতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়। তখনও নিয়োগ প্রক্রিয়াটি আটকাতে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করা হয়। অপরদিকে এ নিয়ে প্রার্থীদের পরীক্ষা শেষে ফলাফল প্রকাশের আগেই হাইকোর্টে স্থগিতাদেশে এই নিয়োগ প্রক্রিয়াটি আটকে যায়।

রেল মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, রেলওয়েতে নিয়োগ কার্যক্রম ঠেকাতে টিএলআর হিসেবে কর্মরত অস্থায়ী শ্রমিকরা ’১২ থেকে ’১৭ সাল পর্যন্ত ১১ ৬১ বাদী মামলা দায়ের করেছে মোট ৩৬। এসব মামলা নিষ্পত্তি করতে পারলে কেবল যুগ যুগ ধরে চলে আসা জনবল নিয়োগ সঙ্কট দূর করা সম্ভব হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বাংলাদেশ টাইমসকে বলেন, বর্তমান সরকার রেলওয়েকে আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব বাহন হিসেবে গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর। এ লক্ষ্যে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে। একইসঙ্গে রেলের উন্নয়নে সারাদেশে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পও বাস্তবায়ন করছে ও বেশ কিছু প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে।

তবে বর্তমান সরকারের রেলওয়ে মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী উন্নত বিশ্বের ন্যায় যাত্রীবান্ধব রেলওয়ে তৈরিতে বর্তমানে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে জনবল সংকট।

মন্ত্রী আরো বলেন, আমি দায়িত্ব নেয়ার পরপরই বিষয়টিকে অতি গুরুত্ব দিয়ে রেলের উন্নয়নের অন্যতম প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে তা দূর করতে আমাদের আইন কর্মকর্তাদের নিয়ে এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছি।

আশা করি হাইকোর্ট ও সুপ্রীমকোর্টে আইনী লড়াইর মাধ্যমে এসব মামলা নিষ্পত্তি করা সম্ভব হবে। রেলকে আস্থার বাহন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে তিনি মামলা দায়েরকারীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।


টাইমস/টিআর/এমএস

 

Share this news on: