ভারতের চাপানো শর্তে পার্বতীপুর-কাউনিয়া ডুয়ালগেজ লাইনে অচলাবস্থা

দাতাগোষ্ঠীর চাপানো শর্তে থমকে আছে দিনাজপুরের পার্বতীপুর থেকে রংপুরের কাউনিয়া পর্যন্ত রেল লাইনকে ডুয়েলগেজে (ডাবল লাইন) উন্নীত করার কাজ। ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) ঋণ থেকে ১ হাজার ৩৬৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও তাদের বিভিন্ন শর্ত ও ভারতীয় এক্সিম ব্যাংকের কিছু শর্ত পালন করতে হিমশিম খাচ্ছে রেলওয়ে।

রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ডাবল লাইন স্থাপনে ব্যয় হবে ১ হাজার ৬৮৩ কোটি ২১ লাখ টাকা। এর মধ্যে ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) ঋণ থেকে ১ হাজার ৩৬৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা এবং সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৩১৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের নেয়া উদ্যোগটি বাস্তবায়িত হলে ৫৭ কিলোমিটার মেইন লাইন ও ৯ দশমিক ৮৫ কিলোমিটার লুপ লাইন মিটারগেজ থেকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর হবে।

এই প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ রেলওয়ের এক কর্মকর্তা বাংলাদেশ টাইমসকে বলেন, ভারতের এলওসি থেকে আমরা ঋণ পাচ্ছি। তবে তাদের ও ভারতীয় এক্সিম ব্যাংকের কিছু শর্ত প্রকল্প বাস্তবায়নে বাধা হয়ে দাড়াচ্ছে। কারণ আমরা তো আর দেশ বিরোধী কোনো কিছু করতে পারি না। তবে আমরা সেই ঋণ নিতে বিভিন্ন ভাবে তাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করছি। যাতে এই সমস্যার সমাধান যেন হয়। তবে শর্তগুলো কি সে বিষয়ে মুখ খোলেন নি তিনি।

এই সম্পর্কে প্রকল্প পরিচালক বাংলাদেশ রেলওয়ে রাজশাহী প্রধান প্রকৌশলী (পশ্চিম) আল ফাত্তাহ মোঃ মাসউদুর রহমান বাংলাদেশ টাইমসকে বলেছেন, আমি এই প্রকল্পে নতুন। এখনও আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। সাবেক বাংলাদেশ রেলওয়ে রাজশাহী প্রধান প্রকৌশলী আফজাল হোসেনের তত্ত্বাবধানে এই প্রকল্পটি আছে। তবে এই প্রকল্পটি আমার তত্ত্বাবধানে আসবে। তখন এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারবো। আপাতত এটুকুই বলব আমরা ভারতীয়দের সঙ্গে এই ঋণের ব্যাপারে সব ধরনের কথা বলে যাচ্ছি।

রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আন্তঃদেশীয় রেল যোগাযোগ বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে। রোহনপুর-সিঙ্গাবাদ ব্রডগেজ রেলওয়ে লিংক ও রাধিকাপুর-বিরল ব্রডগেজ রেলওয়ে লিংক করিডোর দুটির মাধ্যমে বাংলাদেশ রেলওয়ে ভারতসহ নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে রেলওয়ে ট্রানজিট স্থাপন করতে পারবে। চিলাহাটি থেকে পার্বতীপুর হয়ে ঈশ্বরদী পর্যন্ত সেকশনটি ব্রডগেজ রয়েছে। কিন্তু পার্বতীপুর থেকে রাধিকাপুর ও পার্বতীপুর থেকে কাউনিয়া পর্যন্ত সেকশনটি মিটারগেজ।

সূত্র জানিয়েছে, এ অবস্থায় বিরল সীমান্ত দিয়ে ব্রডগেজ লাইনের মাধ্যমে আন্তঃদেশীয় রেল যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের পার্বতীপুর হতে কাউনিয়া পর্যন্ত মিটারগেজ রেল লাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর’ প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ৩০ জুলাই প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার সুপারিশ বাস্তবায়ন করায় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপণ করার প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে চলতি মাস থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে। প্রকল্পটি চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বৈদেশিক সাহায্য প্রাপ্তির সুবিধার্থে বরাদ্দহীনভাবে অননুমোদিত নতুন প্রকল্প হিসেবে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় প্রধান কাজ হচ্ছে, পরামর্শক সেবা গ্রহণ, ৬৬ দশমিক ৮৫ কিলোমিটার রেলওয়ে ট্র্যাক নির্মাণ, ৬০২ মিটার ব্রিজ নির্মাণ ও সিগন্যালিং সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনা করা।

একনেকের জন্য তৈরি করা কার্যপত্র প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য জুয়েনা আজিজ বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পার্বতীপুর থেকে কাউনিয়া পর্যন্ত ডাবল রেললাইন স্থাপিত হবে। এতে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে রেল যোগাযোগ বৃদ্ধি পাবে। সেই সঙ্গে আধুনিক ও নিরাপদ ট্রেন চলাচল নিশ্চিত করার পাশাপাশি উন্নত যাত্রী সেবা দেয়া সম্ভব হবে।

প্রকল্পের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, পার্বতীপুর-কাউনিয়া সেকশনটি ডুয়েলগেজে রূপান্তর হলে যাত্রী, মালামাল পরিবহন ও ট্রান্স বর্ডার রেলওয়ে ট্রাফিক সুযোগ সৃষ্টি হবে। এর পাশাপাশি এ সেকশন বাংলাদেশ রেলের ব্রডগেজ নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হবে। পার্বতীপুর-কাউনিয়া সেকশনটি প্রধান রেললাইন, যা রংপুর বিভাগীয় সদর দপ্তরকে যুক্ত করেছে।

বিদ্যমান সেকশনটি ১৯৮৭ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত একটি প্রকল্পের মাধ্যমে পুনর্বাসন করা হয়েছিল। বর্তমানে এ সেকশনটির স্লিপারের মেয়াদ উত্তীর্ণসহ অন্যান্য অবকাঠামো উপকরণ জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। ফলে এ সেকশন দিয়ে ইন্টারসিটি ট্রেনসহ অন্যান্য ট্রেন যথাযথ গতিতে চলতে পারছে না। এ সেকশনটিতে ডুয়েলগেজ রেললাইন হলে একই সঙ্গে মিটারগেজ ও ডুয়েলগেজ ট্রেন চলাচল করতে পারবে। এর মধ্যদিয়ে সেকশনাল ক্যাপাসিটি বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন সহজ হবে। এছাড়া বাড়বে ট্রান্স বর্ডার বাণিজ্যও।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) সূত্র জানায়, চলতি সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় পাঁচ বছরে ১ হাজার ১১০ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ ডাবল ট্র্যাক নির্মাণের লক্ষ্য রয়েছে। প্রস্তাবিত এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ রেলওয়ের ৬৬ দশমিক ৮৫ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ করা হবে। তাই প্রকল্পটি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।



টাইমস/টিআর/এমএস

 

Share this news on: