পরিমল থেকে জিন্নাত আরা, এরপর কে?

রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে একের পর এক অসদাচরণের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। ছাত্রী ধর্ষণ থেকে শুরু করে শিক্ষার্থী ভর্তিতে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে প্রতিষ্ঠাটির শিক্ষকদের বিরুদ্ধে। ২০১১ সালে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বসুন্ধরা শাখার শিক্ষক পরিমল জয়ধরের বিরুদ্ধে ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগ উঠে। ওই ঘটনায় সারা দেশে জুড়ে সমালোচনা ও নিন্দার ঝড় উঠে। সর্বশেষ সোমবার অরিত্রী অধিকারী নামের এক ছাত্রীর আত্মহত্যাকে কেন্দ্র করে ফের আলোচনায় আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ঘটনায় স্বয়ং শিক্ষমন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ ঘটনাস্থলে গিয়েও ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের সান্তনা দেন। আশ্বাস দেন সুষ্ঠু বিচারের।

এদিকে, অরিত্রী অধিকারীর মৃত্যুর ঘটনার বিচার না হওয়া পর্যন্ত সব পরীক্ষা বর্জনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আন্দোলনরত ছাত্রীরা। একই সঙ্গে বুধবার সকাল থেকে কলেজ ফটকে অবস্থান নেবে তারা। কলেজের অধ্যক্ষ ও শাখা প্রধানের পূর্ণ বরখাস্ত, গভর্নিং বডি বাতিল, প্রচলিত আইনে অরিত্রী হত্যার বিচারের দাবিতে আন্দোলনকারী ছাত্রী ও তাদের অভিভাবকেরা এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

মঙ্গলবার স্কুলের বেইলি রোড শাখায় দিনভর আন্দোলন শেষে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকেরা এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তারা বলেন, শিক্ষামন্ত্রী ৩দিনের কথা বলেছেন, এর মধ্যে বিচার সম্পন্ন করা না হলে লাগাতার আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। বুধবার সকাল ১০টায় স্কুলের ১ নম্বর ফটকের সামনে তারা অবস্থান নেবেন। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানান, শিক্ষকদের বিরুদ্ধে একের পর এক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। তবে এর স্থায়ী সামধান না হলে অনিয়মের পরিমান বৃদ্ধি পাবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক বলেন, ২০১১ সালে সাবেক শিক্ষক পরিমল জয়ধরের বিরুদ্ধে ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগ উঠে। পরবর্তীতে স্কুলে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তির অভিযোগ পাওয়া যায়। এখন আবার ছাত্রী ও তার বাবা-মা'কে অপমান করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনা ভোক্তভোগী ছাত্রী আত্মহত্যার মত ঘটনা ঘটিয়েছে।

অন্য আর এক অভিভাবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘পরিমল ও সর্বশেষ জিন্নাত আরার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। এরপর কার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠবে?’

জানা যায়, ২০১১ সালে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বসুন্ধরা শাখার শিক্ষক পরিমল জয়ধরে বিরুদ্ধে ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগ উঠে। পরবর্তীতে ওই ছাত্রী কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করে। ওই অভিযোগপত্রে ছাত্রীটি জানিয়েছিল, ২০১১ মে মাস থেকে পরিমলের কোচিং সেন্টারে যাওয়া শুরু করে সে। স্কুলের কাছেই পরিমল জয়ধর, বাবুল কুমার কর্মকার, বিষ্ণুপদ বারুই, বরুণচন্দ্র বর্মণ ও বিশ্বজিৎ চন্দ্র মজুমদার বাসা ভাড়া নিয়ে কোচিং করাতেন। সেই ভাড়া বাসায় পরিমল জয়ধর এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করে।

অন্যদিকে, নীতিমালার ভেঙ্গে অবৈধভাবে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তির অভিযোগ উঠে প্রতিষ্ঠানটির উপর।

চলতি বছরের ২৭ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো শোকজের ওই চিঠিতে বলা হয়েছিল, ‘বেসরকারি স্কুল/স্কুল কলেজে মাধ্যমিক, নিম্ন মাধ্যমিক ও সংযুক্ত প্রাথমিক স্তরে ভর্তির নীতিমালা - ২০১৭’ অনুযায়ী বিদ্যালয়ে এন্ট্রি শ্রেণিতে আসন শূন্য থাকা সাপেক্ষে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাবে। কিন্তু এ নীতিমালার ভঙ্গ করে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তির করে ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজ।’

সর্বশেষ রোববার পরীক্ষা চলার সময় অরিত্রী অধিকারী নামের এক ছাত্রীর কাছে মোবাইল ফোন পাওয়া যায়। সে নকল করছে, এমন অভিযোগে সোমবার তার বাবা-মাকে ডেকে নিয়ে আসে স্কুল কর্তৃপক্ষ। এ সময় অরিত্রী ও তার বাবা-মাকে অপমান করেন এক শিক্ষক। এছাড়াও অরিত্রীকে ছাড়পত্র নিয়ে যেতেও বলা হয়। এরপর বাড়ি এসে অরিত্রী সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়নায় ফাঁস দেয়। পরে সোমবার ঢাকার শান্তিনগর থেকে অরিত্রী অধিকারীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

Share this news on: