খালেদের ক্যাসিনোতে যা হয়

অবৈধভাবে ঢাকায় ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়ার পর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া চাঞ্চল্যকর সব তথ্য দিয়েছেন।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে যুবলীগ নেতা খালেদ বলেছেন, ঢাকার কয়েকটি অবৈধ ক্যাসিনো থেকে যে আয় আসে তার একটি বড় অংশ যায় ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতাদের পকেটে। আর এই টাকার একটি বড় ভাগ পেতেন ঢাকা মহানগর যুবলীগের নেতারা।

বুধবার দুপুরের পর গুলশান ২ নম্বরের ৫৯ নম্বর সড়কে খালেদের বাসা এবং ফকিরাপুলের ইয়ংমেনস ক্লাবে একযোগে অভিযান শুরু করেন র‌্যাব সদস্যরা। ওই ক্লাবে পাওয়া যায় মদ আর জুয়ার বিপুল আয়োজন। সেখান থেকে ২৪ লাখ টাকাও উদ্ধার করা হয়। ১৪২ জনকে গ্রেপ্তার করে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়। অপরদিকে সন্ধ্যায় গুলশানের বাসা থেকে খালেদ ভূঁইয়াকে নিয়ে যায় র‌্যাব। ওই বাসায় একটি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়ার কথা জানিয়েছেন র‌্যাব কর্মকর্তারা।

র‍্যাবের একটি সূত্র জানায়, রমরমা ক্যাসিনো ব্যবসার জন্য রাজধানীর বেশ কয়েকটি ক্লাব ২৪ ঘণ্টাই খোলা থাকে। ক্লাবের হলরুম মানুষ ভর্তি থাকে জুয়ার আসরে, সঙ্গে থাকে দামি মদ। আর খাবার দেয়া হয় ফ্রি। রাত গভীর হলে ক্যাসিনোতে উঠতি মডেল ও শোবিজ জগতের গ্লামার গার্লরা আসতে শুরু করেন। আকর্ষণীয় মেকআপ আর পাশ্চাত্য পোশাকে হলরুমে এসে আড্ডায় মেতে ওঠেন তারা। গ্লামার গার্লদের উপস্থিতি জুয়াড়িদের মাথা ঘুরিয়ে দেয়।

সূত্র আরও জানায়, জুয়াড়িরা মদের নেশায় মাতাল হয়ে আরও বড় বড় টাকার বাজি ধরেন। একপর্যায়ে একরাতেই নিঃস্ব হয়ে যান অনেকে। বাড়ি ফেরার টাকাও থাকে না তাদের। তখন ক্যাসিনো থেকে বাড়ি ফেরার খরচ হিসেবে জুয়াড়ির হাতে মাত্র দেড় হাজার টাকা ধরিয়ে দেয়া হয়।

খালেদ মাহমুদকে আটকের পর র‍্যাব-৩ কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। ক্যাসিনো থেকে উপার্জনের টাকা কার কার কাছে যেত, সে নিয়েও প্রশ্ন করা হয় তাকে।

রাতভর জিজ্ঞাসাবাদে মতিঝিলের ক্যাসিনো পরিচালনার বিষয়টি রাজধানীর কয়েকটি থানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও রাজনীতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জানতেন বলে দাবি করেন খালেদ। তবে পুলিশের সঙ্গে ক্যাসিনো পরিচালনার জন্য কোনো আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে তিনি কিছু বলেননি বলে র‍্যাব সূত্র জানায়।

র‍্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক সারোয়ার বিন কাশেম বলেন, ‘তাকে আমরা সংক্ষিপ্ত সময়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি। তবে তদন্তের স্বার্থে সেগুলো এখনই প্রকাশ করা যাবে না। বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির নামও বলেছেন খালেদ। আমরা সেগুলো নিয়ে কাজ করব। ঢাকায় অবৈধভাবে কোনো ক্যাসিনো থাকতে দেবে না র‍্যাব।’

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে খালেদকে বৃহস্পতিবার দুপুরে গুলশান থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে থানায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে।

 

টাইমস/এসআই

Share this news on: