আবরারকে হত্যার করার কথা স্বীকার ছাত্রলীগ নেতাদের

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ছাত্রলীগের ১০ নেতা-কর্মী হত্যা করার কথা স্বীকার করেছেন বলে গোয়েন্দা পুলিশ জানিয়েছে।

মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আবরার বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (১৭তম ব্যাচ) ছাত্র ছিলেন। তিনি থাকতেন বুয়েটের শেরে বাংলা হলের নিচতলায় ১০১১ নম্বর কক্ষে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সাম্প্রতিক কিছু চুক্তির সমালোচনা করে ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার জেরে রোববার রাতে ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করেন বুয়েট ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী।

সোমবার রাতে আবরার হত্যার ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে তার বাবা বরকত উল্লাহ ঢাকার চকবাজার থানায় মামলা করেন। আটক ১০ জনকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় বলে জানিয়েছেন লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মুনতাসিরুল ইসলাম।

আবরার হত্যায় যারা জড়িত

একাধিক সূত্র জানায়, আবরারকে প্রথম দফা পেটানোর ঘটনায় ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক উপসম্পাদক ও পুরকৌশল বিভাগের ছাত্র অমিত সাহা, উপদপ্তর সম্পাদক ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র মুজতাবা রাফিদ, সমাজসেবা বিষয়ক উপসম্পাদক ও বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র ইফতি মোশারফ ওরফে সকালসহ তৃতীয় বর্ষের আরও কয়েকজন। দ্বিতীয় দফায় পেটান বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী অনীক সরকার, ক্রীড়া সম্পাদক ও নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একই বর্ষের মেফতাহুল ইসলাম ওরফে জিয়নসহ কয়েকজন। তারা সবাই বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান ওরফে রাসেলের অনুসারী।

গ্রেপ্তার ১০ জন

এ ঘটনায় সোমবার সকালে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফুয়াদ হোসেনকে আটক করা হয়।

ডিবির যুগ্ম কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, এই দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য আটক করা হয়েছে। কারা আবরারকে ডেকে নিয়ে গেছেন এবং লাশ বের করে সিঁড়িতে রেখেছেন, তাদের হলের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে শনাক্ত করা হয়েছে।

দুপুরের পর পুলিশ এ হত্যার ঘটনায় আটক করে ছাত্রলীগের নেতা অনীক সরকার, মেফতাহুল ইসলাম, ইফতি মোশারেফ, বুয়েট ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান ওরফে রবিন, গ্রন্থ ও প্রকাশনা সম্পাদক ইশতিয়াক আহমেদ ওরফে মুন্না, ছাত্রলীগের সদস্য মুনতাসির আল জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম ওরফে তানভীর ও মোহাজিদুর রহমানকে।

যেভাবে মারা হয় আবরারকে

শেরেবাংলা হলের নিচতলায় ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন আবরার ফাহাদ। শনিবার বিকাল ৫টা ৩২ মিনিটে আবরার ফাহাদ ফেসবুকে যখন সর্বশেষ স্ট্যাটাস দেন, তখন তিনি ছিলেন কুষ্টিয়ায় বাড়িতে। পরদিন রোববার বিকালে তিনি বাড়ি থেকে বুয়েটের হলে ফেরেন।

হলের শিক্ষার্থী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, হলে ফেরার কয়েক ঘণ্টার মাথায় রাত আটটার দিকে আবরারসহ দ্বিতীয় বর্ষের সাত-আটজন ছাত্রকে শেরেবাংলা হলের দোতলার ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে পাঠান তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাত-আটজন নেতা। তারা আবরার ফাহাদের মুঠোফোন নিয়ে ফেসবুক ও মেসেঞ্জার ঘেঁটে দেখেন। এরপর ক্রিকেট স্টাম্প দিয়ে আবরারকে পেটাতে শুরু করেন। কিছুক্ষণ পর চতুর্থ বর্ষে অধ্যয়নরত বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আরও কয়েকজন নেতা-কর্মী আসেন। তারা আরেক দফা পেটান আবরারকে।

একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, পেটানোর একপর্যায়ে আবরার নিস্তেজ হয়ে পড়েন। তখন ছাত্রলীগের নেতারা আবরারের হলের সহপাঠীদের ডেকে আনেন এবং তাদের দিয়ে নিথর দেহটি দোতলা ও নিচতলার মাঝামাঝি সিঁড়িতে নিয়ে রাখেন।

এরপর ছাত্রলীগের নেতারা বাইরে যান রাতের খাবার খেতে। পরে যখন নিশ্চিত হলো আবরার বেঁচে নেই, তখন সিঁড়ি থেকে লাশ নিয়ে রাখা হয় হলের ক্যানটিনে। সোমবার ভোরে নেয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে।

ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার মরদেহে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। আবরার বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (১৭তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী ছিলেন।

 

টাইমস/এসআই

Share this news on:

সর্বশেষ

img
আ.লীগের নাশকতা ঠেকাতে গোপালগঞ্জে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি Nov 16, 2025
img
বিএনপি এখনো ইউনূস সরকারের প্রতি আস্থাশীল: রিজভী Nov 16, 2025
img
ফের পর্দায় জুন মালিয়া, ওয়েব সিরিজে নজরকাড়া প্রত্যাবর্তন! Nov 16, 2025
img
জুনে ফার্মগেটে শিবিরের সঙ্গে আন্দোলনের পরিকল্পনা করি : মুনতাসির Nov 16, 2025
img
সরকারকে গণভোট নিয়ে জনমনের সংশয় দূর করতে হবে: গোলাম পরওয়ার Nov 16, 2025
img
জুলাই শহীদদের পরিচয় শনাক্তে বিদেশি ফরেনসিক টিম আসছে ৫ ডিসেম্বর: আসিফ মাহমুদ Nov 16, 2025
img
অসুস্থতা কাটিয়ে ধীরে ধীরে সুস্থ হচ্ছেন সৌমিতৃষা Nov 16, 2025
img
শেখ হাসিনার ফাঁসির দাবিতে হাইকোর্ট এলাকায় বিক্ষোভ Nov 16, 2025
img
তাজুল ইসলাম, শিশির মনিরদের চালাকি ফাঁস হয়ে গেছে : মো. তারেক রহমান Nov 16, 2025
img
দেশের অর্থনীতি আগের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে: অর্থ উপদেষ্টা Nov 16, 2025
img
মালয়েশিয়ায় প্লাস্টিক কারখানায় অভিযান, ৪৫ বাংলাদেশিসহ ১২৩ বিদেশি আটক Nov 16, 2025
img
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ঢাকাসহ ৪ জেলায় বিজিবি মোতায়েন Nov 16, 2025
img
রয়্যাল ব্লু শাড়িতে নজর কাড়লেন নুসরাত ফারিয়া Nov 16, 2025
img
অপারেশন সিন্দুর থেকে কিছুই পাওয়া যায়নি: ফারুক আবদুল্লাহ Nov 16, 2025
img
‘তোমাকে বাংলাদেশের দরকার’, হাদীকে শিক্ষিকা মোনামি Nov 16, 2025
img
গাজীপুরে গ্রামীণ ব্যাংকের শ্রীপুর শাখায় পেট্রল বোমা হামলা Nov 16, 2025
img
সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে চায় কমিশন : সিইসি Nov 16, 2025
img
ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতে মার্কিন সামরিক মহড়ার নিন্দা মাদুরোর Nov 16, 2025
img
হঠাৎ কেন দিল্লি যাচ্ছেন নিরাপত্তা উপদেষ্টা : গোলাম মাওলা রনি Nov 16, 2025
img
সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান মির্জা ফখরুলের Nov 16, 2025