বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে চরম সাহসিকতা আর অসামান্য বীরত্ব ও আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ ৭ জনকে দেয়া হয় বীরশ্রেষ্ঠ উপাধি। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মো. রুহুল আমিন।

মোহাম্মদ রুহুল আমিন ১৯৩৫ সালে নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি উপজেলার বাঘপাঁচড়া (বর্তমান আমিননগর) গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধরত অবস্থায় তিনি শাহাদাত বরণ করেন।

এই মহান বীর যোদ্ধার স্মৃতিরক্ষার্থে ২০০৮ সালের ২০ জুলাই তার নিজ গ্রামে প্রতিষ্ঠা করা হয় রুহুল আমিন গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর।

নোয়াখালী জেলা সদর থেকে ২৫ কি.মি. উত্তর এবং সোনাইমুড়ী উপজেলার সদর থেকে ৮ কি.মি. পশ্চিমে দেওটি ইউনিয়নভুক্ত বর্তমান রুহুল আমিন নগর গ্রামে তার পৈত্রিক ভূমিতে নির্মাণ করা হয় এ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর। সেখানে ২০ শতাংশ জমির উপর ৬২ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত এ গ্রন্থাগার ও স্মৃতিজাদুঘর। এতে আছে একটি সুপরিসর এবং সুসজ্জিত পাঠ-কক্ষ ছাড়াও অভ্যর্থনা কক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক ও লাইব্রেরিয়ানের জন্য রয়েছে আলাদা কক্ষ। গ্রন্থাগারে আছে মুক্তিযুদ্ধের অনেক স্মৃতিবিজড়িত নথিপত্র ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক দুর্লভ সব বই। যেগুলো সাক্ষী হয়ে আছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের।

আজহার পাটোয়ারী ও জোলেখা খাতুনের প্রথম সন্তান বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ রুহুল আমিন এসএসসি পাশ করে ১৯৫৩ সালে জুনিয়র মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে পাকিস্তান নৌবাহিনীতে যোগদান করেন। ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে মোহাম্মদ রুহুল আমিন গোপনে পিএনএস বখতিয়ার নৌঘাঁটি ত্যাগ করে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। ২ নম্বর সেক্টরের অধীনে বহু স্থলযুদ্ধে বীরত্বের সঙ্গে অংশ নেন। বাংলাদেশ নৌবাহিনী গঠনের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সেক্টর ও সাব-সেক্টর থেকে নৌবাহিনীর সদস্যদের সেপ্টেম্বর মাসে একত্রিত করা হয়। ভারত সরকারের উপহার দুইটি টাগ-বোটে ‘পদ্মা’ ও ‘পলাশ’ নিয়ে শুরু হয় নৌযুদ্ধের প্রস্তুতি। গার্ডেন রীচ নৌ ওয়ার্কশপে টাগ-বোট দুটিতে দুটি করে বাফার গান আর চারটি করে ৫০০ পাউন্ড ওজনের মার্ক মাইন বহন করার উপযোগী করে গানবোটে রূপান্তরিত করা। ১২ অক্টোবর গার্ডেন রীচ জেটিতে আনুষ্ঠানিকভাবে গানবোট দুটিকে পানিতে ভাসান হয়। ‘পলাশ’-এর ইঞ্জিন রুমের প্রধান আর্টিফিসারের দায়িত্ব পান তিনি। ১০ ডিসেম্বর শুক্রবার মংলা বন্দরে পাকিস্তানি নৌঘাঁটি ও পিএনএস তিতুমীর দখল করার সময় পাক-বিমানবাহিনীর আক্রমণে অগ্নিদগ্ধ হয়ে তিনি শাহাদত বরণ করেন। মহান এ বীরকে সমাহিত করা হয় খুলনার রূপসা ফেরিঘাটের পূর্বপাড়ে।

যাওয়ার উপায়: ঢাকা থেকে সড়কপথে বাসে যেতে হবে নোয়াখালীর মাইজদী। জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ৩৫০-৪৫০ টাকা। সেখান থেকে যেকোন লোকাল বাস সার্ভিসে সোনাইমুড়ী যেতে হবে। অথবা সোনাইমুড়ী গামী সিএনজি অটোরিকশাযোগে যাওয়া যাবে স্মৃতি জাদুঘরে।

অথবা ঢাকা থেকে ট্রেনযোগেও যাওয়া যাবে। ট্রেনে করে নামতে হবে মাইজদী স্টেশনে। সেখান থেকে সোনাইমুড়ীগামী যেকোন লোকাল বাস সার্ভিস কিংবা সিএনজি অটোরিকশাযোগে যাওয়া যাবে।

থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা: থাকার জন্য নোয়াখালী শহরে রয়েছে আবাসিক হোটেল। একই সাথে খাবার সুবিধাও রয়েছে সেখানে। হোটেল পুবালি, হোটেল রয়েল, হোটেল রাফসান, হোটেল লিটন উল্লেখযোগ্য।

 

টাইমস/এইচইউ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ইরানে ইসরায়েলি হামলা, লাফিয়ে বাড়ল তেল ও স্বর্ণের দাম Apr 19, 2024
img
ঢাকাসহ ৬ বিভাগে ঝড়বৃষ্টির পূর্বাভাস Apr 19, 2024
img
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এলেন আরও ১৩ বিজিপি সদস্য Apr 19, 2024
img
জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের সদস্যপদ আটকে দিল যুক্তরাষ্ট্র Apr 19, 2024
img
ভারতের লোকসভা নির্বাচনে ভোট শুরু Apr 19, 2024
img
ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল Apr 19, 2024
img
রেমিট্যান্স উন্নয়নের মূল চালিকা শক্তি : সমাজকল্যাণমন্ত্রী Apr 18, 2024
img
ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম, ভ‌রি‌ ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৩৮ টাকা Apr 18, 2024
img
গবেষণায় বাংলাদেশে বিক্রি হওয়া শিশুখাদ্য সেরেলাক নিয়ে উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য Apr 18, 2024
img
আ.লীগের এমপি-মন্ত্রীর সন্তান-স্বজনদের উপজেলা নির্বাচন করতে মানা Apr 18, 2024