প্রিন্সেস ডায়ানা: এক মমতাময়ী রাজকুমারীর গল্প

ডায়ানা, ওয়েলস এর রাজকুমারী। বিংশ শতাব্দীর সৌন্দর্যের প্রতীক। তার অপরূপ সৌন্দর্য ও লাবণ্য সবাইকে বিমোহিত করতো। একইসঙ্গে সমাজসেবা মূলক কাজে অসামান্য অবদানের জন্যও তিনি খুব প্রশংসিত।

বিশেষ করে এইডস রোগীদের সাহায্যে ও স্থলমাইন নিষিদ্ধের পক্ষে প্রচারণায় তার অবদান তাকে স্বরণীয় করে রেখেছে।

ডায়ানা ১৯৮১ সালে রাজপুত্র চার্লসকে বিয়ে করে “প্রিন্সেস ডায়ানা অফ ওয়েলস” উপাধি গ্রহণ করেন। তার গর্ভেই এসেছেন ব্রিটিশ সিংহাসনের উত্তরাধিকারী প্রিন্স উইলিয়াম ও প্রিন্স হ্যারি।

ওই সময় তাকে বিশ্বের শীর্ষ ফটোগ্রাফড ব্যক্তিত্ব বলে মনে করা হতো। যার ছবি সর্বাধিকবার “পিপল” ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে স্থান পেয়েছিল।

১৯৬১ সালে রাজ পরিবারের সাথে সম্পর্কিত এক অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ডায়ানা। তার বাবা অ্যাডওয়ার্ড স্পেন্সার ছিলেন রাজা চার্লস দ্বিতীয় এর বংশধর। মাফ্রান্সিস ভিসকাউটেস অ্যালথর্প একজন মার্কিন বংশদ্ভূত রাজ পরিবারের সদস্য।

ডায়ানা যখন খুব ছোট তখন তার বাবা-মার সম্পর্ক ভেঙে যায়। পরে আদালতে এক তিক্ত বিতর্কের পর তিনি তার বাবার হেফাজতে চলে যান। ছাত্র হিসাবে তিনি তেমন উজ্জ্বল ছিলেন না, কিন্তু গান ও সঙ্গীতে তার ভালো দখল ছিল।

যখন হবু স্বামী রাজপুত্র চার্লসের সাথে তার পরিচয় হয়, তখন তিনি লন্ডনে একটি নার্সারি স্কুলের খণ্ডকালীন সহকারী শিক্ষক ছিলেন।

১৯৮১ সালে ডায়ানা প্রিন্স চার্লসকে বিয়ে করেন। তখন চার্লস তার থেকে ১৩ বছরের বড়। প্রায় এক বিলিয়ন লোক তাদের রাজকীয় বিয়ের অনুষ্ঠান উপভোগ করেছিল।

কিন্তু তাদের সংসার বেশি দূর গড়ায়নি। ১৯৯২ সালেই প্রিন্স চার্লসের সাথে তার সম্পর্কের ইতি ঘটে। এ ঘটনার পর তিনি মানসিকভাবে একেবারে ভেঙে পড়েন। ফলে তার মধ্যে হতাশা ও বিষণ্ণতাসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়।

ওয়েলসের রাজকুমারী হিসেবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ডায়না উপস্থিত থাকতেন। এর সুবাদে তিনি বিভিন্ন ধরনের সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন।

বিশেষ করে অসুস্থদের প্রতি ছিল তার অকৃত্রিম সহানুভূতি ও ভালোবাসা। একজন বিখ্যাত সেলিব্রেটি হয়েও এইডস রোগীদের সঙ্গে তার সর্বাধিক ফটোগ্রাফের রেকর্ড বেশ প্রশংসনীয় ছিল।

কারণ ওই সময় একটা বদ্ধমূল ধারণা ছিল যে কেবল সংস্পর্শের মাধ্যমেই এইডস ছড়ায়। ডায়ানা মানুষের এই ধারণাকে বদলে দিয়েছিলেন।

মানবকল্যাণে ডায়ানার আরেকটি অসামান্য অবদান হলো- বিশ্বব্যাপী স্থলমাইন নিষিদ্ধ করণে তার ব্যাপক প্রচারণা। ১৯৯৭ সালে অ্যাঙ্গোলায় স্থলমাইন অপসারণ তদন্ত করতে ডায়ানা নিজেই মাইন ক্ষেত্র পরিদর্শন করেছিলেন।

তার মৃত্যুর পর স্থলমাইন নিষিদ্ধকরণ বিষয়ক বিখ্যাত অটোয়া চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ চুক্তি সম্পাদনে ডায়ানার প্রচারণা ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিল বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।

মৃত্যুর কিছুদিন আগে ১৯৯৭ সালের ১৮ জুন তিনি মাদার তেরেসার সঙ্গে দেখা করেন। মাদার তেরেসা প্রিন্সেস ডায়ানার খুব প্রশংসা করেন।

ডায়ানা সম্পর্কে মাদার তেরেসা সবসময় বলতেন, “ডায়ানা আমার মেয়ে”। অন্যদিকে “মাদার তেরেসার কাছে আমি অতি ক্ষুদ্র”- এই বলে মাদার তেরেসাকে সম্মান জানাতেন প্রিন্সেস ডায়ানা।

ব্যক্তিগত জীবনে নানা সংকট থাকা সত্ত্বেও তিনি ছিলেন খুব জনপ্রিয়। কারণ মানুষ তাকে চিনতে পেরেছিল। সমাজসেবায় তার অবদান রাজ পরিবার সম্পর্কে এক নতুন ধারণার জন্ম দিয়েছিল যে প্রকৃত শাসক কখনো প্রজা থেকে দূরে থাকতে পারে না।

ডায়ানা বলতেন, ‘প্রত্যেক ব্যক্তিকে মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। সুযোগ পেলে প্রত্যেকেই ভালো কিছু করে দেখাতে পারে।’

১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্ট প্যারিসে এক সড়ক দুর্ঘটনায় ডায়ানা মারা যান।

ধারণা করা হয় তার মৃত্যু নিছক দুর্ঘটনা ছিল না। কারণ যে গাড়ির সঙ্গে তার গাড়ির সংঘর্ষ হয়েছিল তার চালক দোদি আল-ফায়েদ ওই সময় মাদকাসক্ত ছিলেন। তবে তার মৃত্যু আজও বিশ্ববাসীর কাছে রহস্যই রয়ে গেল।

ডায়ানার মৃত্যু ব্রিটিশ জনগণের পাশাপাশি অন্যান্য দেশেও গভীর প্রভাব ফেলেছিল। এ ঘটনা বিশ্ববাসীর হৃদয়ে এক অভূতপূর্ব দুঃখ ও সহানুভূতির জন্ম দিয়েছিল।

সেদিন তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে লাখ লাখ ফুলের তোড়ায় ভরে গিয়েছিল রাজ প্রাসাদ বাকিংহাম প্যালেস। তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের সাক্ষী হয়েছিল লাখো জনতা।

ডায়ানা সম্পর্কে শ্রী চিন্ময় বলেন, “প্রিন্সেস ডায়ানা, তোমার মমতাময়ী হৃদয় বিশ্বের এ প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত আবৃত করে রেখেছে। একটা সময় আসবে যখন সারা বিশ্ব তোমার যথাযথ মূল্যায়ন করবে, আরও বেশি প্রেমময় করে, আরও বেশী হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা দিয়ে”।

 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
শিল্পের আগে জীবনের গুরুত্ব নিয়ে স্পষ্ট বার্তা পঙ্কজ ত্রিপাঠীর Nov 15, 2025
img
বিশ্বকাপে মরক্কোর কাছে হেরে বিদায় যুক্তরাষ্ট্রের Nov 15, 2025
img
ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত জেনে একটি দল ষড়যন্ত্র করছে: মুরাদ Nov 15, 2025
img
মেক্সিকোর কাছে টাইব্রেকারে হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় আর্জেন্টিনার Nov 15, 2025
img
কিউই তারকা পেসারকে কোচ বানাল শাহরুখের দল Nov 15, 2025
img
টাইব্রেকারে প্যারাগুয়েকে হারিয়ে শেষ ষোলোতে ব্রাজিল Nov 15, 2025
img
চুয়াডাঙ্গায় বিএনপির ৫৩ নেতাকর্মী যোগ দিলেন জামায়াতে Nov 15, 2025
img
‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে গ্রেপ্তার হওয়া নারীর জামিন নামঞ্জুর Nov 15, 2025
img
গ্ল্যামার নিয়ে প্রথমদিকে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন কোয়েল মল্লিক Nov 15, 2025
img
মেসি-মার্টিনেজের গোলে বছরের শেষটা দারুণ এক জয়ে রাঙালো আর্জেন্টিনা Nov 15, 2025
img
মায়ের ত্যাগ স্মরণ করে আবেগাপ্লুত বোমান ইরানি Nov 15, 2025
img
অভিনেত্রী কামিনী কৌশল আর নেই Nov 15, 2025
img
জামায়াতের শোডাউনে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল কর্মীর Nov 14, 2025
img
বিয়ে ও মাতৃত্বের ইচ্ছা প্রকাশ করলেন শেহনাজ গিল Nov 14, 2025
img
ঈদগাহ মাঠের ঘটনার মূল আসামি জরেজুল ইসলাম গ্রেপ্তার Nov 14, 2025
img
১০ লাখ টাকা পুরস্কার পাচ্ছে বাংলাদেশের পদকজয়ী আর্চাররা Nov 14, 2025
img

ডয়চে ভেলে

বাংলাদেশ সীমান্তে ভারত কেন শক্তি বৃদ্ধি করছে? Nov 14, 2025
img
সংবিধান অনুযায়ী এখন নির্বাচনের কোনো ভিত্তি নেই : গোলাম পরওয়ার Nov 14, 2025
img
মনোনয়ন ইস্যুতে এবার ধানক্ষেতে নবদম্পতির রিভিউ আবেদন Nov 14, 2025
img
এনসিপির আখতারের কী ফাঁস করার হুমকি দিচ্ছেন মাহমুদ? Nov 14, 2025