আবরার হত্যায় ছাত্রলীগ নেতা অমিত সাহা গ্রেপ্তার

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় আলোচিত ছাত্রলীগ নেতা অমিত সাহাকে আটক করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকার সবুজবাগ থেকে তাকে আটক করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিবির যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম।

অমিত সাহা বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ১৬তম ব্যাচের ছাত্র। তিনি বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক উপসম্পাদক। এ নিয়ে আবরার হত্যার ঘটনায় ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হলো।

ডিবির যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম জানান, রাজধানীর সবুজবাগ থানাধীন রাজারবাগ কালীবাড়ি এলাকায় এক আত্মীয়ের বাসা থেকে অমিত সাহাকে আটক করা হয়েছে। তাকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হচ্ছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ফাহাদ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে আদালতে পাঠানো হবে।

ফাহাদকে যে কক্ষে নিয়ে পেটানো হয় সেই ২০১১ কক্ষের বাসিন্দা অমিত সাহা। আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর বুয়েট ক্যাম্পাসে আলোচনার শীর্ষে আছেন অমিত সাহা। সব ছাত্রছাত্রীর মুখে তার নাম। আবরার হত্যাকান্ডের পর থেকেই পলাতক ছিলেন তিনি। যদিও আবরার হত্যায় করা মামলার ১৯ জনের মধ্যে অমিতের নাম ছিলনা।

হত্যাকাণ্ডের আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭ ব্যাচের (ফাহাদের সহপাঠী) এক শিক্ষার্থীকে অমিত সাহা মেসেঞ্জারে জিজ্ঞেস করেন, আবরার ফাহাদ কি হলে আছে?

এ ধরনের একটি স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ১৭ ব্যাচের ওই শিক্ষার্থী নিজের পরিচয় প্রকাশ করতে না চাওয়ায় তারই এক সিনিয়র এ বিষয়টি ফেসবুকে প্রকাশ করেন।

মেসেজের এক ঘণ্টার মধ্যেই শের-ই বাংলা হলের ছাত্রলীগ নেতারা আবরারকে ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে যায়। ২০১১ নম্বর কক্ষে এনে তাকে লাঠি, চাপাতি ও স্ট্যাম্প দিয়ে পেটায়।

সূত্র বলছে, ৬ আগস্ট রাতে অমিত সাহার রুমে প্রথম দফায় মারধরের নেতৃত্ব দেন ছাত্রলীগ বুয়েট শাখার সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল। তার সঙ্গে মারধর শুরু করেন বুয়েট ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন ও উপসমাজ সেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল।

পরে যোগ দেন অনিক, জিওন, মনির এবং মোজাহিদুলসহ অন্যরা। প্রথম দফায় মারধর চলে রাত ১১টা পর্যন্ত। এরপর রাতের খাবার খাওয়ানো হয় আবরারকে। খাওয়ানো হয় ব্যথানাশক ট্যাবলেটও। দেয়া হয় মলম। দ্বিতীয় দফা মারধর শুরুর সময় অনিক ছিলেন সবচেয়ে মারমুখী।

আবরার এ সময় বারবার বমি করছিলেন। একপর্যায়ে তাকে টেনে নিয়ে যাওয়া হয় মুন্নার কক্ষে। সেখানে আবরারের শরীরের ওপর অনিক ক্রিকেট স্ট্যাম্প ভাঙেন। পরে আরেকটি স্ট্যাম্প দিয়ে বেধড়ক পেটানো হয়। তৃতীয় দফার মারধর শুরু হয় মুন্নার কক্ষে। তখন মধ্যরাত।

নির্মম পিটুনিতে আবরার লুটিয়ে পড়েন। এরপর নিথর দেহ টেনে-হিঁচড়ে নিচে নামানোর চেষ্টা করেন ঘাতকরা। মাঝ সিঁড়িতে যেতেই তারা বুঝতে পারেন আবরার মারা গেছেন। সিঁড়িতেই মরদেহটি রেখে তখন ওই স্থান ত্যাগ করেন তারা।

ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, যারা নির্বিঘ্নে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করেছে তারাই রাতে দীর্ঘ একটি সময় কাটিয়েছেন হল প্রভোস্ট জাফর ইকবাল খান ও বুয়েট ছাত্রকল্যাণ পরিচালক মিজানুর রহমানের সঙ্গে। ঘটনার পর তারা বেরিয়ে হলের গেটেই অবস্থান করেন।

সকালের দিকে হল সরগরম হয়ে উঠলে শুরু হয় ঘাতকদের ছোটাছুটি। সবচেয়ে বেশি মারধর করা অনিক ওরফে মাতাল অনিক দৌড়ে চলে যান তার রুমের দিকে। পরে ডাকা হয় ডাক্তার। সাদা পাঞ্জাবি-পায়জামা পরা ওই ডাক্তার আবরারকে দেখে মৃত ঘোষণা করেন।

এর ২ মিনিট পর খুনিরা একটি স্ট্রেচারের ব্যবস্থা করেন। স্ট্রেচারটি সিঁড়ির মুখে বারান্দায় রাখা হয়। এর ২০ মিনিট পর লাশের কাছে আসেন প্রভোস্ট জাফর ইকবাল খান এবং ছাত্রকল্যাণ পরিচালক মিজানুর রহমান।

পরে প্রভোস্ট এবং ছাত্রকল্যাণ পরিচালককে খুনিরা নিজেদের মতো করে ঘটনার বর্ণনা দিতে থাকেন। চশমা পরা রাসেল এবং সবচেয়ে বেশি মারধর করা অনিককে প্রভোস্টের সঙ্গে দীর্ঘ সময় কথা বলতে দেখা যায়।

আবরার হত্যা: আরও তিন আসামির রিমান্ড

 

টাইমস/এইচইউ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ডিসেম্বর থেকে শান্তিতে পুরস্কার চালু করছে ফিফা Nov 06, 2025
img
যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক পরীক্ষার বিষয়ে রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রীর কড়া বার্তা Nov 06, 2025
img
টি-টোয়েন্টি সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ৩ রানে জিতল নিউজিল্যান্ড Nov 06, 2025
img
ঢাকায় এক মঞ্চে ইতিহাস গড়তে আসছেন দুই রক লেজেন্ড Nov 06, 2025
img
মুগ্ধের ভাইয়ের বিএনপিতে যোগ দেওয়ার বিষয়ে সামান্তার মন্তব্য Nov 06, 2025
img
প্রতিযোগিতার মধ্যেও দাপট ধরে রেখেছে হার্শবর্ধনের নতুন ছবি Nov 06, 2025
img
সহিংসতার শঙ্কা নিয়ে সরকারের কোনো দ্বিমত নেই : প্রেস সচিব Nov 06, 2025
img
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুরের মালিকানা বদল হতে চলেছে Nov 06, 2025
img
পারফিউম লঞ্চে ফ্যাশন দুনিয়ায় নতুন ট্রেন্ড আনলেন সামান্থা-তামান্না Nov 06, 2025
img
চেষ্টা আর অধ্যাবসায়ের মাধ্যমে সফলতার পথে: শ্রুতি দাস Nov 06, 2025
img
মা হওয়ার পর জীবন বদলে গেছে: রানী মুখার্জি Nov 06, 2025
img
জন আব্রাহামের সঙ্গে ‘ফোর্স ৩’-এ যোগ দিলেন হার্শবর্ধন, শুরু হবে নতুন অধ্যায় Nov 06, 2025
img
‘আমি পুতুল নই’- মিস ইউনিভার্সের মঞ্চে বিস্ফোরক ফাতিমা Nov 06, 2025
img
বিপিএলে রাজশাহীর হয়ে খেলবে তানজিদ তামিম Nov 06, 2025
img
যত দিন বেঁচে থাকব বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বেঁচে থাকব : কাদের সিদ্দিকী Nov 06, 2025
img
মুরুব্বি মানুষ যা করবে, সেটাই ঠিক: সর্ব মিত্র চাকমা Nov 06, 2025
img
জন্মের সময় নয়, পরিচয় নির্ধারণ আপনার হাতে: দীপিকা পাড়ুকোন Nov 06, 2025
img
স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে গ্রেসি ম্যানশনে যাওয়া নিয়ে যা জানালেন মামদানি Nov 06, 2025
img
সব ধরনের গানই দেশের সাংস্কৃতিক পরিসরে চলবে : হেমা চাকমা Nov 06, 2025
img
গণভোট না হলে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে না : গাজী আতাউর Nov 06, 2025