অশান্ত নেপাল, সেনা নিয়ন্ত্রণে কাঠমান্ডু বিমানবন্দর

নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি পদত্যাগ করার পরেও দেশটিতে অশান্তি অব্যাহত রয়েছে। রাজধানী কাঠমান্ডুর বিমানবন্দর এখনো বন্ধ। দেশটির অন্যতম প্রধান এই বিমানবন্দরটি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে।

নেপালের পার্লামেন্ট ভবন, সিংহদরবার, নেতা-মন্ত্রীদের বাড়িসহ বহু প্রতিষ্ঠানে মঙ্গলবার আগুন লাগিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন একাধিক মন্ত্রী। আক্রমণ চালানো হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রচণ্ডের বাড়িতেও। তিনিও বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন।

কান্তিপুর টেলিভিশনের ডেপুটি এডিটর রুপেশ জানিয়েছেন, “আমাদের অফিসেও আক্রমণ চালানো হয়েছে। আমাকে মারধর করা হয়েছে। পরিস্থিতি এখনো অগ্নিগর্ভ। সেনাবাহিনী শান্তিপূর্ণ আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে।”

বুধবার সকালে কাঠমান্ডুর একাধিক জায়গার দখল নিয়েছে সেনাবাহিনী। সিংহদরবার অঞ্চলে সেনাবাহিনী টহল দিচ্ছে। বিমানবন্দর এবং পশুপতিনাথ মন্দিরেও সেনা প্রহরা বসেছে। তবে বিমানবন্দর এখনো পর্যন্ত খোলা হয়নি। বুধবার বিকেলের দিকে বিমানবন্দর খুলতে পারে বলে কাঠমান্ডু বিমানবন্দরের সূত্র জানিয়েছে।

এদিকে এরপর নেপালের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। জেন জি আন্দোলনের সদস্য রজত দাস জানিয়েছেন, “আমরা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক পরিবর্তন চাইছি। এখন নেপালের রাজনৈতিক পরিকাঠামো আমরা মানছি না। সবকিছু নতুন করে ঢেলে সাজানো দরকার।”

বস্তুত নতুন রাজনৈতিক পরিকাঠামো নিয়ে জেন জি আন্দোলনকারীদের মধ্যেও দ্বিমত আছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। নেপালের সিনিয়র সাংবাদিক ভাস্কর রাজ জানিয়েছেন, “পরিস্থিতি শান্ত না হলে ভবিষ্যৎ কী হবে, তা বলা কঠিন। সেনাবাহিনী আপাতত বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করছে। এরপর আলোচনার মাধ্যমে সমাধানসূত্র খুঁজতে হবে।”
তবে নেপালের একটি রাজনৈতিক থিংকট্যাংকের সূত্র জানিয়েছে, জেন জি আন্দোলনকারীদের অন্যতম পছন্দের নেতা কাঠমান্ডুর বর্তমান মেয়র বলেন্দ্র শাহ। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়র নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন এবং বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছিলেন। সামাজিক স্তরে তিনি জনপ্রিয়।

বুধবার বলেন্দ্রও বিক্ষোভকারীদের শান্তিপূর্ণ আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন। আলোচনার মাধ্যমে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন তিনি। তবে বলেন্দ্রই পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হবেন কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয় বলে মনে করছেন ওই রাজনৈতিক থিংক ট্যাংকের সূত্র।

নেতারা কোথায়

প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি পদত্যাগ করার পর তার বাড়িতে আক্রমণ হয়েছে। মঙ্গলবার একটি চপারে করে তাকে উড়ে যেতে দেখা যায়। সূত্র জানিয়েছে, সেনাবাহিনী তাকে এবং আরও বেশ কিছু মন্ত্রীকে নিজেদের সেফ হাউসে রেখেছে। মনে করা হচ্ছে, প্রচণ্ডকেও সেফ হাউসে রাখা হয়েছে। কেউ এখনো পর্যন্ত দেশের বাইরে যেতে পারেননি বলে মনে করা হচ্ছে।

অন্যদিকে জেন জি আন্দোলনকারীদের একটি বড় অংশের অভিযোগ, সেনাবাহিনী শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে নেতা-মন্ত্রীদের আশ্রয় দিচ্ছে। যদিও বিক্ষোভকারীদের সকলে এই অভিযোগের সঙ্গে একমত নন।
মঙ্গলবার কাঠমান্ডু ছাড়াও পোখরাসহ নেপালের আরও বেশ কিছু শহরে এই বিক্ষভ ছড়িয়েছে। সেখানেও স্থানীয় প্রশাসনিক ভবনে আগুন লাগানো হয়েছে।

এবি/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বিশ্ব প্রতিযোগিতায় কেবল ডিগ্রি নয়, প্রয়োজন সক্ষমতা: আসিফ নজরুল Dec 22, 2025
img
ভবিষ্যতে শিক্ষার ওপর ভ্যাট বসাবে না বিএনপি: মাহদি আমিন Dec 22, 2025
img
চেহারার গড়ন নিয়ে স্মৃতি মন্ধানাকে কটুক্তি, সলমানের সঙ্গে তুলনা Dec 22, 2025
img
কোটি মানুষের সংবর্ধনায় তারেক রহমানকে বরণ করা হবে : ইশরাক হোসেন Dec 22, 2025
img
ফয়সালের দেশের বাইরে চলে যাওয়ার তথ্যের বিষয়ে পুলিশের মন্তব্য Dec 22, 2025
img
সিলেট-৫ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত: ৮ দলীয় জোটের প্রার্থী আনোয়ার হোসেন। Dec 22, 2025
img
ঘন কুয়াশায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ Dec 22, 2025
img
জকসু নির্বাচন সামনে রেখে উচ্চপর্যায়ের সভা ডেকেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় Dec 22, 2025
img
দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জোনায়েদ সাকির Dec 22, 2025
img
ফয়সাল ও সংশ্লিষ্টদের ব্যাংক হিসাবে ১২৭ কোটি টাকার লেনদেন Dec 22, 2025
img
যে কোনো মূল্যে ফেয়ার নির্বাচন করতে হবে : রুমি Dec 22, 2025
img
বাঙালি সংস্কৃতিবিরোধীরা ছায়ানটের হামলা চালিয়েছে: ছায়ানট Dec 22, 2025
img
সাতক্ষীরার ৪টি আসনে ৮ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র সংগ্রহ Dec 22, 2025
img
অহংকার নয়, নম্রতাই আসল সৌন্দর্য: ক্যাটরিনা কাইফ Dec 22, 2025
img
সাকিবের ম্যাচসেরার দিনে জয় পেল এমআই এমিরেটস Dec 22, 2025
img
কূটনৈতিক সাংবাদিকতা পররাষ্ট্রনীতিকে শক্তিশালী করছে : পররাষ্ট্রসচিব Dec 22, 2025
img
বাবাকে দেখেই আমি কাজ আর সংসার ব্যালেন্স করা শিখেছি: কোয়েল মল্লিক Dec 21, 2025
img
বাজেভাবে হারলেও অধিনায়কত্ব ছাড়ছেন না স্টোকস Dec 21, 2025
img
কটু কথার জবাবে নীরবতাই সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ: পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায় Dec 21, 2025
img
রিকশাচালকের করা মামলায় বিএনপির সাবেক এমপি কারাগারে Dec 21, 2025