ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে বাধ্য করতে ভারত ও চীনের ওপর ১০০ শতাংশ পর্যন্ত আমদানি শুল্ক বসানোর জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে দেনদরবার করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
গত মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) ইউরোপীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক চাপ বৃদ্ধির বিভিন্ন বিকল্প নিয়ে আলোচনার সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ভারত ও চীনের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের আহ্বান জানান। ওই আলোচনার সাথে সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে এ খবর জানিয়েছে ব্রিটিশ দৈনিক ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস।
সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, ট্রাম্প মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে মার্কিন এবং ইউরোপীয় কর্মকর্তাদের একটি বৈঠকে ফোনে যোগ দেন। ওই বৈঠকে কর্মকর্তারা রাশিয়ার যুদ্ধের অর্থায়ন বন্ধ করার উপায় খুঁজছিলেন। এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা প্রস্তুত। তবে এটা তখনই করব যদি আমাদের ইউরোপীয় অংশীদাররা এগিয়ে আসে।’
আরেক কর্মকর্তা বলেন, ইইউ যদি বেইজিং ও নয়াদিল্লির ওপর শুল্ক আরোপ করে, তাহলে ওয়াশিংটনও একই পদক্ষেপ নেবে, যার ফলে ভারত ও চীনের পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। বর্তমানে ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক রয়েছে। আর চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক দাঁড়িয়েছে ৩০ শতাংশে।
এক মার্কিন কর্মকর্তা ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, ‘আজ সকালে প্রেসিডেন্ট স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন- সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো বড় অঙ্কের শুল্ক বসানো এবং তা বহাল রাখা, যতক্ষণ না চীন রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ করে। ওই তেলের অন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।’
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধবিরতি নিয়ে সমঝোতার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার কারণে হোয়াইট হাউসে হতাশা বাড়ছে এবং এর মধ্যেই ট্রাম্পের এই প্রস্তাব এসেছে। দায়িত্ব নেয়ার পরপরই তিনি দাবি করেছিলেন যে, কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই যুদ্ধ থামাতে পারবেন।
এর আগে গত রোববার ক্রেমলিনের ব্যাপক বিমান হামলার পর ট্রাম্প রাশিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞার হুমকি দেন। পাশাপাশি রাশিয়ার তেল কেনা দেশগুলোর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দেন তিনি। তবে এখন পর্যন্ত শুধু রাশিয়ার তেল কেনার কারণে ভারতের ওপর শাস্তিমূলক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
চীনের ক্ষেত্রে ওয়াশিংটন এখনও সুনির্দিষ্টভাবে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। চলতি বছরের এপ্রিলে ট্রাম্প চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ালেও মে মাসে বাজারে বড় ধরনের ধাক্কা লাগায় আবার কিছুটা শিথিল করেন।
রাশিয়া থেকে তেল কেনার জন্য ‘জরিমানা’ হিসাবে ভারতের উপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প। মার্কিন প্রশাসনের অভিযোগ, তেল কিনে রাশিয়ার হাত শক্ত করছে ভারত। তেল বিক্রি করে যা মুনাফা করছে তা ইউক্রেন যুদ্ধে কাজে লাগাচ্ছে ভ্লাদিমির পুতিনের সরকার।
তাই রাশিয়াকে যদি যুদ্ধ থেকে বিরত করতে হয় তবে তাদের বন্ধুরাষ্ট্র চীন ও ভারতের উপর শুল্ক-হামলা করতে হবে, এমনই মনে করছে ট্রাম্প প্রশাসন। দিন দুয়েক আগে মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট দাবি করেন, রাশিয়া ও তার থেকে তেল কেনা দেশগুলোর ওপর আরও শুল্ক এবং নিষেধাজ্ঞা চাপানো হলে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর অর্থনীতি ভেঙে পড়তে পারে!
এই ধরনের অর্থনৈতিক পতনই কেবল রাশিয়ার প্রেসিডেন্টকে আলোচনার টেবিলে বসাতে পারে। সেই একই পথের কথা বললেন ট্রাম্পও। রাশিয়া থেকে তেল কেনার দিক থেকে ভারত এখন দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। ভারত ছাড়াও রাশিয়া থেকে তেল কেনে চীনও। তবে ভারত ও চীনের এই সিদ্ধান্তে অনড় থাকায় খুশি নন ট্রাম্প।
ইএ/টিকে