ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ভাইস প্রেসিডেন্ট (ভিপি) পদে জয়লাভ করেছেন খাগড়াছড়ির সন্তান মো. আবু সাদিক কায়েম। এই খবরে খাগড়াছড়ি জেলায় বইছে আনন্দের বন্যা।
শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে খাগড়াছড়ি সদরের নয়নপুর এলাকায় সাদিক কায়েমের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তার পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে।
সাদিকের বাবা মোহাম্মদ আবুল কাশেম বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে আমার ছেলে ভিপি নির্বাচিত হওয়ায় আমি অত্যন্ত আনন্দিত ও গর্বিত। তাকে যারা ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমার ছেলে যেন তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারে, সে জন্য সবার দোয়া কামনা করছি।
পরিবারের তথ্যমতে, সাদিক পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে অন্যতম। তাদের মধ্যে একজন বোন বিবাহিত। এক ভাই ও এক বোন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত এবং অন্য এক বোন খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে পড়াশোনা করছেন।
প্রতিবেশী মো. ইলিয়াস বলেন, সাদিক কায়েমের এ অর্জন শুধু তার ব্যক্তিগত নয়, বরং সমগ্র পার্বত্য অঞ্চলের জন্য গর্বের বিষয়। যারা সৎ, সাহসী এবং স্থানীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসী এই বিজয় তাদেরও।
প্রতিবেশী মায়ারানী দে বলেন, শৈশব থেকেই সাদিককে দেখছি। সে যেমন মেধাবী, তেমনি ভদ্র ও বিনয়ী। তার এই সাফল্য পুরো খাগড়াছড়িবাসীর মুখ উজ্জ্বল করেছে।
সাদিক কায়েমের শিক্ষাজীবন শুরু হয় খাগড়াছড়ির বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া আদর্শ মাদ্রাসা থেকে। ২০১৪ সালে দাখিল পরীক্ষায় তিনি গোল্ডেন জিপিএ-৫ অর্জন করেন। এরপর চট্টগ্রামের বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল মাদ্রাসা থেকে ২০১৬ সালে আলিম পরীক্ষায়ও জিপিএ-৫ পান। দাখিল ও আলিম উভয় স্তরেই তিনি বোর্ড মেধাবৃত্তি লাভ করেন।
এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ২০১৬-১৭ সেশনে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।
তার প্রাক্তন শিক্ষক নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেন, সাদিক ছাত্র হিসেবে অত্যন্ত মেধাবী ও ভদ্র ছিল। একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি সে নানা বিষয়ে জানার প্রতি আগ্রহী ছিল।
সাদিক কায়েম ২০১১ সালে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সমর্থক হিসেবে রাজনীতিতে যুক্ত হন। ২০১৩ সালে তিনি সাথী পদে উন্নীত হন এবং ২০২৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি সংগঠনের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
জামায়াতে ইসলামীর খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সেক্রেটারি মিনহাজুর রহমান বলেন, ২০১১ সালে আমি ছাত্রশিবিরের জেলা সভাপতি থাকার সময় সাদিক আমাদের সঙ্গে যুক্ত হন। পরবর্তী সময়ে তিনি কর্মী এবং পরে সাথী হন। খাগড়াছড়ির বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তার অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো।
২০১৪ সালে চট্টগ্রামে চলে যাওয়ার পরও তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিলেন। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র সংসদ-এর সাবেক সভাপতি ছিলেন। এছাড়া তিনি হিল সোসাইটি ও অন্যান্য যুব সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং বর্তমান সরকারবিরোধী আন্দোলনেও তার সক্রিয় ভূমিকা ছিল বলে জানা গেছে।
এমকে/টিকে