জাকসুর ফলাফল ঘোষণায় এত সময় লাগার কারণ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে ভোটগ্রহণের ৪৮ ঘণ্টা পর ফল ঘোষণা করা হয়েছে। এ নির্বাচনে ভিপি পদে জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুর রশিদ জিতু। এছাড়া সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছেন সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম।

নির্বাচনে ফলাফল ঘোষণার পরও আলোচনায় রয়েছে ভোট গণনায় দীর্ঘ সময় লাগার কারণ। এবারের জাকসু নির্বাচনে মোট ১১ হাজার ৯১৯ জন ভোটার রয়েছেন। ভোটগ্রহণ শেষে নির্বাচন কমিশন জানায়, ৮ হাজার ১৬ ভোটার ভোট দিয়েছেন। অর্থাৎ ৬৭ দশমিক ৯ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন। ফলে অল্প সংখ্যক ভোট গণনায় কেন এত সময় লেগেছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

জাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, কয়েকটি প্যানেলের দাবির প্রেক্ষিতে ওএমআর পদ্ধতিতে মেশিনে ভোট গণনার পরিবর্তে ম্যানুয়ালি বা হাতে ভোট গণনা করা হয়েছে। এতে করে ভোট গণনায় বেশি সময় লেগেছে।

জাকসু নির্বাচনের ফলাফল দ্রুত প্রকাশ হবে— এমনটাই ধারণা করা হয়েছিল শুরুতে। তবে বাস্তবে নানা অনিয়ম, অভিযোগ ও প্রশাসনিক জটিলতায় একের পর এক বিলম্বিত হয়েছে ফল ঘোষণা। কয়েক দফা সময় নির্ধারণ করেও তা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয় নির্বাচন কমিশন।
জাকসুর ফলাফল ঘোষণায় কেন এত সময় লাগল?

গত ১১ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলে ভোটগ্রহণ। ভোটার উপস্থিতির কারণে দুটি কেন্দ্রে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অব্যাহত রাখা হয়। এরপর আটটি কেন্দ্রের ব্যালটবক্স ও নির্বাচনী উপকরণ সংগ্রহ করে পাঠানো হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে অবস্থিত নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ে। রাত ১০টার দিকে শুরু হয় ভোট গণনা।

তবে তার আগেই অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল। এক সংবাদ সম্মেলনে প্যানেলটির জিএস প্রার্থী তানজিলা হোসেন বৈশাখী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে মিলে ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের’ অভিযোগ তোলেন।

তিনি বলেন, আমরা একটি ফ্রি ও ফেয়ার নির্বাচন চেয়েছি। অথচ ভোটকেন্দ্র মনিটরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জামায়াত নেতার মালিকানাধীন কোম্পানিকে। সিসিটিভি ক্যামেরা ও ওএমআর মেশিনও সরবরাহ করেছে ওই প্রতিষ্ঠান।

এর জবাবে শিবির-সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের জিএস প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম পাল্টা দাবি করেন, যে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তার মালিক আসলে বিএনপি ঘরানার।

পরবর্তীতে সম্প্রীতির ঐক্য, সংশপ্তক পর্ষদসহ আরও চারটি প্যানেল নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেয়। এছাড়া তিনজন নির্বাচন সংশ্লিষ্ট শিক্ষক— অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক শামীমা সুলতানা এবং অধ্যাপক নাহরিন ইসলাম খান নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তুলে দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন। জানা যায়, এ তিনজনই বিএনপিপন্থি শিক্ষক রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।

এক পর্যায়ে ফলপ্রকাশে বিলম্ব এবং ওএমআর মেশিনের গণনার নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের পক্ষে সংগঠক সোহাগী সামিয়া দাবি করেন, ফল ম্যানুয়ালি গণনার মাধ্যমে প্রকাশ করতে হবে। এ অবস্থায় জরুরি বৈঠকে বসে নির্বাচন কমিশন এবং সিদ্ধান্ত নেয়, ব্যালট পেপার হাতে গুনেই ফল ঘোষণা করা হবে। রাত ১০টার দিকে ম্যানুয়াল গণনা শুরু হয়।

তবে ভোট গণনার মধ্যেই শুক্রবার সকালে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান জান্নাতুল ফেরদৌস নামের এক শিক্ষক। তিনি ভোট গণনায় অংশ নিতে এসেছিলেন। তার মৃত্যুতে আবারও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলের রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. সুলতানা আক্তার বলেন, আমি ক্ষুব্ধ। এই মৃত্যু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের অব্যবস্থাপনার ফল। আমি বিচার চাই। আপনারা যদি শেষে গিয়েই হাতে গণনা করেন, তাহলে মেশিন কেন কিনলেন?

অন্যদিকে প্রায় ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও তখনো কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ভোট গণনা শুরু হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণে উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠকে বসে নির্বাচন কমিশন। সিনেট ভবনের সামনে ফল প্রকাশের দাবিতে অবস্থান নেন বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীরা।

বৈঠকের পর জানানো হয়, ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে গণনার মাধ্যমেই ফল ঘোষণা করা হবে। প্রয়োজনে অতিরিক্ত জনবল নিয়োগের কথাও জানানো হয়। এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশনের আরেক সদস্য অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তারও অনিয়মের প্রতিবাদ জানিয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

জাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, হল ইউনিয়নের জন্য একটি এবং কেন্দ্রীয় সংসদের জন্য তিনটি ব্যালট পেপার ছিল। মোট প্রার্থী ছিলেন ১৭৭ জন। এত বিশাল পরিমাণ ব্যালট হাতে গণনা করতে সময় লাগাটাই স্বাভাবিক।

এবি/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
মুক্তির লড়াই কোনো আইন বা সংবিধান মেনে হয় না : ব্যারিস্টার ফুয়াদ Nov 02, 2025
img
জাতীয় সংসদে উচ্চ কক্ষ হলে কোরবানির গরুর দরে আসন বিক্রি হবে: ব্যারিস্টার ফুয়াদ Nov 02, 2025
img
গুরবাজের দুর্দান্ত ব্যাটিং, জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ করল আফগানিস্তান Nov 02, 2025
ভিন্নধর্মী গল্প নিয়ে আসছে ‘দম’ Nov 02, 2025
img
ট্রাম্প জানেন না, কাল কী করবেন : ভারতের সেনাপ্রধান Nov 02, 2025
একাত্তরের হত্যাযজ্ঞের অভিযোগ অস্বীকার করলো জামায়াত Nov 02, 2025
img
নিজ দেশেই হামলার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে উসকালেন শান্তিতে নোবেলজয়ী মাচাদো Nov 02, 2025
img
ঠিক সময়ে নির্বাচন আয়োজন নিয়ে সন্দেহ তারেক রহমানের Nov 02, 2025
img
জলাবদ্ধতা নিরসনে এক বছরে অগ্রগতি ৫০ শতাংশ : চসিক মেয়র Nov 02, 2025
img
সুশাসন চাইলে যোগ্য লোকের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে: মাসুদ সাঈদী Nov 02, 2025
img
শাহরুখের সাম্রাজ্য সামলানোর জন্য কত কোটি পারিশ্রমিক পান পূজা? Nov 02, 2025
img

নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপ ২০২৫

ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২৯৯ রানের টার্গেট দিল ভারত Nov 02, 2025
img
প্রেমিকার জন্মদিনে আবেগী ও রোমান্টিক বার্তা হৃতিক রোশনের Nov 02, 2025
img
মেয়ের জন্মদিনে কাঞ্চন মল্লিকের আবেগঘন বার্তা Nov 02, 2025
img
জকিগঞ্জ সীমান্তে বিএসএফের অনুপ্রবেশ, স্থানীয়দের ধাওয়া Nov 02, 2025
img
৫২ বছর বয়সেও কোটি ভক্তের হৃদয়ে ঐশ্বরিয়া Nov 02, 2025
img
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ফেব্রুয়ারিতেই অমর একুশে বইমেলা Nov 02, 2025
img
মান্নতে আসছেন না শাহরুখ, হতাশ হাজারো ভক্ত Nov 02, 2025
img
ডা. শফিকুর রহমানকে মোবারকবাদ ও শুভেচ্ছা চরমোনাই পীরের Nov 02, 2025
img
খাবারের খোঁজে দুই দিন ধরে রাস্তায় ঘুরছিলেন শাহরুখ! Nov 02, 2025