ডানপন্থী রাজনৈতিক কর্মী ও বিতর্কিত বক্তা চার্লি কার্ক হত্যাকাণ্ডের পর অভিযুক্ত টাইলার রবিনসন তার রুমমেটের সঙ্গে বার্তা আদান-প্রদান করেছেন। রুমমেটকে তার প্রেমিকা বলে দাবি করছেন প্রসিকিউটররা। সেই কথোপকথন প্রসিকিউটরদের হাতে এসেছে। ওই বার্তালাপে হত্যার মোটিফ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা মিলেছে বলে দাবি করছেন তারা।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, হত্যার পরপরই রুমমেটকে বার্তা পাঠান রবিন। সেখানে হত্যার কথা স্বীকার করেন তিনি এবং কী কারণে এমন কাজ করলেন সেটিও উল্লেখ করেন। সেটি প্রসিকিউটরদের কাছে পাঠিয়েছেন তার রুমমেট। নিরাপত্তার স্বার্থে এখনো রবিনসনের রুমমেটের পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।
বিবিসি রবিনসন ও তার রুমমেটের পুরো বার্তালাপটি প্রকাশ করেছে। পাঠকদের জন্য ওই বার্তালাপের অনুবাদ দেওয়া হলো—
রবিনসন: যা করছো তা বাদ দিয়ে আমার কী-বোর্ডের নিচে দেখো।
(কী-বোর্ডের নিচে একটি নোট খুঁজে পান রবিনসনের রুমমেট। ওই নোটে লেখা ছিল—‘চার্লি কার্ককে হত্যা করার সুযোগ পেয়েছি এবং আমি এটা কাজে লাগাতে চাই।’)
রুমমেট: ‘কি?????????? তুমি মজা করছো, তাই না????
রবিনসন: মাই লাভ, আমি এখনো ঠিক আছি। কিন্তু আমি এখনো ওরেমে আটকে আছি। ফিরতে খুব বেশি সময় লাগার কথা না। কিন্তু আমার রাইফেলটা নিতে হতে। সত্যি বলতে, আমি চেয়েছিলাম জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এই সত্যটা আমি গোপন রাখব। এতে তোমাকে জড়ানোর জন্য খুবই দুঃখিত।
রুমমেট: কাজটা যে করেছে, সে তুমি নও, তাই না???
রবিনসন: আমিই করেছি। দুঃখিত
রুমমেট: কিন্তু ওরা যে একজনকে গ্রেপ্তার করল?
রবিনসন: না, ওরা একটা উন্মাদ বুড়ো লোককে ধরেছে। তারপর আমার মতো জামা-কাপড় পরা একজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। আমি গুলি করার একটু পরই রাইফেলটি যেখানে রেখেছিলাম সেখান থেকে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করেছিলাম। কিন্তু শহরের ওই অংশটি লকডাউন করা হয়েছে। সবকিছু শান্ত, তবে একটি গাড়ি এখনো সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। শিগগিরই বেরিয়ে পড়তে পারব।
রুমমেট: কেন?
রবিনসন: কেন করলাম খুন?
রুমমেট: হ্যাঁ
রবিনসন: বিদ্বেষ আর সহ্য করতে পারছিলাম না। কিছু ঘৃণা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান সম্ভব নয়।
রবিনসন: আমি যদি গোপনে আমার রাইফেলটা নিয়ে নিতে পারি, তাহলে আর কোনো প্রমাণ থাকবে না। আবার সেটি উদ্ধারের চেষ্টা করব। মনে হয় না তারা রাইফেলটি পেয়েছে।
রুমমেট: এই পরিকল্পনা কত দিন ধরে করেছ তুমি?
রবিনসন: এক সপ্তাহের কিছু বেশি সময় ধরে। আমি রাইফেলটির কাছে যেতে পারি, কিন্তু একটা গাড়ি এখনো ওটার কাছে আছে। আমার মনে হয় ওরা এরই মধ্যে জায়গাটা তল্লাশি চালিয়েছে। কিন্তু আমি ঝুঁকি নিতে চাই না।
রবিনসন: কেন যে আগেই রাইফেলটা তুলে নিলাম না। যদি সেটি উদ্ধার করতে না পারি, বাবাকে কী বলব! ওটা দাদার রাইফেল ছিল। আমি জানি না ওটায় কোনো সিরিয়াল নম্বর ছিল কিনা। কিন্তু আমাকে ট্রেস করতে পারবে না। তবে, ওখানে আমার হাতের ছাপ রয়ে গেছে। মনে হচ্ছে, রাইফেলটা ফেলেই যেতে হবে। কিন্তু বাবাকে কী বোঝাব তা নিয়ে চিন্তিত।
রাইফেলটা একটা তোয়ালে দিয়ে পেঁচিয়ে রেখেছিলাম।
মনে আছে, আমি যে বুলেটে কিছু শব্দ খোদাই করছিলাম? ওই মেসেজগুলো আসলে একটা বড় মজার খোরাক (meme)। সত্যি বলছি, যদি ফক্স নিউজে ‘নোটিসেস বালজ ইউবব্লিউইউ’ লেখা দেখতে পাই, তাহলে আমার স্ট্রোক হয়ে যেতে পারে! ঠিক আছে, রাইফেলটা রেখেই যেতে হবে, খুব খারাপ লাগছে। আমার মনে হয় ওই স্কোপটার দাম ২ হাজার ডলার ছিল।
রবিনসন: মেসেজগুলো ডিলিট করে দাও।
রবিনসন: আমার বাবা রাইফেলটার ছবি চাচ্ছে। পুলিশ নাকি রাইফেলের ছবি প্রকাশ করেছে। বাবা আমাকে কল করে যাচ্ছে অনবরত। ধরছি না।
রবিনসন: যেদিন থেকে ট্রাম্প ওভাল অফিসে ঢুকেছে, আমার বাবা ট্রাম্পের মাগার (মেক আমেরিকা গ্রেট আগেইন) ভক্ত হয়ে গেছে।
রবিনসন: আমি নিজেই পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করব। আমার প্রতিবেশীদের একজন শেরিফ।
রবিনসন: শুধু তোমার জন্য আমি চিন্তিত, মাই লাভ।
রুমমেট: আমি তোমার জন্য বেশি চিন্তিত
রবিনসন: দয়া করে কেন গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলো না। কোনো সাক্ষাৎকার দিয়ো না, কোনো কথাই বলো না। যদি পুলিশ কিছু জিজ্ঞেস করে তাহলে একজন আইনজীবী চেয়ো এবং চুপ থেকো।
সূত্র-বিবিসি
এসএন