বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির মামলায় ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশন (আরসিবিসি) ব্যাংকে থাকা ৮১ মিলিয়ন ডলার আদালতের মাধ্যমে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) জানায়, ঢাকার একটি বিশেষ আদালত আরসিবিসি ব্যাংকে থাকা ওই ডলার বাজেয়াপ্ত করতে আদেশ দিয়েছেন। সেই আদেশ ফিলিপাইনের যথাযথ কর্তৃপক্ষকে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। সিআইডি ও বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের আশা, ফিলিপাইন এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে এবং দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের টাকা ফিরে দেবে।
রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর মালিবাগে অবস্থিত সিআইডির হেডকোয়ার্টারে অতিরিক্ত আইজিপি ও সিআইডি প্রধান মো. ছিবগাত উল্লাহ এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, প্রায় ৯ বছর আগে ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে সাইবার জালিয়াতির মাধ্যমে চুরি হওয়া ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দিয়েছে ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত। ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশন (আরসিবিসি) ৮১ মিলিয়ন ডলার পাচারে জড়িত ছিল। সিআইডির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এবং প্রাপ্ত তথ্য ও আলামত, ফিলিপাইন সরকারের সরবরাহ করা পারস্পরিক আইনি সহায়তা অনুরোধের মাধ্যমে সংগৃহীত সাক্ষ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশের বিশেষ আদালত মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের আওতায় আরসিবিসি থেকে ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দেন।
সিআইডি প্রধান বলেন, তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে যে আরসিবিসির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ও সিইও লরেঞ্জো ট্যান, জুপিটার ব্রাঞ্চের ম্যানেজার মাইয়া সান্তোস ডিগুইতো এবং ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ও জুপিটার ব্রাঞ্চের আরও কয়েকজন কর্মকর্তা পাঁচটি ভুয়া অ্যাকাউন্ট খোলার মাধ্যমে চুরি হওয়া অর্থ পাচারে সরাসরি জড়িত ছিলেন। ফিলিপাইনের আদালত ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দোষী সাব্যস্ত করেছে এবং দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরসিবিসির ওপর বড় অঙ্কের জরিমানা আরোপ করেছে।
২০১৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি আরসিবিসি মাত্র ৬৮ হাজার মার্কিন ডলার বাংলাদেশ ব্যাংকে ফেরত দিয়েছিল, যা তাদের পক্ষ থেকে অর্থ ফেরতের প্রথম পদক্ষেপ ছিল। তদন্তে আরও প্রমাণিত হয়েছে, এ ঘটনা কেবল ব্যক্তিগত পর্যায়ে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং বাংলাদেশের মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ধারা ২৭ অনুযায়ী আরসিবিসি কর্পোরেট সত্তা হিসেবে সম্পূর্ণভাবে মানিলন্ডারিং অপরাধে জড়িত ছিল।
মো. ছিবগাত উল্লাহ বলেন, আদালত নির্দেশ দেন যে আরসিবিসি থেকে বাজেয়াপ্ত হওয়া পুরো ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বাংলাদেশ সরকারের কোষাগারে ফেরত পাঠাতে হবে। এ আদেশ বাস্তবায়নের জন্য কপি বাংলাদেশ ও ফিলিপাইনের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। জাতিসংঘের ইউনাইটেড নেশনস কনভেনশন অ্যাগেইনস্ট ট্রান্সন্যাশনাল অর্গানাইজড ক্রাইম, ফিলিপাইনের আইন এবং ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্সের (এফএটিএফ) নির্দেশনার আলোকে বাংলাদেশ সরকার এখন ফিলিপাইন সরকারের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ অর্থ ফেরত আনার ব্যবস্থা করবে, যাতে বাজেয়াপ্তির আদেশ কার্যকর হয় এবং পাচার হওয়া অর্থ পুরোপুরি ফেরত আসে।
সিআইডি প্রধান বলেন, আমরা আশা করি দ্রুত সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করে সঠিক চ্যানেলের মাধ্যমে ৮১ মিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে ফিরিয়ে আনতে পারব। এই রিজার্ভ চুরির সঙ্গে দেশি-বিদেশি যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আমাদের তদন্ত চলমান আছে। আমার দ্রুত এ মামলার চার্জশিট দেব।
এক প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত আইজিপি মো. ছিবগাত উল্লাহ বলেন, এর আগে ৬৮ হাজার মার্কিন ডলার ফিলিপাইন থেকে ফেরত এসেছিল। পাঁচ জনের নামে যেই ভুয়া অ্যাকাউন্ট ছিল তার মাধ্যমে পাচার করেছে, এটা প্রমাণিত হয়। ফিলিপাইন সেটা বুঝতে পেরেই ৬৮ হাজার মার্কিন ডলার ফেরত দেয়। এতে প্রমাণিত হয়, সেখানে টাকা পাচারের ঘটনা ঘটেছে। এতে এটাও প্রমাণ হয়েছে এটা বাংলাদেশের টাকা।
এদিকে, রিজার্ভ চুরির টাকা শ্রীলঙ্কাতেও চলে গিয়েছিল। শ্রীলঙ্কার কর্তৃপক্ষ যখন বুঝতে পরেছিল এটা মানি লন্ডারিংয়ের টাকা তখন তারা বাংলাদেশকে টাকা ফিরিয়ে দেয় বলেও জানা তিনি।
রিজার্ভ চুরির সঙ্গে শেখ হাসিনার পরিবারের কারোর সংশ্লিষ্টতা আছে কি না জানতে চাইলে সিআইডি প্রধান বলেন, আমরা তদন্তের শেষ পর্যায়ে আছি। এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে দেশি-বিদেশি যারাই জড়িত থাকবে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসব। তদন্ত শেষ হলে আমরা দ্রুত চার্জশিট জমা দেব আদালতে। এ ঘটনায় জড়িত দেশি-বিদেশি কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছি, তদন্ত শেষ পর্যায়ে আছে।
সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্পেশাল প্রসিকিউটর অ্যাডভাইজার অ্যাডভোকেট এহসানুল হক সমাজী বলেন, সিআইডির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ আদালত ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংকে পাচার করা ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজেয়াপ্তের জন্য একটি আদেশ দিয়েছেন। এ আদেশের অনুলিপি ফিলিপাইনের সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হয়েছে। তাদেরকে এ কারণে পাঠানো হয়েছে যাতে আদেশটাকে কার্যকর করার জন্য প্রশাসনিকভাবে দ্রুততার সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়। এটি পুরোপুরি প্রশাসনিক প্রক্রিয়া। প্রশাসনিক প্রক্রিয়া শেষে এ টাকা দেশে ফিরে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
এবি/এসএন