জাতিসংঘের ৮০তম অধিবেশনেও দেখা গেল ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথের। পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। অপারেশন সিঁদুরের মধ্য দিয়ে সন্ত্রাসবাদের বিচার করেছে মোদি সরকার বলে দাবি করেন তিনি। এর আগে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ ভারতের বিরুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার দাবি করেন।
পহেলগামের সন্ত্রাসী হামলার পর রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে প্রায় সবক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা। এবার সেই বাড়তে থাকা পারদের প্রভাব পড়েছে জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ অধিবেশনে।
স্থানীয় সময় শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘের মঞ্চে দেয়া বক্তব্যে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ অপারেশন সিঁদুরে ভারতের বিরুদ্ধে বিজয়ের দাবি করেন। বলেন, ভারত দম্ভভরে হামলা চালালেও ইসলামাবাদ তাদেরকে লজ্জিত করে ফিরিয়ে দিয়েছে।
যদিও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ভারতের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছেন। অধিবেশনে তিনি জানান, পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে সব অমীমাংসিত বিষয়ে যৌক্তিক, বিস্তৃত ও ফলপ্রসূ আলোচনার জন্য প্রস্তুত। যুদ্ধবন্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
শেহবাজ শরিফ বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি প্রচেষ্টার পাশাপাশি ভয়াবহ যুদ্ধ এড়াতে ট্রাম্পের প্রচেষ্টা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি যদি সময়মতো ও দৃঢ়ভাবে হস্তক্ষেপ না করতেন, পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের পরিণতি হতো বিপর্যয়কর।
এসময় উপস্থিত ভারতীয় কূটনীতিবিদ পেতাল গাহলট প্রতিক্রিয়া পর্বে বলেন, বিমানঘাঁটির পোড়া হ্যাঙ্গার ও ধ্বংস হওয়া রানওয়ে যদি বিজয়ের চিহ্ন হয়, তবে সেই 'জয়' পাকিস্তানই ভোগ করুক। তিনি মনে করিয়ে দেন, সন্ত্রাসী হামলা ঠেকাতে নয়, বরং তাদের রক্ষায় পাকিস্তানই জাতিসংঘে ভেটো দিয়েছে।
শনিবার জাতিসংঘের ৮০তম অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। পহেলগামে এপ্রিলের সন্ত্রাসী হামলায় পর্যটক হত্যার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ভারত জনগণকে রক্ষায় সন্ত্রাসীদের বিচার করেছে। পাকিস্তানকে সরাসরি সন্ত্রাসের কেন্দ্রবিন্দু আখ্যা দিয়ে তিনি আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদারের আহ্বান জানান।
জয়শঙ্কর বলেন, আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে, আমরা হুমকির মুখোমুখি দৃঢ়ভাবে দাঁড়াতে হবে। সন্ত্রাস মোকাবিলা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি ঘৃণা, সহিংসতা, সহনশীলতার অভাব ও ভীতিকে একত্রিত করে। স্বাধীনতার পর থেকে ভারত এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করছে, যেহেতু আমাদের প্রতিবেশী একটি বৈশ্বিক সন্ত্রাসের কেন্দ্রবিন্দু।
এসময় জয়শংকর স্থায়ী ও অস্থায়ী সদস্যপদ বিস্তারের মাধ্যমে নিরাপত্তা পরিষদকে সংস্কারের জন্য জাতিসংঘের প্রতি আহবান জানান। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এই প্রকাশ্য মুখোমুখি অবস্থান কেবল দুই দেশের সম্পর্ককেই উত্তপ্ত করেনি, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদকেও রূপ দিয়েছে কূটনৈতিক লড়াইয়ের মঞ্চে।
ইএ/টিকে