ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনায় প্রশ্নবিদ্ধ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা যুদ্ধ বন্ধে প্রস্তাবিত ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনায় স্পষ্ট করে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। বিশ্লেষকদের মতে, এই অস্পষ্টতা ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা না থাকায় পরিকল্পনাটি ভেস্তে যেতে পারে। অন্যদিকে, হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে মধ্যস্ততাকারী দেশ কাতার বলেছে, প্রস্তাবে বেশ কিছু ইস্যু স্পষ্ট না হওয়ায় আলোচনা প্রয়োজন।

সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) হোয়াইট হাউজে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠক করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। পরে সংবাদ সম্মেলনে গাজা যুদ্ধ বন্ধে তিনি ২০ দফা প্রস্তাব ঘোষণা করেন। তবে পরিকল্পনায় স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের বিষয়টি শর্তসাপেক্ষে ও অস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

ট্রাম্প বলেন, কয়েকটি মিত্রদেশ ‘বোকার মতো’ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। গাজার উন্নয়ন ও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সংস্কারের পরেই হয়তো এ বিষয়ে আলোচনা শুরু হতে পারে। নেতানিয়াহুও জানিয়েছেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের বিষয়ে তিনি একমত নন এবং ট্রাম্পের প্রস্তাবেও এ ধরনের কিছু নেই।

প্রস্তাব অনুযায়ী, ইসরায়েল ও হামাস যদি প্রস্তাবে সম্মত হয়, তবে যুদ্ধ তাৎক্ষণিকভাবে থেমে যাবে। গাজায় আটক সব জিম্মিকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ফিরিয়ে দেওয়া হবে এবং ইসরায়েলে থাকা ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি দেওয়া হবে।

নতুন ব্যবস্থায় গাজা পরিচালনা করবে একটি ফিলিস্তিনি টেকনোক্র্যাট সরকার, যার তত্ত্বাবধানে থাকবে আন্তর্জাতিক শান্তি পর্ষদ। তবে এতে হামাসের কোনো ভূমিকা থাকবে না। গাজায় নিরাপত্তা রক্ষায় একটি আন্তর্জাতিক অস্থায়ী বাহিনী মোতায়েন করা হবে। কিন্তু এ বাহিনী কোথা থেকে আসবে, কারা যুক্ত হবে ও এর ক্ষমতা কতটা হবে, তা স্পষ্ট নয়। গাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি অন্তর্বর্তী বেসামরিক কমিটি গঠনের কথাও বলা হয়েছে। তবে কে এ কমিটি গঠন করবে, কীভাবে সদস্যরা নির্বাচিত হবে- এ বিষয়েও বিস্তারিত নেই।

হামাসকে তিন থেকে চার দিনের মধ্যে প্রস্তাবের বিষয়ে মতামত জানাতে বলেছেন ট্রাম্প। না হলে হামাসকে ‘চরম পরিণতি’ ভোগ করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি। তার ভাষ্য, সব আরব ও মুসলিম দেশ ইতিমধ্যেই প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে, ইসরায়েলও সম্মতি জানিয়েছে; এখন শুধু হামাসের জবাব বাকি।

এদিকে গাজায় হামাসকে নিরস্ত্রীকরণের শর্ত থাকায় পরিকল্পনাটি নিয়ে এই সংগঠনকে সন্দিহান বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্পের পরিকল্পনাটি নিয়ে যে আলোচনা হয়েছিল, তাতে হামাস যুক্ত ছিল না। এই পরিকল্পনায় হামাসকে নিরস্ত্র করার কথা বলা হয়েছে, যা হামাস এর আগেও প্রত্যাখ্যান করেছে। হামাসের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র রয়টার্সকে বলেছে, এই পরিকল্পনা ‘সম্পূর্ণভাবে ইসরায়েলের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট’ এবং এর মাধ্যমে হামাসকে নির্মূল করার ‘অসম্ভব শর্ত’ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে আলোচনা সম্পর্কে অবহিত এক কর্মকর্তা গতকাল রয়টার্সকে বলেন, হামাসের আলোচকেরা ‘সদিচ্ছা নিয়ে এটি পর্যালোচনা করবেন এবং এ বিষয়ে নিজেদের অবস্থান জানাবেন’।

প্রস্তাবের বিষয়ে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, হামাস কর্মকর্তারা সোমবার রাতে পুরো পরিকল্পনাটি হাতে পেয়েছেন। বিষয়টি তাঁরা ‘দায়িত্বশীলতার সঙ্গে পর্যালোচনার’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ নিয়ে গতকাল তাঁদের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। সম্ভাব্য ফলাফল সম্পর্কে আগবাড়িয়ে আশাবাদী হওয়া ঠিক হবে না। তবে তিনি বলেন, পরিকল্পনাটিতে ‘সার্বিক বিষয় স্থান পাওয়ায়’ কাতার এ নিয়ে ইতিবাচক।

তবে কাতারের হামাদ বিন খলিফা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুলতান বারাকাত আল-জাজিরাকে বলেছেন, ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনা ‘সমস্যাজনক’ এবং হামাসের জন্য এটি গ্রহণ করা হবে একেবারেই ‘অবিবেচকের কাজ’। এই পরিকল্পনার শুরুতেই হামাসকে তাদের সব চাপ প্রয়োগের হাতিয়ার এমন এক পক্ষের কাছে ছেড়ে দিতে হবে, যাদের তারা বিশ্বাস করে না। তিনি আরও বলেন, ট্রাম্প যেভাবে নেতানিয়াহুর পাশে দাঁড়িয়ে পরিকল্পনাটি ঘোষণা করেছেন, তা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে প্রস্তাবটি ইসরায়েলের স্বার্থের দিকেই বেশি ঝুঁকে আছে।

সব পক্ষকে ট্রাম্পের পরিকল্পনায় অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, আমাদের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট ভোগান্তি লাঘব করা। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, পরিকল্পনার বাস্তবায়ন দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করবে।

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, নেতানিয়াহুর বিরোধিতা, হামাসকে নিরস্ত্রীকরণের শর্ত এবং বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে অস্পষ্টতার কারণে ট্রাম্পের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন অনিশ্চিত রয়ে গেছে। নেতানিয়াহুর সাংঘর্ষিক বক্তব্য এবং তার সরকারে অতি রক্ষণশীল শরিকদের অবস্থানের কারণে ট্রাম্পের পরিকল্পনা নিয়ে সামনে এগোনো কঠিন হবে। আর শেষ পর্যন্ত হামাস অতীতের মতো ‘মেনে নিয়েছি, তবে কথা আছে’—এ ধরনের জবাব দিলে ট্রাম্পের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না।

এমকে/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

সেনকাকু দ্বীপপুঞ্জে টহল ও ড্রোন নজরদারি, নতুন উত্তেজনায় চীন-জাপান-তাইওয়ান Nov 17, 2025
পিরোজপুরে এবার সবচেয়ে বড় ইয়াবা চালান জব্দ Nov 17, 2025
প্রাথমিকের ডিজির ক্ষমতা ফিল্ড মার্শালের চেয়েও বেশি: গোলাম মাওলা রনি Nov 17, 2025
ভয়াবহ খরা মোকাবেলায় আকাশে ‘মেঘ বীজ’ বপনে তৎপর ইরান Nov 17, 2025
‘শাটডাউন’ ঘিরে রাজধানীর স্কুলগুলোতে নিরাপত্তা উদ্বেগ Nov 17, 2025
'সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মোকাবেলা করতে হবে' Nov 17, 2025
কুমিল্লায় নেচে-গেয়ে খন্দকার মোশারফের নেতৃত্বে বিএনপির মিছিল Nov 17, 2025
আল্লাহ'র তরফ থেকে গজবের কারণে আমার বোন শেখ হাসিনা ক্ষমতা হারিয়েছে: কাদের সিদ্দিকী Nov 17, 2025
বিতর্কিত ভিডিও প্রসঙ্গে স্পষ্ট বক্তব্য দিলেন মিথিলা Nov 17, 2025
img
ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধের ঘটনায় মামলা, গ্রেপ্তার ১ Nov 17, 2025
img
বিবাহবিচ্ছিন্ন পুরুষকে মেয়েরা মানে, নারীর ক্ষেত্রে উল্টো: অনুরাধা Nov 17, 2025
img
ভক্তদের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ‘ব্ল্যাক প্যান্থার’-এর তৃতীয় কিস্তি আসছে Nov 17, 2025
img
সিলেটে মধ্যরাতে গাড়ি মেরামতের দোকানে আগুন Nov 17, 2025
img
যেসব দেশে বিয়ে করলেই মিলবে নাগরিকত্ব Nov 17, 2025
img
ককটেল বিস্ফোরণে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে, তার জনক একজনই: সোহেল তাজ Nov 17, 2025
img
বংশালে জুতার কারখানায় আগুন, ঢামেক বার্নে ভর্তি দগ্ধ ৩ শ্রমিক Nov 17, 2025
img
মেয়ের জন্য সব কৃতিত্ব স্ত্রীকেই দেন অভিষেক Nov 17, 2025
img
তিতুমীর কলেজ ও আমতলীতে ককটেল বিস্ফোরণ, বাসে আগুন Nov 17, 2025
img
কিশোরগঞ্জে গ্রামীণ ব্যাংকে আগুন Nov 17, 2025
img
শেখ হাসিনার মামলার রায়, ট্রাইব্যুনাল এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা Nov 17, 2025