বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সাবেক বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক বলেছেন, জাতিসংঘে গিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা যে মন্তব্য করেছেন, তা আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে জনমনে শঙ্কা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে ঢাকার সেনবাগ ফোরামের উদ্যোগে দেশের সমসাময়িক পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, বাংলাদেশে নির্বাচন নিয়ে শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। জাতিসংঘে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা সাক্ষাৎকারে বলেছেন, অনেকেই নাকি তাকে আরও পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকতে বলেছেন। এমন বক্তব্য দিয়ে তিনি আসলে কী বার্তা দিতে চাচ্ছেন, সেটিই এখন প্রশ্ন। তিনি এই কথা বলে নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন।
বিএনপির চেয়ারপার্সনের এই উপদেষ্টা বলেন, যারা পাহাড়ে এই অশান্তি সৃষ্টি করছেন, যারা আমাদের মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টির জন্য প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন, তারা মূলত জাতীয় নির্বাচন বানচালের প্রচেষ্টায় লিপ্ত। কেউ কেউ বলছে, আওয়ামী লীগ তো নিষিদ্ধ—তারা কি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে? অথচ সরকারের আইন উপদেষ্টা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন, তারা নির্বাচন করতে পারবে না। এসব বিষয় ঘিরে একটি ঘোলাটে পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে।
জয়নুল ফারুক প্রশ্ন তোলেন, পাহাড়ি অঞ্চলে এই অশান্তি কারা সৃষ্টি করছে—তা খুঁজে বের করতে হবে। পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকা বড় কথা নয়, আরও ২৫ বছর থাকাও বড় কথা নয়। শেখ হাসিনা তো ১৬ বছর ধরে ক্ষমতায় ছিলেন, দেশের মানুষ সেটিকে কীভাবে গ্রহণ করেছে, সেটিই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের মানুষ কি সুখে আছে? তারা কী নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে কিনতে পারছে? আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, অর্থনীতি, ব্যাংকগুলোর অবস্থা—এসবই বিবেচনার বিষয়।
শেখ হাসিনার দীর্ঘ শাসনামলে ‘দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও স্বৈরাচারী শাসনের’ অভিযোগ এনে চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা বলেন, দেশকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা এখন সবচেয়ে জরুরি।
প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশ্যে জয়নুল ফারুক বলেন, এক বছর তিন মাস আপনি ক্ষমতায় আছেন। এই সময়ে আওয়ামী লীগ সরকার যে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে, তা কতটুকু ফিরিয়ে আনতে পেরেছেন? ব্যাংকগুলোর করুণ অবস্থা কেন? আপনি তো একজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি। আমরা আপনাকে সম্মান করি, শ্রদ্ধা করি। আপনার প্রতি আত্মবিশ্বাস আছে বলেই আমাদের দল এখনও বলে— যেকোনো বিষয়ে আপনার সঙ্গে আছে এবং থাকবে। কিন্তু আপনি যদি বলেন, জনগণ আপনাকে পাঁচ বছর ক্ষমতায় রাখবে, তাহলে প্রশ্ন উঠবে—এই পাঁচ বছরও কি গত এক বছরের মতো চলবে?
বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আরও বলেন, এমন কথা নির্বাচনের তিন মাস আগে বলা ঠিক নয়। পাহাড়ে অশান্তি চলছে, দুর্গাপূজাকে ঘিরে অশান্তির পাঁয়তারা ছিল—এসব বিষয়কে আমলে না নিলেও, এগুলোর পেছনে ষড়যন্ত্র স্পষ্ট। তবে আমি মনে করি না, বাংলাদেশে ষড়যন্ত্র করে কেউ সফল হতে পেরেছে।
বিএনপির এই নেতা দাবি করেন, দেশে অশান্তি সৃষ্টির মূল শক্তি আওয়ামী লীগ এবং ভারত। সামনের নির্বাচন আপনার (প্রধান উপদেষ্টার) জন্য কঠিন অগ্নিপরীক্ষা। আপনার আশেপাশে বহু ষড়যন্ত্রকারী আছে।
আলোচনা সভায় ঢাকার সেনবাগ ফোরামের সভাপতি লায়ন এবি এম ফারুকের সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. মোজাম্মেল হোসেন সেলিম।
আইকে/টিএ