অর্থনীতি থেকে শুরু করে ইউক্রেন যুদ্ধ, পারমাণবিক প্রতিরক্ষা ও ইউরোপে ড্রোন আতঙ্ক– সব ইস্যুতেই কড়া অবস্থান তুলে ধরেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সরবরাহ বন্ধ হলে বিশ্ববাজারে তেলের দাম ১০০ ডলার ছাড়াতে পারে বলেও সতর্ক করেছেন তিনি। একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি পরিবর্তন, ইউক্রেনকে অস্ত্র সহায়তা এবং ন্যাটো ইস্যুতেও মতামত তুলে ধরেছেন।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) রাশিয়ার সোচিতে ভালদাই ডিসকাশন ক্লাবে বক্তব্য রাখেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এ সময় একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বার্তা দেন তিনি। বলেন, বৈশ্বিক অর্থনীতিতে রুশ জ্বালানি অপরিহার্য। তেল সরবরাহ বন্ধ হলে ব্যারেলপ্রতি দাম অনায়াসে ১০০ ডলার ছাড়াবে, যার প্রভাব পড়বে ইউরোপ ও এশিয়ার বাজারে।
তিনি আরও বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইউরোপ, ভারত ও চীনকে রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধে চাপ দিচ্ছেন, যাতে মস্কোর যুদ্ধ অর্থায়ন ব্যাহত হয়। পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণেও নতুন বার্তা দিয়েছেন পুতিন। বলেছেন, অন্য কোনো পারমাণবিক শক্তিধর দেশ পরীক্ষা চালালে রাশিয়াও পারমাণবিক পরীক্ষা চালাবে। আগামী বছর নিউ স্টার্ট চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারমাণবিক ওয়ারহেড সীমিত রাখার অঙ্গীকার নবায়নের প্রস্তাব দেন তিনি।
তবে ওয়াশিংটন রাজি না হলে রাশিয়ার নতুন ‘ওরেশনিক’ ক্ষেপণাস্ত্র জটিলতাকে সমীকরণে আনতে হবে বলে ইঙ্গিত দেন রুশ প্রেসিডেন্ট। চীন, ব্রিটেন ও ফ্রান্সকেও ভবিষ্যৎ আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষে অবস্থান নেন তিনি।
এদিকে মার্কিন গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, ইউক্রেনকে রাশিয়ার গভীরে জ্বালানি স্থাপনায় হামলার জন্য গোয়েন্দা তথ্য দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে হোয়াইট হাউস। যদিও ট্রাম্প প্রশাসন এখনো টমাহক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বলেছেন, কিয়েভের অনুরোধ ট্রাম্প বিবেচনায় রেখেছেন। পুতিন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, টমাহক সরবরাহ করা হলে নতুন বড় ধরনের উত্তেজনা তৈরি হবে।
জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ঘিরেও হুঁশিয়ারি দেন রুশ প্রেসিডেন্ট। বলেন, ইউক্রেন বারবার প্ল্যান্টের কাছে হামলা চালিয়ে বিপজ্জনক খেলা খেলছে। রাশিয়া যদি পাল্টা প্রতিশোধ নেয় তবে কিয়েভ নিয়ন্ত্রিত পারমাণবিক স্থাপনাও ঝুঁকিতে পড়তে পারে। বর্তমানে প্ল্যান্টটি বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে জরুরি ডিজেল জেনারেটরে চলছে।
ডেনমার্কে বিমানবন্দর বন্ধ এবং পোল্যান্ডে ন্যাটো সীমান্তে রুশ ড্রোন ভূপাতিত হওয়ার ঘটনাকেও ‘ভিত্তিহীন আতঙ্ক’ বলে উড়িয়ে দেন পুতিন। তার দাবি, পশ্চিমা দেশগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে এ আতঙ্ক ছড়িয়ে নিজেদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট আড়াল করছে। ন্যাটো আক্রমণের ভয়কে তিনি অকল্পনীয় আখ্যা দেন। একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের আগ্রহও প্রকাশ করেন পুতিন।
এসএস/এসএন