চলতি অর্থবছরে ৮৪৪ কোটি ডলারের বেশি বিদেশি ঋণ নিতে পারবে না বাংলাদেশ। এমন শর্ত জুড়ে দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থাটির সবশেষ কান্ট্রি রিপোর্টে পুরো অর্থবছরের পাশাপাশি বেঁধে দেয়া হয়েছে বিভিন্ন প্রান্তিকে ঋণ নেয়ার পরিমাণও। যাকে বাংলাদেশের আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য ইতিবাচক বলছেন বিশ্লেষকরা। তাদের পরামর্শ, প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে বাড়তি সতর্কতার।
দেশের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বড় নির্ভরতা থাকে বিদেশি ঋণের ওপর। পাশাপাশি বাজেট সহায়তারও উল্লেখযোগ্য অংশ আনতে হয় বিভিন্ন সংস্থা থেকে। তবে, গেলো দেড় দশকে আওয়ামী সরকার ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে সতর্ক না থাকায়, চাপ বেড়েছে আর্থিক ব্যবস্থাপনায়। এ কারণে সম্প্রতি বাংলাদেশের ওপর বিদেশি ঋণ নেয়ার সীমা আরোপ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল- আইএমএফ।
সবশেষ কান্ট্রি রিপোর্টে ঋণের সীমা আরোপের শর্ত থাকলেও তা কার্যকর করেনি সংস্থাটি। তবে, সপ্তাহখানেক আগে এক সিদ্ধান্তে আইএমএফ জানায়, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৮৪৪ কোটি ডলারের বেশি বিদেশি ঋণ নিতে পারবে না বাংলাদেশ। যাকে, আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য ইতিবাচক বলছেন বিশ্লেষকরা।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এম মাসরুর রিয়াজ বলেন, ‘পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে আমাদেরই সিদ্ধান্ত নেয়া উচিৎ। আইএমএফ যেহেতু এখন এ ধরনের শর্ত দিয়েছে, এ পরামর্শ বা এ ডিমান্ড আমি মনে করি বাংলাদেশ সেই ফিসক্যাল ডিসিপ্লিন কৌশলী হওয়া দরকার। একটু র্যাশনালাইজড করা, এতে সেদিকে হেল্প করবে।’
অর্থবছরর পাশাপাশি প্রতি প্রান্তিকে নেয়া ঋণের সীমাও বেঁধে দিয়েছে আইএমএফ। বলা হয়, অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে নেয়া যাবে ১৯১ কোটি, ছয়মাসে ৩৩৪ আর নয় মাসে সর্বোচ্চ ৪৪৩ কোটি ডলার পর্যন্ত। আর সবশেষ প্রান্তিকের জন্য ধার্য করা আছে ৪০০ কোটি ডলার। বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন শর্তারোপের ফলে কমে আসবে অপ্রয়োজনীয় ঋণ নেয়ার প্রবণতা।
সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে একটা হিসাব দেয়া উচিৎ। আসলে পরিস্থিতি কী? বাজেটের সময় এটি দেয়া হয়নি। প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণ থেকে শুরু করে তার বৈদাশিক ঋণের যে পার্টটা রয়েছে, এটিকে ভালোভাবে বিবেচনায় নিয়ে ফিজিবিলিটি স্টাডি করা দরকার।’
মাসরুর রিয়াজ বলেন, ‘আইএমএফ না বললেও আমাদের হিসাব করা উচিৎ ছিল। আমরা সবাই সম্মত হয়েছি যে, ৫ আগস্ট পরবর্তী পরিস্থিতিতে আমাদের অত্যাধিক হারে বৈদাশিক ঋণ বেড়েছে।’
প্রসঙ্গত, সবশেষ অর্থবছরে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগিদের কাছ থেকে মোট ৮৫৭ কোটি ডলারের ঋণ নিয়ছে বাংলাদেশ।
ইএ/টিকে