গাজা অভিমুখে যাত্রা করা ত্রাণবাহী নৌবহর গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার থেকে আলোকচিত্রী শহিদুল আলম জানান, আমরা এখন গাজা থেকে প্রায় ৩৭০ নটিক্যাল মাইল (৬৮৫ কিলোমিটার) দূরে আছি। স্বাভাবিক গতিতে গেলে এক দিনের মধ্যে পৌঁছানো সম্ভব, কিন্তু আমাদের ছোট সহকারী নৌযানগুলোকে রেখে যেতে চাচ্ছি না; তাই পুরো বহর একসঙ্গে রাখার কারণে যাত্রা ধীর হচ্ছে এবং হয়তো আরও সময় লাগবে। আবহাওয়া সারাক্ষণ বদলে যাচ্ছে — একবার বেশ খারাপ অবস্থার সম্মুখীন হয়েছিলাম, এখন মেঘলা কিন্তু উত্তপ্ত। আমাদের কাছে একটি ড্রোন ওয়াচ আছে, তাতে কিছুটা নজরদারি দেখা যায়, তবে সবকিছু ড্রোনে ধরা পড়ে না; চোখে যা পড়ে তা–ই দেখা যায়।
অক্টোবরের ২ তারিখের দিকে একটি নেভির জাহাজ আমাদের খুব কাছে এসেছিল; পরে খোঁজ করে জানা গেছে সেটা ইসরায়েলি নাও হতে পারে, সম্ভবত তুরস্ক বা অন্য কোনো দেশেরই হওয়ার সম্ভাবনা ছিল।
২০১০ সালের ফ্লোটিলা হামলার স্মৃতি আমাদের সঙ্গে আছে—তখন ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে ১০ জন নিহত হয়েছিল, অনেককেই গ্রেফতার ও নির্যাতিত করা হয়েছিল। সেই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এবার বৃহৎ সংখ্যক নৌযান একসঙ্গে যাওয়ায় চাপ বেশি এবং অনিশ্চয়তা বেড়েছে; আমাদেরও কী হবে সেটা স্পষ্ট নেই। আমাদের জাহাজে ৯৬ জন আছি, আর পুরো বহরে মোট প্রায় ৫০০ জন ছিল। জাহাজটি উচ্চ হওয়ার কারণে সরাসরি আরোহণ ইসরায়েলি বাহিনীর পক্ষে কঠিন হতে পারে, যার ফলে তারা হেলিকপ্টার থেকে নেমে আক্রমণ করার পথ বেছে নিতে পারে—এটি আমাদের জন্য আলাদা ধরনের ঝুঁকি তৈরি করে। আগের আক্রমণের লক্ষ্যরা যারা ছিলেন—বিশেষ করে স্বাস্থ্যকর্মী ও গণমাধ্যমকর্মীরা—তাদের ওপর আক্রোশ বেশি ছিল, আর আমাদের জাহাজেও এই দুই শ্রেণির পেশাজীবী বেশিরভাগ থাকায় আক্রমণের সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে বেশি বলে মনে করা হচ্ছে।
আমাদের মূল দাবি হলো ইসরায়েলের আরোপিত অবরোধটি আইনগতভাবে অবৈধ এবং আমরা যে আন্তর্জাতিক সাগরপথ দিয়ে যাচ্ছি সেখানে তাদের বাধা দেওয়ার কোনো বৈধতা নেই; এই প্রচেষ্টা যেন সেই অবৈধতা ও মানবিক সংকটকে সামনে নিয়ে আসে, সেটাই আমাদের উদ্দেশ্য। জাহাজে থাকা চিকিৎসা কর্মীরা গাজার মানুষদের চিকিৎসা সহায়তা দেবেন এবং পেশাগত সীমানার মধ্যে থেকে করণীয় সবকিছু আমরা করব। আগেই রওনা দেয়া আটটি জাহাজ আমাদের থেকে গতকাল অতিক্রম করে গেছে; ফ্রিডম কোয়ালিশনের দুটি জাহাজ যান্ত্রিক সমস্যার কারণে এখনও আসতে পারেনি—তাই পুরো বহরের অবস্থান নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে, আমরা তাদের থেকে প্রায় ২০ মাইল দূরত্বে থাকতে পারি। আমাদের জাহাজটি ধীরে চলার জন্য তৈরি নয়; ধীর গতিতে গেলে ইঞ্জিন বা নৌচালনার সমস্যা দেখা দেয়, তাই সামগ্রিক সমন্বয়ে ধীরে চলতে হচ্ছে, যেটা আমাদের জন্য কষ্টসাধ্য।
যদি আটক করা হয়, তখন কী করা হবে তা প্রত্যেকে নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেবে; আমরা কোনো একক ব্যক্তির ওপর সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিইনি—সকলকে বিকল্প ও পরিণতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি ডিপোর্টেশন বা ফিরে পাঠিয়ে দেওয়া বিকল্প মেনে নিতে রাজি নই এবং নিজেকে “অবৈধভাবে ঢুকেছি” হিসেবে স্বীকার করব না; সেই মনোভাবেই আমি এগোচ্ছি। শেষ পর্যন্ত, বাংলাদেশের সব ভাই-বোনদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা ও শুভেচ্ছা জানাই—তারা অসাধারণভাবে সমর্থন দিয়েছেন এবং তাদের এই সমর্থন জাহাজে থাকা সবার জন্য বড় এক প্রেরণা।
ইউটি/টিএ