ভাইরাল প্রসঙ্গে মিথিলা; ‘ছবিগুলোর জন্য লজ্জিত নই’

অভিনেত্রী রাফিয়াত রশিদ মিথিলার সঙ্গে পরিচালক ইফতেখার আহমেদ ফাহমির পুরানো কিছু ঘনিষ্ঠ ছবি ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়। এতে মুহূর্তের মধ্যে ঝড় উঠে ফেসবুক ও দেশের সব গণমাধ্যমে।

২৪ ঘণ্টার বিরতি নিয়ে এ ঘটনায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাইবার ক্রাইম বিভাগে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন অভিনেত্রী মিথিলা। মঙ্গলবার বিকালে তিনি এই অভিযোগ দায়ের করেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) নাজমুল ইসলাম।

এরপর ফেসবুক গ্রুপ, সাংবাদিক, হ্যাকার ও বিভিন্ন শ্রেণির মানুষদের উদ্দেশ্য করে মিথিলা একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। স্ট্যাটাসটি তিনি ইংরেজি ভাষায় লিখেন। পাঠকদের জন্য তা হুবহু বাংলায় অনুবাদ করে দেয়া হলো।

মিথিলার স্ট্যাটাস

চলুন দেখা যাক, ফেসবুক স্ট্যাটাসে কি লিখেছেন মিথিলা

সুতরাং এখানে আমি, কি হয়েছে তার ব্যাখ্যা দিচ্ছি না, তার চেয়ে বরং আমার কিছু ব্যক্তিগত ছবি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাম্প্রতিক নাটক সম্পর্কে আমার অবস্থান পরিষ্কার করছি, যার কিছু সত্যি, কিছু জাল, যা প্রতিহিংসামূলক ভাবে আমার সুনাম নষ্ট করার উদ্দেশ্যে কিছু দুষ্কৃতিকারীর দ্বারা জনসম্মুখে প্রকাশিত হয়েছে।

এই ছবিগুলো ২০১৭/ ২০১৮ সালে আমরা যখন ডেটিংয়ে ছিলাম সেসময় আমার তখনকার বয়ফ্রেন্ডের সাথে শেয়ার করেছিলাম। তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়ে গিয়েছিল এবং দুষ্কৃতিকারীরা উদ্দেশ্যমূলক ভাবে কনটেন্টের খোঁজ করেছিল যাতে সে সব তারা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করতে পারে। এখানে আমি ‘ডেটিং’ শব্দটির উপর জোর দিতে চাই যা বোঝায় আমরা একটি সম্পর্কে আবদ্ধ ছিলাম।

যখন দুজন মানুষ ডেট করে তারা তাদের মধ্যে অন্তরঙ্গ মুহূর্ত এবং ছবি শেয়ার করে, এই প্রযুক্তির যুগে সম্ভবত সেটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দ্বারা হয়ে থাকে এবং আমাদের এই বিষয়ে অর্বাচীন আচরণ করা উচিত নয়। আমি আমার গোপনীয়তা রক্ষায় ব্যর্থতার দায় স্বীকার করছি।

যাই হোক, আমি আমার ছবিগুলো নিয়ে লজ্জিত নই, আমার পর্দা ফাঁস হওয়া নিয়েও না; বরং আমি লজ্জিত এই বিষয়ে যে আমার দেশের কিছু ফালতু লোক পোস্ট করার, শেয়ার করার স্বাধীনতার অপব্যবহার করে, আমার ব্যক্তিগত মুহূর্তগুলি ব্যবহার করে, আমাকে ভার্চুয়ালি ধর্ষণ করে এবং আমার চরিত্র হনন করেছে, আমার সম্মান ও ছবির বিনিময়ে সাবস্ক্রিপশন বাড়িয়েছে এবং সংবাদ বিক্রি করেছে।

আমি লজ্জিত যে সংবাদমাধ্যম, বিশেষ করে কিছু সংবাদ পোর্টাল এই সংবাদটি আমার সম্মতি এবং বক্তব্য ছাড়াই প্রকাশ করেছে। যখন আমি এ ব্যাপারে তাদের সাথে কখনো কথা বলিনি অথবা কোনো বিবৃতি দিইনি। আমি ততটাই রাগ এবং অপমান বোধ করছি যতটা আমি কোন মহিলাকে রাস্তায়, বাড়িতে, ভার্চুয়াল জগতে, সব জায়গায় যৌন হেনস্তার শিকার হতে দেখলে করে থাকি।

এখানে আমার অবস্থান হচ্ছে: আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে আমার সম্মান এবং মর্যাদা আমার দেহ বা আমার অন্তর্বাস বা আমার ব্যক্তিগত ছবিতে নিহিত নয়। আমার জীবনে যা কিছু অর্জন করেছি আমার পরিশ্রমের দ্বারা, সৃজনশীলতার দ্বারা এবং শিক্ষার দ্বারা তা শূন্যে মিলিয়ে যেতে পারে না কারণ কিছু দুষ্কৃতিকারী আমার অতীতের ব্যক্তিগত কিছু মুহূর্ত ও ছবি চুরি করে এবং নেতিবাচক ভাবে ব্যবহার করে আমাকে হয়রানি করেছে।

আমি শান্ত থাকার জন্য গত ২৪ ঘণ্টা একটি বিরতি নিয়েছি এবং আমার ইতিবাচক উদ্দীপনায় মনোনিবেশ করেছি যাতে করে আমি আরো দৃঢ় ভাবে প্রত্যাবর্তন করতে পারি। এই পরিস্থিতি আমাকে দুর্বল করেনি; এটি আমাকে অন্য যেকোনো সময়ের থেকে শক্ত করেছে।

আমি সাইবার ক্রাইম বিভাগে একটি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেছি, আমি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি এবং আমি আইসিটি আইনে মামলা করার প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি। আমি কথা দিচ্ছি, যে সব দুষ্কৃতিকারী আমাকে হয়রানি করেছে কর্তৃপক্ষের সাহায্যে আমি তাদের চিহ্নিত করব। আমি আমার জন্য লড়াই করব, তাদের সবার জন্য করব, যেসব লোকেরা হ্যাকার এবং সাইবার অপরাধীদের দ্বারা হয়রানির শিকার হয়েছে। আমি আমার পরিবার, বন্ধু এবং সহকর্মীদের ধন্যবাদ জানাই যারা এই পরিস্থিতিতে আমার পাশে ছিলেন।

পর সমাচার: আমি শুধুমাত্র আমার ফেসবুক প্রোফাইলে আইনি প্রক্রিয়া সম্পর্কিত আমার বিবৃতি/হালনাগাদ শেয়ার করবো। আমি বাংলাদেশের বা অন্য কোথাও কোন সংবাদপত্রে আমার বিবৃতি দিই নি। যে সব সংবাদ পোর্টাল আমার সম্মতি ব্যতীত জাল সংবাদ তৈরি/হালনাগাদ করছে সেগুলিকে আইনের আওতায় আনা হবে।

 

উল্লেখ্য, এই পোস্টটি মিথিলা ৫ নভেম্বর রাত ৯টা ৫৫মিনিটে প্রথম শেয়ার করেন। তারপর পোস্টটি মোট আটবার আপডেট করা হয়। 

টাইমস/জেকে/এসআই/এনজে

Share this news on: